শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তাল জবি

Paris
Update : শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তীকা আত্মহত্যার ঘটনায় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টার পর সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বর থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে, ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে এসে জড়ো হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করে বিক্ষোভ করছিলেন। এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অর্থনীতি বিভাগের রেদোয়ান হক বলেন, আজকের বিক্ষোভ থেকে আমরা ছয় দফা দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবিগুলো হলো, এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে, অভিযুক্ত আম্মান ও দীন ইসলামকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে, ভুক্তরভোগীর পরিবারের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী সেলকে স্বাধীন করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা করতে হবে। রেদোয়ান আরও বলেন, আমাদের এসব দাবিদাওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মানা না হলে আমরা বড় আন্দোলনের ডাক দেবো, পাশাপাশি ভিসি ভবন ঘেরাও করবো। এর আগে গত শুক্রবার ফাইরুজের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর মধ্যরাত থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন সহপাঠীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের। পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টর থেকে অব্যাহতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার অধিকতর তদন্তে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। আত্মহত্যার চেষ্টার আগে ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য সহকারী প্রক্টর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী নামে একজনকে দায়ী করেন। গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। পরে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত সোয়া ১০টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আত্মহত্যার আগে অবন্তিকার ফেসবুক স্টাটাস: ‘আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো, সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউসিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন হয়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারী জাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে ‘…তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?’ ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা আরও বলেন, আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিলো। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়ত থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কি-না শেষমেষ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক উপাচার্য সাদেকা হালিম ম্যামের কাছে আমি বিচার চাইলাম। আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই, মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।’
অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মানের স্ট্যাটাস: এদিকে অবন্তিকার মৃত্যুর প্রায় সোয়া চার ঘণ্টা পর ঘটনার নেপথ্যের নানা দিক তুলে ধরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অভিযুক্ত সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী। স্ট্যাটাসে তার দেওয়া বিবরণ তুলো ধরা হলো- প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সবার কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার জন্য। ঘটনার সূত্রপাত ০৪.০৮.২০২২ সালে। একটা ফেক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদমূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নিজের নামও সেই টেক্সের মধ্যে ছিল। যখন এমন মেসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যাই। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিল। পরবর্তী জিডি করা হয়। জিডি করে ফেরার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এ কাজটি করেছে। পরদিন এসআই রুবেলকে, আইও (কোতোয়ালি থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এসআই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এসআই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন। আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন। অবন্তী এ ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সঙ্গে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকি সময়টা যেন আমরা মিলেমিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান। তার পরবর্তী সময়ে আমি অবন্তীকার সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। আর ফেসবুকে তার সঙ্গে আমার তারপর থেকে কোনো যোগাযোগই হয়নি। এমনকি তার সঙ্গে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি। এবার আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে এক তরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটি কাজ অবন্তী করবে। তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন। আর একটি প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিল না? আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিল তারপরে আর তার সঙ্গে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিলো। তার সঙ্গে আমি আজকে পর্যন্তও ফেসবুকে বা অন্যকোনো মাধ্যমে কথাই বলিনি। এ ছিল আমার সাইডের বাস্তবতা এবং সত্যি বিষয়টি। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরছি। বিশ্বাস করা না করাটা একান্তই আপনাদের উপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি। উপরন্তু বলে রাখা ভালো, এ ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তিকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তিকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিল যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। হতে পারে এ ভাবনা থেকে অবন্তিকার মনে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধ প্রবণ চেতনা থেকেই হয়ত আজকের এ ঘটনা ঘটানো তার দ্বারা। আরও বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সঙ্গে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সরল মানুষ হিসেবেই চেনেন। পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সবাইকে। অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির শিকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম। রায়হান সিদ্দিকী আম্মান, আইন বিভাগ, জবি।
এদিকে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন, গত দেড় বছর আগে অবন্তিকা ফেসবুকে ফেইক আইডি খুলে কয়েকজনকে বাজে কমেন্ট করার অভিযোগে তারা কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তিকা প্রক্টর অফিসে এলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। পরে আমি একই জেলার হওয়ায় আমার কাছে অবন্তিকা ও তার মা জিডি তোলার বিষয়ে এলে আমি তাতে অপারগতা প্রকাশ করি। কারণ জিডি ওঠাতে পারেন একমাত্র প্রক্টর। আমি তাদের প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। পরে তারা এ বিষয়ে আর কখনো আসেননি। আর ফেসবুক পোস্টে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কখনো ওই মেয়ের সঙ্গে একা কথা বলিনি। তাকে যতবার ডাকা হয়েছে সর্বদা প্রক্টর অফিসেই সবার সামনে ডাকা হয়েছে। আর ওখানে বসে এসব ভাষায় গালি দেবো- এটা কেমন কথা। এ বিষয়ে জবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু অভিযুক্তের একজন আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য তাই উপাচার্য সাময়িকভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অবন্তিকার মা : আমার স্বামী মারা গেছেন এক বছর হলো। গতরাতে আমার মেয়ে ফাইরুজ অবন্তিকা মারা গেছেন। আমি এ শোক নিতে পারছি না। আমার আরেক ছেলে আছে। আমার মেয়ের এই দুর্ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছেলেসহ শেষ হয়ে যাব। গতকাল শনিবার কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় কাঁদতে কাঁদতে নিজের দুঃখের এই কথাগুলো বলছিলেন আত্মহত্যা করা জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম। তিনি বলেন, আমার মেয়ে অত্যন্ত উদ্যমী। আমার মেয়ে মেধাবী এটাই কি তার অপরাধ? সে তার সেশনে ফার্স্ট, এটাই কি তার অপরাধ? সে জিডি (জেনারেল ডিউটি) পাইলটে টিকেছে, এটাই কি তার অপরাধ? আমি প্রক্টর, চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কোনো বিচার পাইনি। আমি বিচার না পেলে শেষ হয়ে যাব। আমার কিছুই নেই। নিজে শেষ হয়ে গেলেও কিছুই থাকবে না।
অবন্তিকার দাফন : ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে দায়ী করে গলায় ফাঁস নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে বিকেল ৩টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে অবন্তিকার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লা সরকারি কলেজ জামে মসজিদের ইমাম আবু মুসার ইমামতিতে এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেফতাহুল হাসান, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ নূরুর রহমানসহ অবন্তিকার ছোট ভাই জারিফ জাওয়াত অপূর্ব, জবি আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেফতাহুল হাসান সান, কুমিল্লা সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রধান নূর মোহাম্মদ খানসহ কুমিল্লার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ অংশ নেন। পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শাসনগাছা জামে মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার দাফন কাজ শেষ করা হয়।-এফএনএস


আরোও অন্যান্য খবর
Paris