শুক্রবার

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদক চোরাচালান চক্রের বাহকরা ধরা পড়লেও গডফাদারদের কোন হদিস নেই

Paris
Update : শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মাদক চোরাচালান চক্রের বাহকরা কখনো কখনো ধরা পড়লেও গডফাদারদের হদিস মিলছে না। অথচ প্রতি বছর দেশে চোরাচালানের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার কোকেন, এমফিটামিনক, ইয়াবা, হেরোইন, ফেনইথাইলামিনের মতো ব্যয়বহুল মাদক আসছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারত থেকেই সিংহভাগ মাদক এদেশের আসছে। আর এত বিপুল পরিমাণ মাদক আসছে যে তা দেশের চাহিদা পূরণ করে পাচার করে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে। মাদক চোরাকারবারের ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে মাদক চোরাচালানিরা বেপরোয়া। তারা মাদক পাচারে বাধা দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করতেও পিছপা হচ্ছে না। অতিসম্প্রতি বান্দরবানে মাদক বিরোধী অভিযানে গুলিতে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা ও এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছে এবং র‌্যাবের একজন সদস্য ছাড়া ৩ রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও চোরাকারবারিরা এদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। ইরান, পাকিস্তান ও ভারত আফিমের একটি বড় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আর মিয়ানমার থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায় বেশিরভাগ আফিম আসে। তাছাড়া আফগানিস্তানে বিশ্বের ৯০ শতাংশ আফিম, ৮৫ শতাংশ হেরোইন ও মরফিন উৎপাদন হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপের বাজারে হেরোইন পাচারে বাংলাদেশ এখন মূল ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রধানত সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালান হয়। আর পাকিস্তান থেকে কুরিয়ারে, ভারত থেকে বাণিজ্যিক মোটরযান ও ট্রেনে এবং মিয়ানমার থেকে বঙ্গোপসাগর দিয়ে অথবা ট্রাক ও পাবলিক পরিবহনে করে বাংলাদেশে হেরোইন আনা হয়। বাংলাদেশ থেকে অধিকাংশ হেরোইন অন্যান্য দেশে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাচার হয়।
সূত্র জানায়, ভারত ও মিয়ানমারের রুট ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী ও মাফিয়ারা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। মূলত ভৌগোলিক অভিন্ন সীমারেখার কারণে চোরাচালানিরা মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলোর মাদক বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশে পাঠায়। গত ৫ বছরে অন্তত ৭টি কোকেনের চালান আটক করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্র চট্টগ্রাম থেকে ওসব কোকেন পাচারের জন্য এনেছিল। কিন্তু ওসব আটকের ঘটনায় কোনো গডফাদাররা ধরা পড়েনি। বাহকরাই শুধু ধরা পড়েছে। ফলে শুধু বাহককে আসামি করে মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরেই কোকেনসহ মাদক পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে ইয়াবা চোরাচালান হয়। ওই কারণে চট্টগ্রামে প্রতিদিনই ইয়াবা ধরা পড়ছে। পাশাপাশি দামি মাদক কোকেনও ধরা পড়ছে। তাছাড়া চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ফেনইথাইলামিন নামের এক বিশেষ ধরনের মাদক ধরা পড়েছে। যা দেখতে কোকেনের মতো। তবে ওই মাদক কোকেনের চেয়ে দামি।
এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে ইয়াবা বা হেরোইন মাদক হিসাবে সেবন করা হয়। কিন্তু কোকেন, এমফিটামিনক বা ফেনইথাইলামিন মাদক বাংলাদেশে সেবনকারীর সংখ্যা খুবই নগণ। মূলত ট্রানজিট হিসেবে চট্টগ্রামে কোকেনের চালান আসে। সেখান থেকে অন্য দেশে পাচার হয়। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্রের গডফাদাররা।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris