এফএনএস : আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলের সাবেক স্ত্রী মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা ও আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর বারিধারা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। এ সময় ওই দুই মডেলের বাসা থেকেই বিপুল পরিমাণ মদ, ইয়াবা, সিসা উদ্ধার করা হয়। ডিবি জানায়, রাতে প্রথমে বারিধারার ৯ নম্বর রোডে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার বাসা থেকে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
পরে পিয়াসাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরে মডেল মৌয়ের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি। সেখান থেকেও বিপুল পরিমাণ মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। এরপর তাকেও আটক করা হয়। পিয়াসাকে আটকের পর ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম জানান, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পিয়াসাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে গুলশান থানায় পিয়াসার বিরুদ্ধে ও মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন। ডিএমপির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জোনায়েদ আলম সরকার বলেন, মাদক আইনে দায়ের করা দুই মামলায় এই দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এর আগে ডিবি পুলিশ জানায়, আটক হওয়া দুই মডেল একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য।
তারা উচ্চবিত্তদের ব্ল্যাকমেইলিং করতেন। গত রোববার গভীর রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুরে মৌয়ের বাড়ির নিচে সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশীদ বলেন, তারা দুজন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আজ তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা পাওয়া গেছে।
মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল। ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকাণ্ড করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় আসলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরবর্তীতে তারা সেসব ভিডিও ও ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন।
এদিকে তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পরবর্তীতে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের টাকা হতিয়ে নিতো। বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবি উত্তরের যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর রশীদ জানান, আটক হওয়া পিয়াসা ও মৌ আক্তার একটি সংগবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। বিভিন্ন সময় উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পরবর্তীতে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করা হতো। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বরিধারা ও মোহাম্মপুরের বাসা থেকে মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে।
তাদেরকে আটক করা হয়েছে। সোমবার গুলশান ও মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হবে।তিনি আরও বলেন, আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমান এবং রাতে এসব কর্মকাণ্ড করেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় আসলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাখতেন। পরবর্তীতে তারা সেসব ভিডিও এবং ছবি ভিক্টিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতেন। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ থাকায় আলাদা মামলা হবে।
এসব মামলায় আমরা তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। বিভিন্ন সময় নানা ঘটনায় আলোচনায় আসেন মডেল পিয়াসা। ২০১৭ সালে মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা।
কিন্তু সেই পিয়াসার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগী। এশিয়ান টেলিভিশনের সাবেক পরিচালক এবং প্রিভিউ কমিটির প্রধান ছিলেন ফারিয়া পিয়াসা। দীর্ঘদিনের প্রেমিক ব্যবসায়ী শাফাত আহমেদকে বিয়ে করেন তিনি। এনটিভির রিয়েলিটি শো ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’র অন্যতম প্রতিযোগী ছিলেন ফারিয়া পিয়াসা। সর্বশেষ গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের পর যে মামলা হয়েছিল তাতেও পিয়াসার নাম ছিল।
রিমান্ড : মাদক মামলায় মডেল মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌয়ের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম মৌয়ের রিমান্ড আদেশ দেন। এদিন বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করে মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম।
আসামিপক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় পিয়াসাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।