রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী বস্ত্র ও কুটির মেলায় প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরাও

Paris
Update : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার

গত ১৮ নভেম্বর থেকে মাসব্যপি শুরু হয়েছে বস্ত্র ও কুটির শিল্প মেলা। গেলবারের মতো এবারো এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের গ্রীণ প্লাজায়। ‘ইউমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ওয়েব)’র আয়োজনে নগরীতে এটি তাদের ১৯তম মেলা বলে জানান রাজশাহী শাখার সেক্রেটারি ফাতেমা আক্তার। এবার স্পন্সার হিসাবে মেলায় যোগ হয়েছে ৮টি প্রতিষ্ঠান। বস্ত্র ও কুঠির শিল্প মেলায় ৫২টি বিভিন্ন ধরনের স্টল বসানো হয়েছে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত্রি অবদি ক্রেতা-দশনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতি শুক্র ও শনিবার কানায় কানায় দর্শনার্থীপূর্ণ মেলায় যেন তিল ধারণের ঠাঁই থাকেনা।

রাজশাহীর স্থানীয় মহিলা উদ্যোক্তাদের সুযোগ না দিয়ে বাইরের ব্যবসায়ি ও উদ্যোক্তাদের এই মেলাতে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়াতে স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে এমন কথার বিপরীতে সভাপতি লিপি বলেন, আমরা স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরকে মেলায় স্টল নেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু অধিকাংশ উদ্যোক্তা মাসব্যাপী অংশ গ্রহণ করতে চাননি। তারা সপ্তাহব্যাপি মেলার পক্ষপাতি। হাতেগোণা কয়েকজন অংশগ্রহণ করলেও কাঙ্খিত মার্জিনের পণ্য বিক্রি না হবার কারণ দেখিয়ে কয়েকদিন পরেই স্টল ছেড়ে দেন। যেটি ‘রি-কাভার’ করা আয়োজকদের জন্য বেশ কঠিন। প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িদের জন্যও দুটো স্টল আমরা ফাঁকা রেখেছিলাম। কিন্তু এখান থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি। তাছাড়া, ওয়েভের প্রায় একশজন সদস্য থাকলেও তাদের কাছ থেকেও আমরা তেমন কোন সাড়া পায়নি মেলাতে অংশগ্রহণের বিষয়ে। মূলকথা, মেলা আয়োজনের অনুমতি পাবার মাত্র চারদিনের মাথায় সার্বিক আয়োজন খুব তড়িঘড়ি করে করতে হয়েছে। যার কারণে অনুন্নপায় হয়েই প্রায় সতেরটি স্টল ভাড়া দেয়া হয়েছে অন্যান্য জেলার উদ্যোক্তাদেরকে। কারণ, ওয়েভ এর মূল্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এই মেলা আয়োজনের মধ্যদিয়ে, তরুণ উদ্যোক্তাদের তৈরিকৃত পণ্যগুলোকে ক্রেতাদের কাছে পরিচিতি করানোর পাশাপাশি বিক্রি করার একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে কোন আয়োজকই বলতে পারবে না যে, তারা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িদের জন্য এই আয়োজন করেছেন। তাছাড়া ওয়েভের কার্যক্রম সমস্ত বাংলাদেশ তাদের চলমান রয়েছে। তাই মেলাতে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি অংশগ্রহণকারিদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অধিকার। কে কোন জেলা থেকে আসলো সেটি মূখ্য বিষয় নয়। বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য আয়োজকদের। ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, বরিশাল থেকে আসা উদ্যোক্তারা এসেছেন রাজশাহীর এই মেলাতে। বাইরে থেকে ব্যবসায়িরা বিষয়টি পজিটিভভাবে চিন্তা করা উচিত। কারণ, এতে করে নতুন নতুন ব্যবসায়িক ধারণা উন্মোচিত হয় বলে মন্তব্য সভাপতি লিপির। বিভিন্ন জেলার উদ্যোক্তাদের সমারোহে জমে উঠেছে মেলা বলে জানান ওয়েভ সেক্রেটারি ফাতেমা।

এদিকে, কলেজ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাদের পকেটমানি উপার্জনের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার অভিপ্রায়ে মেলাতে তৈরি করা হয়েছে গোলাকৃতির একটি সাজানো গোছানো উন্মুক্ত স্টল। যেখানে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভাড়া প্রদান ব্যতীতই নিজেদের প্রতিভাকে সমুন্নত করতে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের হাত রাঙ্গাচ্ছেন মেহেদির ডিজাইনে। এই আয়োজনে সেবা গ্রহীতারা অনেক অভিভূত হচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণী ও শিশু কিশোরীরা উপচে পড়ছে মেহেদি দিয়ে নিজেদের হাতকে কারুকাজে অলংকিত করতে। উপশহর নিবাসী মারুফা খাতুন নিজের মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন মেলা দেখতে। স্টলে এসে তিনিও নিজের হাত মেহেদি দিয়ে অলংকিত করেছেন চমৎকার ভাবে। রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিয়া, মৌসহ আরো অনেকেই এই স্টলে এসেছে মেহেদি দিয়ে নিজেদের হাত কারুকাজ করতে। ডিজাইনার নিথি ও সানিয়া আক্তার উভয়েই শিক্ষার্থী। সম্পূর্ণ ‘ফ্রি’ তে এই স্টলে নিজেদের প্রতিভা প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ দেন আয়োজকদের। তারা আরো জানায়, প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ জন দর্শনার্থী এই মেহেদি স্টলে আসেন। একটি হাত ডিজাইন করতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট। পঞ্চাশ টাকা থেকে একশ টাকার মধ্যেই যে কেউ এই মেহেদি সেবা নিতে পারবেন বলে জানান শিক্ষার্থী ডিজাইনার নিথি ও সাদিয়া।  তবে ডিজাইন ভেদে রয়েছে খরচের তারতম্য। বিউটি পার্লার থেকেও অনেকেই আসছেন মেহেদি দিয়ে নিজেদেও হাত সাজাতে। এছাড়াও অনেকেই আশ^াস দিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে মেহেদি দিয়ে নিজেদের হাত রাঙ্গাতে।

অন্যান্যবারের চাইতে এবারের মেলাতে স্টল ভাড়া ছাড়াও পণ্যের দামি বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এর কারণ জানতে চাইলে, মেলার আয়োজক ওয়েভ’র সভাপতি আনজুমান আরা লিপি ও সম্পাদক ফাতেমা আক্তার জানান, রাসিকের কাছ থেকে মেলার ভ্যেনু গ্রীনপ্লাজা ভাড়া নিতে পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। মেলার স্টল তৈরি ও মাসব্যাপি প্যান্ডেল, চেয়ার টেবিলসহ অন্যান্য উপকরণ ভাড়াবাবদ প্রায় ছয় লাখ খরচ হয়েছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের জন্য বিনোদনের আয়োজন, আনসার ও অন্যান্য ভলেন্টিয়ারের সম্মানী ছাড়াও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ দিয়ে সর্বসাকুল্যে দশ লাখের উর্দ্ধে খরচ হচ্ছে। যার কারণে অন্যান্যবারের চাইলে স্টল ভাড়াটা একটু বেশি। ৮/৮ ফিটের একটি স্টল এক মাসের জন্য ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ হাজার। এই পরিমাপনুযায়ী যিনি যে পরিমাপের স্টল ভাড়া নিয়েছেন তিনি নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়াই পরিশোধ করছেন। সে হিসেবে প্রতিদিনের ভাড়া পড়ছে পাঁচশ টাকার মতো। মেলাতে এই মার্জিনের ভাড়াটা খুব আহামরি কিছু না বলেই মন্তব্য আয়োজকদের। পণ্যের দাম সম্পর্কে সম্পাদক ফাতেমা বলেন, মেলার পণ্য মানেই দাম কম, এই চিন্তা চেতনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে ক্রেতাদের। কারণ দেশের বিভিন্ন নামিদামি শোরুম ও মার্কেটগুলোতে যে পণ্য বিক্রি হয়, মেলাতেও একই পণ্য বিক্রি হয়। তাছাড়া মার্কেট ও শোরুমের চাইতে অনেক কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ থাকে যে কোন মেলাতে। কারণ, এখানে একজন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ি নিজের পণ্য ক্রেতার কাছে নিজেই বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই নিজের প্রতিষ্ঠান ও পণ্য পরিচিতির প্রসার ঘটাতে নামমাত্র লাভে তিনি পণ্য বিক্রি করবেন। আর এটাই স্বাভাবিক।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris