শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

কাউন্সিলর সাবেরের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

Paris
Update : বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

তানোর প্রতিনিধি
রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আলী মন্ডলকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান দাবি তুলেছে নাগরিকগণ। স্থানীয়রা জানান, সাবের আলী কাউন্সিলর ও মাছ ব্যবসায়ী, বাড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলশো গ্রামে। মাছের হ্যাচারি ও পুকুরের ব্যবসার পাশাপাশি কাউন্সিলর পদ ব্যবহার করে দখলবাজির মাধ্যমে অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন শতকোটি টাকা। যার বেশির ভাগ সরকারি সিএনবি’র জায়গা দখল করে আয় করা। তার দখলে আছে প্রায় ১০০ বিঘার বেশি সরকারি জমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, একটা সময় সাবের আলী এলাকার হাট হাটে বাঁশ-বেতের ঝাঁকা-ডালি ও সুপারি বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করতেন। কিন্ত্ত বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে তিনি বিএনপিতে যোগদানের মধ্যদিয়ে আলাদীনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন। রাতারাতি ফুলেফেঁপে টাকার কুমির হয়েছেন। তারা বলেন, সাবের আলী এখন এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক। স্থানীয় নাগরিকগণ কাউন্সিলর সাবের আলীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দপ্তরে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবের আলীর বড় একটি সময় কেটেছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর রাতারাতি খোলস পাল্টিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদেন। এমনকি বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এর পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। দলীয় পদের অপব্যবহার করে কোটিপতি বনে গেছেন সাবের আলী। সুত্র জানায়, কেশরহাট পৌর বাজারের ৫২ বিঘার প্রায় ২৫ বিঘা সরকারি জমি তার দখলে। কেশরহাট বাজার তেলের পাম্পের পাশে রাস্তার ধারে পুর্বদিকে সিএনবির জায়গায় অনুমতিবিহীন বিস্কুট থেকে ফিড তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। একইসঙ্গে তার পাশে ফার্নিচারের দোকান করে দখল করেছেন জমি। তবে ফার্নিচারের দোকানটি ভাড়া দেওয়া আছে। এখানে কারখানা ও দোকান মিলে ২ বিঘার ওপরে সিএনবির জায়গা দখলে রেখেছেন এই ভূমিদস্যু সাবের আলী। অপরদিকে ঠিক তার সামনে রাস্তার পশ্চিম ধারে সিএনবির জায়গায় একাধারে ১০টি টিনের দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এর পাশের ১৯ শতক মালিকানা জমি সম্প্রতি কিনেছেন বলে জানা গেছে। ঠিক তার সামনের প্রায় তিনবিঘা জমি দখল করে রেখেছেন। বাজারে তেল পাম্পের সামনে পৌরসভায় যাওয়ার রাস্তার শুরুতেই দক্ষিণ ধারে টিন দিয়ে ঘিরে সেখানে আটা তৈরির মিল কারখানা গড়ে তুলে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। সম্প্রতি হাইস্কুল মার্কেটের সামনে জোর করে দখল করা জায়গার পেছনে ফাঁকা প্রায় ৩ বিঘা জমি দখল করেছেন। এর পেছনে লম্বা একটি চায়ের দোকান বোর্ড ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। এর সামনে পৌর ব্রিজের সঙ্গে একাধারে ৫টি পাকা ঘর, ৫-৬ টি টিনসেড ঘর, এরপর হলুদ মরিচের গুড়া তৈরির কারখানা করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। ঠিক তার পূর্বদিকে পুকুরের ধারে ২ তলা বিল্ডিং নির্মাণ করে দখল করেছেন, যা পুরনো পৌর ভবন ছিল। শুধু কি তাই, বিল্ডিংয়ের পশ্চিমপাশে ক্লাব ঘর, সোনা চাদির কারখানা ৪টি, পার্টসের দোকান ১টি, লেদের দোকান ১টি, আরও ২টি ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে দখলে রেখেছেন। তার সামনে কামার ২ চালি, কাঠপট্রির পাশে ৪টি দোকান ঘর দখলে রেখে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়াও বাড়ির পাশে প্রায় ৪০ বিঘা বিলের ৩ ফসলি জমি নষ্ট করে অবৈধ পুকুর খনন করেছেন। তা ছাড়া এলাকা ও এর আশেপাশে প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৩০-৩৫টি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। সবমিলে কাউন্সিলর সাবের আলী সরকারি প্রায় শত বিঘা জমি দখল করে ভোগ করছেন। দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলর সাবের আলীর স্ত্রী ও ২ সন্তান থাকতেও বছর খানেক আগে মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ভুট্টু নামের এক লোকের
স্ত্রীকে ভাগীয়ে নিয়ে বিয়ে করে অন্যত্র ভাড়া বাসায় রেখেছেন। বর্তমানের তার ২ সংসার। এর প্রায় একযুগ আগে মোহনপুর থানায় মাছ চুরির মামলায় জেল খাটেন এই কাউন্সিলর। এছাড়াও সম্প্রতি তিনি অবৈধ কাজে ব্যাবহারের জন্য ১টি প্রাইভেট কার কিনেছেন যার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেয়। বর্তমানে এলাকায় তিনি ভূমিদস্যু নামে পরিচিত। এ ছাড়া স্ত্রী, সন্তান ও তার নির্ভরশীলদের নামে বেনামে এমনকি আত্মীয় স্বজনদের নামে বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন। একই সঙ্গে অবৈধভাবে দখল করে রাখা সড়ক ও জনপথের জমি লিজ পেতে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অফিসে প্রায় ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সাবের আলী বলেন, এ সব মিথ্যা। আমি কোন জমি দখল করিনি। আমার জমির কি অভাব পড়েছে ? আমি কেন সরকারি জমি দখল করতে যাব। তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ কি মিথ্যা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ। সরকারি খাস জমি দখলের বিষয়ে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম জানান, কেশরহাটে অনেক অভিযান করেছি। আমাদের সড়ক ও জনপথের অনেক জমি রয়েছে। তবে খাতা কলম না দেখে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে সওজের জমি কেউ দখল করলে তাকে ভোগ করতে দেওয়া হবে না। এবিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাঃ নাহিনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ দুদকে পড়েছে দুদক সেটি অনুসন্ধান করবে। এরপর তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন তাহলে মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেউ দোষী প্রমাণিত না হলে মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার (অনুসন্ধান) বিভাগ থেকে বলেন, কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পেলে আমরা সেটা যাচাই বাছাই করি। এরপর সু-স্পষ্ট অভিযোগ সেটা অনুসন্ধান করা হয়। আর অনুসন্ধানের পর আমরা তদন্ত করি এবং শেষে মামলা দায়ের করি। আমরা অভিযোগের বিষয়বস্তু দেখি। আর যেগুলো আমরা সফল হবো ভাবি সেগুলো দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করা হয়। দুদক আগের চেয়ে গতিশীল সুতরাং দুর্নীতি করে কারও পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এবিষয়ে পৌর মেয়র শহীদ কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris