ইউসুফ চৌধুরী : মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় দুইটি প্রধান ইসলামী উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। আর ঈদের নামাজ যে স্থানে পড়ানো হয় তার নাম ঈদগাহ। ঈদ সবার জীবনে বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের বার্তা। ঈদ উপলক্ষে ঈদগাহ স্থানীয় ইসলামধর্মী মানুষের মিলনকেন্দ্র হিসেবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগির মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে পুনর্মিলনী ঘটে, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই। ঈদ মুসলমানদেরকে শান্তি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। আর এই শিক্ষা গ্রহনে প্রয়োজন ধর্মীয় চর্চা অর্থাৎ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে মসজিদ, ঈদগাহ, মাদ্রাসা ও গোরস্থান।
দীর্ঘকাল ধরে এ অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নানা বয়সী মানুষের জামাতে ঈদের নামাজ পড়ার নির্ধারিত স্থান ঐতিহ্যবাহি পবা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বায়া এলাকায় ঈদগাহ অবস্থিত। নিরলস পরিশ্রম ও সুযোগ্য নেতৃত্বে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় চলছে ঈদগাহের সৌন্দর্য্যবর্ধন সহ অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ। সংস্কার কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন-সৌন্দর্য্যে প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে পবা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। প্রশস্ত মাঠ, সুউচ্চ মেহেরাব ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সাজানো উন্নত দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ আরোও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এটি শুধু ঈদগাহ নয় বরং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের প্রতীক। স্থানীয়দের পাশাপাশি এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদের নামাজ আদায় করতে আসেন মুসল্লিরা।
স্থানীয় মুসল্লীরা জানান, জমিদাতাগোষ্ঠী মরহুম আমির হোসেন সরকার এর ২২ কাঠা জমি অনুদানে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পবা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে মরহুম মালা মেম্বার, আলাউদ্দিন মাষ্টার, মরহুম ইউনুস আলী মেম্বার সহ ঈদগাহ কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক বিশিষ্টজন। দীর্ঘসময় ধীর গতিতে উন্নয়ন কাজ হলেও বর্তমানে সুযোগ্য নেতৃত্বে উন্নয়ন-সৌন্দর্য্যে বদলে যাচ্ছে ঈদগাহ। ৬১ বছর পর সৌন্দর্য্যবর্ধনে স্থানীয়দের অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানা প্রাচীরসহ অন্যান্য অবকাঠামো। এলাকার জনগণের কথা বিবেচনা করে ঈদগাহের উন্নয়নে জমিদাতাগোষ্ঠী অর্ধেক দামে জমি দিয়েছেন। চুক্তিসাপেক্ষে দুই কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয়েছে ২৬ কাঠা জমি। জমিদাতাগোষ্ঠী মরহুম আমির হোসেন সরকার এর ছেলে মো. ওয়াদুদ হাসান পিন্টু ঈদগাহে দান করেছেন এক কাঠা জমি। বর্তমানে ঈদগাহের জমির পরিমান প্রায় ৫০ কাঠা। এই সৌন্দর্য্যবর্ধনের রূপকার ঈদগাহ কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মো. আব্দুর রাজ্জাক। ৪০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তত্ত্বাবধানে ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নকাজ।
ঈদগাহ কমিটি সূত্রে জানা যায়, ঈদগাহের প্রস্থ প্রায় ১৩০ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৩১৭ ফুট। এর মূল মেহরাবের উচ্চতা ৩০ ফুট, মেহরাবের মাথায় রয়েছে ৩টি গম্বুজ। দুই পার্শে ১২ ফুট প্রশস্ত প্রবেশদ্বারের উপরে রয়েছে ৪টি মিনার। চারপাশের মাঠজুড়ে আছে সীমানা প্রাচীর। এখানে একসঙ্গে ১২০০০ (বারো হাজার) মুসল্লি ঈদের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারে। গম্বুজ ও সীমানা প্রাচীরে বৈদ্যুতিক সংযোগে লাইটগুলো সন্ধ্যার পর ঈদগাহকে আলোকিত করবে। ঈদগাহে মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে স্টোর রুম, শৌচাগার ও ওজুর ব্যবস্থা। ঈদগাহের মাঠের ভিতর মুসল্লীদের নামাজ আদায়ের সময় ছায়া দেওয়ার জন্য লাগানো হয়েছে লতা বাহার গাছ। যা উপরে থাকা লোহার রডের উপর দিয়ে সারা মাঠজুড়ে ছায়া দিবে। এগুলোর নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, রড, সিমেন্ট, বালু, সিরামিক টাইলস, লেজার কাটিং গ্রীল ও স্টীল বার। নকশায় রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের ছোঁয়া। আধুনিক স্থাপত্যশৈলী ও সুপরিকল্পিত অবকাঠামোর কারণে এক অনন্য নিদর্শন হয়ে উঠেছে ঈদগাহের মাঠ।
জমিদাতাগোষ্ঠী মরহুম আমির হোসেন সরকার এর ছেলে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক রাজশাহী জেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক মো. ওয়াদুদ হাসান পিন্টু বলেন, পবা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জনগণের সস্পদ। নিজেও ঈদগাহে এক কাঠা জমি দান করেছেন। বছরে দুইবার সবাই ঈদের নামাজ ও মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়তে ঈদগাহে আসে। একসাথে কাদে কাদ মিলিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। সবার সাথে সবার দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয় ভাল লাগে। আগামীতে একসাথে সবাইকে সাথে নিয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। ঈদগাহের উন্নয়ন কাজ চলমান। উন্নয়ন কাজে সার্বিক সহযোগিতায় এলাকাবাসী সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ঈদগাহ কমিটির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পবা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ১৩টি মহল্লার মুসল্লিগন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযাহার নামাজ সহ মৃত্যু ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে থাকেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য জায়গা প্রসারিত করা প্রয়োজন। সেইলক্ষ্যে এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় জমি ক্রয় সহ অবকাঠামোর উন্নয়নমুলক কাজ চলমান। এজন্য এলাকাবাসীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই উন্নয়ন কাজে এলাকাবাসীসহ দেশের মানুষকে অনুদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করতে আহ্বান জনিয়েছেন ঈদগাহ কমিটির সদস্যবৃন্দ।