স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে হজ্ব ব্যবস্থাপনার আড়ালে গড়ে ওঠা একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় এক হজ্ব কাফেলা পরিচালক। রবিবার (১১ মে) দুপুরে রাজশাহীর শিরোইল এলাকার পূবালী মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নিউ যমুনা ফেব্রিক্স হজ্ব কাফেলা’র স্বত্বাধিকারী মো. নূর হোসেন এই চক্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, করোনাকালীন সময়ে তাঁর মাধ্যমে কয়েকজন হজ্ব যাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখন রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের ভাই গিয়াস উদ্দিন মাস্টার এবং বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের সুজন পালশা গ্রামের মৃত আস্করের ছেলে মকবুল তাঁর সঙ্গে পরিচিত হন ও সহায়তার আশ্বাস দেন। একপর্যায়ে এই দুজন প্রতারক চক্র গড়ে তুলে হজ্ব ব্যবস্থাপনার নামে হজ্ব যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ আদায় করেন, যা হজ্ব পরিচালক নূর হোসেনের কাছে কখনোই পাঠানো হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে মো. নূর হোসেন বলেন, “আমি সৌদি আরবে গিয়ে হজ্ব যাত্রীদের থাকার জায়গা বুকিং করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ি। সে সময় গিয়াস উদ্দিন মাস্টার ও মকবুলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করি। পরে দেখি, তারা আমার নাম ব্যবহার করে ‘পদ্মা হজ্ব কাফেলা’র মেমোর মাধ্যমে বাগমারাসহ বিভিন্ন এলাকার হজ্ব যাত্রীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, ওই অর্থ তাঁর হাতে পৌঁছায়নি এবং তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। এমনকি প্রতারণার বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদ করায় উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নূর হোসেন বলেন, “এই চক্রটি আমাকে পরিকল্পিতভাবে জড়িয়ে বাগমারা উপজেলার সাইপাড়া গ্রামের মৃত মসলেম প্রামাণিকের ছেলে মো. আ: কাউম নামের এক ব্যক্তিকে বাদী করে আমার বিরুদ্ধে ২ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলার সাক্ষী করা হয়েছে প্রতারক মকবুলকেই।” তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় আমি চরম মানসিক হয়রানির শিকার। আমার সামাজিক মর্যাদা হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ, আমি বৈধ কাফেলার মাধ্যমে নিয়ম মেনে হজ্ব ব্যবস্থাপনা করে আসছি। প্রতিটি লেনদেন আমরা অফিসিয়াল প্যাডে করি, যা প্রমাণসাপেক্ষ। মকবুল নিজে টাকা দিতে এসেছিল মাধ্যম হিসেবে। সে তো জানত আমি কেমন। আমাকে যাথে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় তাহলে মকবুল ও গিয়াস মাস্টারকে কে অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হবে না? তাঁরাই হয়তো অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে কাউমের কাছ থেকে। কাউমকে আমি ওমরাহ হজ্ব করাতে পেরেছি যখন হজ্ব করাতে পারব। কিন্তু মকবুল জোরপূর্বক কাউমকে দিয়ে মিথ্যে মামলা করিয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে নূর হোসেন সরাসরি অভিযোগ করেন, এই চক্রের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছে। তিনি বলেন, “সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের ভাইরা গিয়াস উদ্দিন মাস্টার এই প্রতারণায় সরাসরি জড়িত। রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে তিনি নিরীহ মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন এবং আমাকে টার্গেট করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই চক্র রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে আরও অনেককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে পারে। তাই বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ক্ষতির শিকার হবেন আরও অনেকে। নূর হোসেন সরকারের কাছে দাবি জানান, প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত পরিচালনা করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। তিনি বলেন, “আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। চাই, তদন্ত করে সত্য উদঘাটন হোক এবং যারা প্রতারণা করেছে, তাদের শাস্তি হোক। একইসঙ্গে আমার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে নূর হোসেন বলেন, “আমি এই ঘটনার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে চাই। ভবিষ্যতে যেন কেউ ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে প্রতারণা করতে না পারে, সেজন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সতর্ক হতে হবে।” তিনি জানান, প্রয়োজন হলে আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে নিজের সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। গিয়াস উদ্দিন মাস্টার ও মকবুলের একত্রিত হজ্ব যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের সত্যতা প্রমাণে ভুক্তভোগী নূর হোসেন রশিদ, ছবি, ডকুমেন্টস দেখান। মকবুল হোসেনের সাথে ফোনে কথা হয় তিনি জানান, কাউম হজ্বে যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিতে গিয়াস উদ্দিন মাস্টার এবং তিনি কাউমের সাথে নূর হোসেনের কাছে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।