বুধবার

২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ

জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে : গবেষণা

Paris
Update : বুধবার, ১ মে, ২০২৪

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব পড়ছে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে। তাদের মধ্যে গুরুতর দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ মানসিক বৈকল্য এবং ঘুম না হওয়ার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে গবেষণায়। সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্মের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষকরা জানান, এই গবেষণায় মানসিক ব্যাধিগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য ফলাফল উঠে এসেছে। জরিপকৃতদের মধ্যে উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন ২৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, বিষণ্নতায় ভুগছেন ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ , মানসিক চাপে আছেন ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ, দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ এবং ভালো ঘুম হয় না ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশের। এছাড়া জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব সামাজিক অবস্থায়ও প্রভাব ফেলছে বলে জানা গেছে। এসব সমস্যার মধ্যে আছে পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক বিরোধ, বাল্যবিবাহ, অভিবাসন, শিশু শ্রম। গবেষণায় দেখা গেছে, অরিপে অংশগ্রহণকারী ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ অস্বাভাবিক আচরণ করেন। পাশাপাশি উদ্বিগ্ন থাকেন ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ, অস্থির হয়ে থাকেন ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, দুস্বপ্নের মধ্যে থাকেন ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, বেঁচে থাকার অনিচ্ছায় থাকেন ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সটির প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের (এনআইএমএইচ) সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ডা. ড্যানিয়েল নোভাক।-এফএনএস

অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। এটা ভালো যে একটা বেসলাইন স্টাডি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের আরও প্রভাব জানতে এখন আমাদের পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বের নানা সমস্যা দেখা যায়। গবেষণা পরিচালনা করার সময় গবেষকদের বিষয়গত গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ডা. ড্যানিয়েল নোভাক টেলিমেডিসিনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। গবেষকরা জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকাটি নিম্নভূমি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, উপকূলীয় বন্যা ও উপকূলীয় ক্ষয়ক্ষতির মতো প্রাকৃতিক বিপদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা কী কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তাও গবেষণায় উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, সেবাদানকারীদের পেশাদারিত্বের ঘাটতি, সীমিত আর্থ-সামাজিক সহায়তা, ওষুধের ঘাটতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপ্রতুলতা এবং নাগালের বাইরে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ জন জীবনযাত্রায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন–জীবিকার সীমাবদ্ধতা, উচ্চ অভিবাসনের হার এবং সামাজিক দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। গবেষণায় বিভিন্ন সুপারিশ উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছে– মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার বিধান বাড়ানো, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা, কাউন্সেলিং ইউনিট স্থাপন করা, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) ও জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযোজন পরিকল্পনার (ঐঘঅচ) সঙ্গে একীভূতকরণ, দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, নীতি ও আইনি কাঠামোর পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা এবং বিধানাবলী উন্নত করা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris