স্টাফ রিপোর্টার : পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জমি দখলে নিয়ে কারখানা ও বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় দুইজন দলীয় নেতার বিরুদ্ধে। রাজশাহী নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের হাজরাপুকুর এলাকায় একটি পুকুর ভরাটের পর সেখানে কারখানা ও দুই তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন দুই বিয়াই। অভিযুক্তরা হলেন, ১৯নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম। কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম সম্পর্কে পরষ্পরের বেয়াই হন। রেলের যে জায়গাটি অভিযুক্তরা দখলপূর্বক স্থাপনা করেছেন সেটির বর্তমান আনুমানিক মূল্য প্রায় কোটি টাকা বলে জানান স্থানীয়রা। দখল হওয়া জায়গাটি চারিদিক দিয়ে ঘিরে রাখার কারণে, আশেপাশে বসবাসকারি নিম্নআয়ের মানুষদের চলাচলা স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। অভিযুক্ত দুই দখলদার প্রভাবশালী হবার কারণে ভয়ে ভুক্তভোগীরা কিছুই বলতে পারেন না। এই দখলদারিত্ব নিয়ে বেশকিছু জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হবার পরে কর্তৃপক্ষ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর কর্তৃপক্ষ আবারো পূর্বের ন্যায় নিশ্চুপ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে চলছে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা চুপ করে বসে নেই। যথাসময়ে আইনগত ব্যবস্থা তারা নেবেন।
জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) রেজাউল করিম বলেন, গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রকৌশলী ও এস্টেট বিভাগের একজন কানুনগো সরেজমিনে কারখানার স্থানটি পরিদর্শন করেছে। মাপযোগ ও পরিদর্শন শেষে রেলেও জায়গা অস্থায়ীভাবে লাল কাপড়ের খুঁটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও যদি কেউ সরকারি জায়গা থেকে স্থাপনা অপসারণ না করে তাহলে রেলের নীতিমালা অনুযায়ী ক্রিমিনাল ও সার্টিফিকেট মামলা করা হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, হাজারাপুকুর এলাকায় রেলওয়ের পুকুর ভরাট করে কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম সেখানে একপাশে কারখানা এবং আরেকপাশে বাড়ি নির্মাণ করেন। কামরুল ইসলামের কারখানার আরেক পাশে রেলওয়ের জমিতে দুই তলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন খাদেমুল ইসলাম। দখল হওয়া স্থানটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশকালে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) বাবুল আক্তার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আমরা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছি। দেয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। কোনো স্থাপনা কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তা উচ্ছেদ করা হবে। দখলদারদের উচ্ছেদে আমরা দ্রুতই চিঠি ইস্যু করবো। তখন এস্টেট শাখা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে কেউই রেলওয়ের জমি দখল করতে পারবে না। তদন্তে রেলওয়ের জমি দখলের বিষয়টি প্রমাণিত হলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে জমি পেলে তা মেপে নেবে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি নিজ দায়িত্বে কেনো স্থাপনার একাংশ উচ্ছেদ করছেন না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলে, তারা (রেল) করবে, আমি কেনো করবো। এতোবছর ধরে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে কেনো দখল করে রেখেছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই তো করে, আমি তো আর বিক্রি করছি না।