বুধবার

১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
রাজশাহী নগরীতে পলাতক আসামির অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ বাঘায় স্ত্রীর লাঠির আঘাতে আহত শিক্ষকের মৃত্যু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে জনপ্রশাসনে চিঠি শিক্ষামন্ত্রীর জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে : গবেষণা গোপন নথিতে উঠে এল ইরানি কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন-হত্যার ঘটনা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি আজ মহান মে দিবস তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো দেশবাসী বিএমডিএ’র ইবিএ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রাসিক কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সাথে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ও ইউনিসেফ প্রতিনিধির সাক্ষাৎ

‘তেলের সংকট তৈরি করা ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত’

Paris
Update : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

এফএনএস : দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে যারা সংকট তৈরি করেছেন তারা চিহ্নিত হয়েছে। এই ব্যবসায়ীদের তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। আগামীতে তেলের দাম বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বাজার মনিটর করবো। আশপাশের দেশগুলো দেখে বিবেচনা করবো সবকিছু। যতদূর দাম কমানো যায় তার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, এলসি কত দামে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ক্লিয়ার করলো সেটা ধরে তেলের দাম নির্ধারণ হয়।

আজকে ২৫০ টাকা হয়েছে সেটা ধরে কিন্তু দাম নির্ধারণ হচ্ছে না। আজকের দামে যদি ফিক্স করতাম তাহলে গতকাল (গত রোববার) টনপ্রতি তেলের দাম ছিল ১৯৫০ ডলার। জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকার আমাদের সাহায্য করছে। এত হাজার হাজার ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছানো মুশকিল। যেখানে যেখানে সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি। তেলের সংকট তৈরি করা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, খুচরা পর্যায়ে কিন্তু কাজটি করেছে।

আমাদের ভোক্তা অধিকার যেখানেই এ ধরনের ঘটনা পাচ্ছে তাদের জরিমানা-মামলা করছে। আমরা অ্যাসোসিয়েশনকে বলেছি তাদেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। মিল মালিকদেরও করতে হবে মনিটরিং। কোন কোন জায়গায় এ ধরনের ডিলার আছে তাদের ডিলারশিপ বাতিল করতে পারেন। আইনগতভাবে যেখানে যেটা দরকার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তেলের দাম বৃদ্ধি মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ব্যর্থতা ঠিক, কারণ (ব্যবসায়ীদের) বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ঈদের সাতদিন সেই কথা রাখেনি।

আমাদের সব অর্গানাইজেশনকে বলেছি, যে দাম নির্ধারিত আছে সেটি যাতে ঠিক রাখা হয়। আগামী জুন মাস থেকে ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেবো। তেলের সিন্ডিকেটের কোনো নমুনা পাইনি। রিটেইলার, ডিলাররা সুযোগটা নিয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো রিটেইলার থেকে ডিলার পর্যায়ে কেউ যাতে সুযোগ নিতে না পারে। তেলের দাম পরবর্তীতে সমন্বয় কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আগে এক দেড় মাসের মধ্যে বসতাম। যখন তেলের দাম কমানোর সুযোগ থাকবে তখন আমরা আবার বসবো। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ বলছে না গ্লোবাল মার্কেটে তেলের দাম কতটা বেড়েছে।

দাম বেড়েছে সেটা সত্য, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে সেটাও সত্য। কিন্তু কারণটা জানালে মানুষ বুঝতে পারে। তেলের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ বাইরের প্রতি ডিপেন্ডেড থাকতে হয়। ঈদের আগে বাজারে তেল না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে টিপু মুনশি বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ দাম ঠিক করেছিলাম। চিটাগাং পোর্টে যে প্রাইজে মাল রিলিজ হয়, সে অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। ২০ মার্চ অনুরোধ করায় (তেলে) সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে। তখন ৮ টাকা দাম কমানো হয়। এর মধ্যে আমরা রমজান মাসে তেলের দাম না বাড়াতে অনুরোধ করায় এতে তারা (ব্যবসায়ীরা) একমত হয়েছিল।

মানুষের কথা বিবেচনা করে দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করেছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল রমজানের পর বসবো। যারা বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক তথ্য নিয়েছি। কিন্তু পথে ঝামেলা হয়েছে। রিটেইলার ও ডিলাররা কিন্তু জানতো রমজানের পর তেলের দাম বেড়ে ফিক্সআপ হবে। তিনি বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে অনেকে তেল ধরে রাখলো। কারচুপিটা এখানে হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে যেন এগুলো না হয় সেটি দেখতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, তাদের অনুরোধ করা ঠিক হয়নি যে রমজানে তেলের দাম না বাড়ানোর। কারণ তাদের যদি একটি দাম বৃদ্ধি করে দিতাম তাহলে এটি হতো না। ভারতে তেলের দাম কত? তাদের দামও ১০-১২ টাকা বেশি আছে।

ব্যবসায়ীরা অনেক সুযোগ নিয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা মনিটর করবো। তবে ব্যবসায়ীদের চাপ দিতে চাই না। মানুষের ক্রাইসিস হলে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। ব্যবসায়ীরা মাঝে অনেকে সুযোগ নিয়েছে, কারণ তারা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে। সেজন্য তারা মজুত করে রেখেছিল। রিটেইলার অপরাধ করলে সংগঠনেরও ব্যবস্থা নিতে হবে। টিপু মুনশি বলেন, আমরা যদি মাঝে আরেকবার দাম বাড়াতাম, এবং এখন বাড়ালে ৩৮ টাকাই তেলের দাম বাড়তো। তিন মাসের ব্যবধানে বাড়ায় এটি হয়েছে। ভোজ্যতেল নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের কথা রাখেনি উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, বলেছিলাম রমজানকে সামনে রেখে দাম বাড়াবেন না। কিন্তু তারা ঈদের সাতদিন সেই কথা রাখেনি।

আমাদের সব অর্গানাইজেশনকে বলেছি, যে দাম নির্ধারিত আছে সেটি যাতে ঠিক রাখা হয়। রমজানে ব্যবসায়ীদের কাছে তেলের দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করাটা ভুল ছিল উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উচিত ছিল রমজানের ১৫ তারিখ দামটা বাড়ানো। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে অনুরোধ করেছিলাম দয়া করে এটা বাড়াবেন না। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলে দাম কত বেড়েছে তা মিডিয়ায় আসা উচিত বলে জানান টিপু মুনশি। মন্ত্রী বলেন, লন্ডনে এক লিটার তেল ফিক্সআপ করে দেওয়া হয়েছে, জার্মানিতে তেলই পাওয়া যাচ্ছে না সে কথাটা জানা দরকার। যদি দাম আরও বাড়ে, যুদ্ধ অনেকদিন চলে। আবার দাম কমলে সেটাও বলা উচিত।

সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, যুদ্ধ থামলে ভোজ্যতেলের দাম কমবে। সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, যুদ্ধের (রাশিয়া-ইউক্রেন) ডামাডোল কমে গেলে তেলের দাম আরও অনেক কমে যাবে। ৫০০ ডলার কমবে, এতে পথে বসে যেতে পারে অনেক মিল মালিক। তেলের দাম যখন কমে তখন তার প্রভাব মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে বলে জানান ফজলুর রহমান। এই ব্যবসায়ী বলেন, বাজার যখন আপ হবে সরকার তখন তার স্টক থেকে কিছু মাল রিফাইনারিকে দিয়ে দেয়। তাহলে বাজার স্থিতিশীল থাকে। ৩৮ টাকা তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯৮ টাকা, যেটি ৫ মে নির্ধারিত হয়।

আজকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আছে ২ হাজার ৫০ ডলার টন। গত শুক্রবার এই দামে ক্লোজ হয়েছে। সেটার কস্টিং এভারেজ করলে ২২২ টাকা লিটারপ্রতি দাম পড়ে। বাড়ানোর সময় খুব মন্থর গতিতে বাড়ে, এটা ব্যবসার ধর্ম। সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৮ টাকায় লিটার প্রতি তেলের দাম ধার্য করা হয়েছে, এটা যদি গতকাল সোমবার কমে, তাহলে এমনিতেই দোকানদাররা কম দামে কিনবে। কারণ এক সপ্তাহে ২০০ ডলার কমেছে পাম তেলের দাম, ১৯৫০ ডলার থেকে ১৭৫০ ডলারে নেমেছে। এটি কেউ কেনে না কারণ আরও কমে যায় কিনা। নিজের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না তারপরও এসেছি।

৫ তারিখ বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন তেলের দাম বাড়ানোর। মাঝে শুক্র-শনিবার বন্ধ ছিল ব্যাংক। সার্বিকভাবে আমাদের টিমকে ট্রান্সপোর্ট, সাপ্লাই, ডেলিভারির জন্য ইন্সট্রাকশন দিয়েছি। এখন শুক্রবার থেকে তেল নেই, সেটার জন্য তো মিল মালিক দায়ী না। ৫ তারিখ সিদ্ধান্ত না দিয়ে আজকে সিদ্ধান্ত দিলে যুদ্ধক্ষেত্র হচ্ছে। তেল আছে, তেলের সেভাবে ক্রাইসিস হয়নি। ১ লিটার তেল এক সপ্তাহ যায়, একটি পরিবার অবশ্যই মাসে কয়েক বার তেল কেনেন।

সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কীভাবে কিনবো, কত টাকায় কিনবো, সার্বিক খরচ কত, সেটি বোতলের গায়েই লেখা আছে। এটি কেউ মুছে দিলে জবাবদিহি করতে হবে। আমি তথ্য চেয়ে সাহায্য চেয়েছি। মন্ত্রীকে বলেছি যখন যে কাজে লাগে আমাকে ডাইকেন। আমাদের পয়সার দরকার আছে, তবে আগামী জেনারেশন যাতে ভালো ব্যবসায়ী হয় সেটি দেখছি। এসময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris