শনিবার

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় আবার কোথাও ব্যাঙের বিয়ে

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে রাজশাহীর কোথাও ইসতিসকার নামাজ আদায় হয়েছে আবার কোথাও দেয়া হয়েছে ব্যাঙের বিয়ে।
বাঘা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে রাজশাহীর বাঘায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টায় বাঘা শাহদৌলা সরকারি কলেজ মাঠে খোলা আকাশের নিচে এই নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করা হয়। নামাজের ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বাঘা শাহী মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. আশরাফ আলী। এতে অংশ গ্রহন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু, বাঘা পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাছ আলী, বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন, বাঘা মোজাহার হোসেন মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ নসিম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন সুরুজসহ স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী মুসল্লিগণ।
উল্লেখ্য, প্রায় একমাস যাবত বৃষ্টির দেখা নেই। নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর নলকূপ, সেচ পাম্প হ্যান্ড টিউবয়েলে টিউবয়েলের পানি উঠছে না। তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ রোদে কাজ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে মুসল্লিরা বৃষ্টির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে নামাজ শেষে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।


মোহনপুর সংবাদদাতা জানান, উপজেলার নঁওগা গ্রামে মুঙ্গলবার বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গ্রামের কয়েটি বাড়িতে বৃষ্টির জন্য গান গাওয়া শেষে ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। বিয়ে শেষে দুপরে ছিল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। মোহনপুর উপজেলার নওগাঁ গ্রামের শিশির, সবিজ, স্বপন ও মমেনা উদ্যোগে এই ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। টানা বৃষ্টি হয়নি। এ অবস্থায় তাপমাত্রাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এই আয়োজনের সঙ্গে ছিলেন নওগাঁ গ্রামের একদল শিশু-কিশর তাঁরা নেচে-গেয়ে রং মেখে সারা গ্রামে ঘুরে বেড়ান। এরই মধ্যে ব্যাঙ বর-বধূকে কলাগাছের খোলের মধ্যে ভরে হাতে নিয়ে ঘোরেন। ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোক্তা শিশির বলেন, তাপমাত্রা বাড়ছে। গাছের আম ঝরে পড়ছে। অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা পাড়ার শিশু কিশোরদের নিয়ে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেন। তারা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে বৃষ্টির জন্য ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে’ গানটি গেয়েছেন। পরে ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে একটি প্রতীকী পুকুর খনন করে সেখানে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। যারা এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। যাতে দ্রুত বৃষ্টি হয় এইজন্য।

অপরদিকে বাঘা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, বাঘায় বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আড়ানী পৌর এলাকার গোচর গ্রামে বাড়ি বাড়ি চাল ডাল তুলে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। পরে রান্না করে খাওয়া দাওয়া শেষে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। জানা যায়, স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস ব্যাঙের সঙ্গে ব্যাঙের বিয়ে দিলে অনাবৃষ্টি কেটে যাবে। গোচর গ্রামের মন্টু আলী ও রোকেয়া বেগমের উদ্দ্যোগে গ্রামের অর্ধশতাধিক ছেলে-মেয়েদের সাথে নিয়ে বাড়ি বাড়ি চাল ডাল তুলে বিয়ের আয়োজন করা হয়। পরে রান্না করে খাওয়া দাওয়া শেষে বৃষ্টির আশায় ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে মন্টু আলী বলেন, তীব্র গরমে মানুষের নাভিঃশ্বাস হয়ে উঠেছে। কিছুদিন থেকে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না, চাষাবাদেন জন্য পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। একারণে যাতে বৃষ্টি হয়, সে জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
রোকেয়া বেগম বলেন, রীতি অনুযায়ী অনেক বছর ধরে ব্যাঙের বিয়ে প্রথা চালু আছে। দীর্ঘদিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় এই গ্রামের সবাই মিলে ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়। আমাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে। সেই আশাতে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলী মিঠন কুমার রবি দাস ও মেকানিক্স মাহাবুবুর রহমান বলেন, উপজেলায় দুই হাজার ৯৫১টি হ্যান্ড টিউবয়েল বসানো হয়েছিল। এরমধ্যে ৫২৭টি টিউবয়েলে বর্তমানে পানি উঠছেনা। সেগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাই বৃষ্ঠির আশায় কেউ খোলা আকাশের নিচে আবার কেউ ব্যাঙের বিয়ে দিচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ ২ এপ্রিল ৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর আর বৃষ্টির দেখা নেই।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris