মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএমডিএ’র ইবিএ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ইবিএ নামের বিভিন্ন মেয়াদে ৬টি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ। তিনি দীর্ঘদিন এই প্রকল্প থেকে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলেও জোর গুঞ্জন রয়েছে।
সুত্র জানায়, গভীর নলকূপ পূনর্বাসন ও স্থাপন, বিদ্যুতায়ন ও নালা নির্মাণ, ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ, কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ, পানি বিতরণ ও প্রি-পেইড মিটার স্থাপন, চারারোপণ, অকেজো নলকূপ সচলকরণ, পুকুর পূনঃখনন, খাল খননসহ অন্যান্য কাজের ৬ প্রকল্পে ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকার কাজে ব্যাপক অর্থ লোপাট হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। ভুক্তভোগী সেবা প্রত্যাশীদের বক্তব্যে উঠে আসে লাগামহীন অনিয়ম দূর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। কৃষক ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, বরেন্দ্র ইবিএ প্রকল্প ইউনিট-২ এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকল্পে ১ম ও ২য় পর্যায়ে (২০০৫ থেকে ২০০৮ ও ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত) ৩১ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে বনায়ন সৃষ্টি করা হয়। নামে বনায়ন বা চারারোপন প্রকল্প হলেও সেখানে বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশও চারা দেখতে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে সেখানকার অনেক চারাগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। ২০০৮-১৪ পর্যন্ত সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য অকেজো গভীর নলকূপ সচলকরণ আরেক প্রকল্পে ১৯৯ কোটি ১৩ লাখ ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের চাষিরা এখনও পানির জন্য হাহাকার করছে। অল্পকিছু পুরাতন গভীর নলকূপ ও পানি বিতরণ এবং প্রি পেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এমন অভিযোগ খোদ প্রকল্প এলাকার স্থানীয় কৃষকদের। তারা আরও বলেন, এখনো অনেক নলকূপ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্য নলকূপের মাধ্যমে একাধিক এলাকায় সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে বিগত ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পুরাতন গভীর নলকূপ পূর্নবাসন প্রকল্পে ৭৬ কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় চাষীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপক পানি সংকটের কথা জানা যায়। প্রকল্পে ব্যয়কৃত টাকা শুধুমাত্র কাগজ কলমেই ঠিক রাখা হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। কিছু বিদ্যুতায়ন ও নালা নির্মাণ হলেও গভীর নলকূপ পূর্নবাসন নামে হয় ব্যাপক লুটপাট। ২০২০ সাল থেকে চলমান ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং কৃষি দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে ৪৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়। ওই প্রকল্পের কাজে ৯২ শতাংশ অগ্রগতি দেখানো হলেও কাজটি এখনো ৫০ শতাংশ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান অন্য আরেক প্রকল্পে পুকুর ও খাল খনন বাবদ ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। একাজেও দৃশ্যমান তেমন কোনো অগ্রগতি নাই।
অপরদিকে বিএমডিএর একটি সুত্র বলছে, বিএমডিএ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ইবিএ প্রকল্প পরিচালক) আব্দুল লতিফ স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে প্রকল্পগুলো থেকে অর্থ লোপাট করেছেন। প্রকল্প উন্নয়নে কৃষকের ভাগ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না হলেও ঠিকাদার ও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের ভাগ্য ও ভারসাম্য দুটোই রক্ষা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পের ভয়াবহ চিত্র-ই তা বলে দেয়। প্রকল্পে বিদেশি ফান্ডের মোটা অংকের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন দেখভালের টাকা অনিয়মের দ্বায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক। প্রতিটি কাজে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিতেন প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ। কমিশন বানিজ্য ছাড়াও কাজ না করেও বিল উত্তোলন করেছেন তিনি। তার নিজস্ব কিছু ঠিকাদার ওই কাজ গুলো করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে ইবিএ প্রকল্পের আওতায় (তানোর, নাচোল, সাপাহার) পুকুর পূন:খননে দূর্নীতি চিত্র দৃশ্যমান। ১০ টি পুকুরে ঘুরে দৃশ্য মান তেমন কোন কাজ না হলেও প্রতিটি পুকুর খননে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৩ হাজার টাকার সাইন বোর্ডে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় ধরে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। তানোর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইবিএ প্রকল্পে তেমন কাজ হয়নি। আমরা দেখতে পায়নি। লোবাতলা ব্রিজের পূর্ব পাশ থেকে শিবনদী পর্যন্ত ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার খাল পুনঃখননেও মানা হয়নি কাজের নিয়ম। অনিয়মে ঠিকাদার অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তানোরে পুনঃখননকৃত পুকুর ও খাল পাড়ে বিএমডিএ’র দাবিকৃত গাছের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নাই।প্রায় ৭০ শতাংশ গাছের কোনো হদিস নাই। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা এসব প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) অনুসন্ধান দাবি করেছেন। নাচোলের স্থানীয় কৃষক কুরবান আলী বলেন, এলাকায় কৃষকরা চরম পানি সংকটে আছেন। ইবিএ প্রকল্পের নামে এ এলাকায় দৃশ্যমান কাজ হয়নি। প্রকল্পের কাজগুলো উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লষ্ট এলাকার উপকারভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএমডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগেও আইল বনায়ন প্রকল্পের(পিডি) হিসেবে দায়িত্বে পালন করেন আব্দুল লতিফ। আইল বনায়ন প্রকল্পেও তার বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অবিযোগ উঠেছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএ তত্ত্বাবধানে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, এসব বিষয়ে আমি ফোনে কথা বলবো না। আপনার কিছু জানার থাকলে অফিসে আসেন। অফিসে আসলে কথা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris