শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিকল্পিত উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে রাজশাহী, বাড়ছে নাগরিক সুবিধা

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনের দায়িত্ব গ্রহণের তিন বছরপূর্তি আজ (৫ অক্টোবর)। মেয়র লিটন রাজশাহীকে বদলে দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিন বছরেই তার বাস্তবায়ন দেখছেন মহানগরবাসী। মহামারি করোনা মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছে রাজশাহীর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা। প্রশস্ত সড়ক, উড়ালসেতু, প্রতিটি ওয়ার্ডে পাড়ায় মহল্লায় কার্পেটিং ও সিসি রাস্তা ড্রেন, শিল্পায়ন, নাগরিক সুবিধা, বৃদ্ধি, পরিবেশ ও বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন চলমান রয়েছে। মহানগরীর সর্বত্রই এখন উন্নয়ন দৃশ্যমান। চলমান ও নতুন গৃহীত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজশাহী আধুনিক, উন্নত, বাসযোগ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা মহানগরীতে পরিণত হবে।

১৮৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় হতে ছোটবনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া, মোহনপুর হয়ে চৌদ্দপায়া রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমমুখি ৬.৭৯৩ কিলোমিটার ৪ লেন সংযোগ সড়ক, সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ, রেলওয়ে ক্রসিং-এ ৩২৭ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘের ১টি ফ্লাইওভার, ১টি ব্রীজ, ৮টি কালভার্ট, মিডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
মহানগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটি ৩০ ফুট থেকে ৮০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে ১০ ফুট চওড়া ফুটপাথ, রাস্তার দক্ষিণ পাশে আট ফুট বাইসাইকেল লেন, উভয়পাশে আরসিসি ড্রেন ও দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে।

১২৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ উপশহর মোড় হতে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে রাণীবাজার মোড় হয়ে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত সরু সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। সরু এই সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন হয়েছে। ১৯৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ (৩য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় ৬.৩৬ কিলোমিটার প্রাইমারী, ১৯.২৯ কিলোমিটার সেকেন্ডারি এবং ৬৭.৭৫ কিলোমিটার টারশিয়ারি নর্দমা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে নর্দমার কাঁদামাটি অপসারণের নিমিত্তে প্রকল্পভূক্ত ৯ টি প্রাইমারি নর্দমার পাশে মোট ৮.৬৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।১৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার বর্তমান সড়কটির প্রশস্ত করে ৪ লেন সড়কে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজটি প্রায় সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে। সড়কটির দক্ষিণ পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সিটি বাইপাস রাস্তা ৪ লেন-এ উন্নীতকরণ ও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর স্মরণি সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনে নর্দমা নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। ৪৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর ওয়ার্ডসমূহের প্রান্তিক এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ কার্পেটিং, সিসি ও নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়াও মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সোনাদীঘি মোড় হতে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কটির দুই পাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাথ নির্মাণ এবং প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে।

এছাড়া মহানগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড় হতে টিকাপাড়া হয়ে নর্দানের মোড় পর্যন্ত সড়ক ও ড্রেনের নির্মান করা চলছে। ৪নং ওয়ার্ডের বুলুনপুর রেন্টুর খড়ির আড়ৎ হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক হয়ে ঢালুর মোড় পর্যন্ত এবং কোর্ট হতে পশ্চিম শহরতলী ক্লাব পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলমান। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ৩.৫৩২ কিলোমিটার সড়কটির কাজের উদ্বোধন করেন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত অযান্ত্রিক লেনসহ চারলেন সড়ক ও রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। ৩.৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ৮০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। উভয়পাশে ২২ ফুট করে ৪৪ ফুট রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের্^ ৬ ফুট করে মোট ১২ ফুট ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার ৪ ফুটের ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এএস-এমই (জেভি)।

রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মোহনপুর রেলক্রসিং এর অবশিষ্ট দুই লেন ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। এটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। ফ্লাইওভার নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অবশিষ্ট দুই লেন ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য ২০৩ মিটার প্রস্থ ফুটপাতসহ ৯.৪০ মিটার, থাকবে ৯টি স্প্যান।

এছাড়া ২৯৩১ কোটি ৬১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের সকল ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন রাস্তা নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে দ্রুততার সাথে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ নতুন বিলসিমলা বন্ধগেট রেল ক্রসিং হতে সিটি হাট পর্যন্ত, ভদ্রা রেল ক্রসিং হতে নওদাপাড়া নতুন বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এবং তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক, সড়ক বিভক্তিকরণ ও ফুটপাথ নির্মাণ কাজে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সহসা উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সড়ক ৪ লেন-এ উন্নীত হবে। প্রকল্পের আওতায় সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু মুরাল নির্মিত হচ্ছে।

মহানগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণে ইতিমধ্যে নক্সা প্রণয়ন কাজে পরামর্শক নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানসমূহ মাঠ পর্যায়ে জরিপ কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গণশোচাগার নির্মাণ, ফুটওভার ব্রীজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মহানগরীর সিলিকন সিটিতে আন্তর্জাতিক মানের একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। ৪টি ওয়ার্ড কার্যালয়-কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ কাজে নক্সা প্রণয়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে। নির্ধারিত মেয়াদ জুন, ২০২৪ এর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহানগরীকে নতুন রূপে দেখা যাবে।

প্রান্তিক পর্যায়ে নাগরিক সুবিধা প্রদানে ১৪ হাজার মিটার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৭৭টি টিউবয়েল ও টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয়মূল্য ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৫০ হাজার ৮২০ টাকা। উপকার ভোগী পরিবারের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৬৬টি। সি.ডি.সির সদস্যের মাঝে ৬ কোটি ৮০ লাখ ১২ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে কমিউনিটি হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ফান্ড হতে ১০০টি পরিবারকে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ১৪ হাজার ৯০০ মিটার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। স্থাপন করা হবে ৭২টি টিউবয়েল ও টয়লেট। ব্যবসা, সহায়তা, কিশোরী সহায়ত উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনা সহায়তা, ফুড বাস্টেক বাদ ৮৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা বিতরণ করা হবে। উপকার ভোগী সংখ্যা ১৬০০ পরিবার। ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা প্রদান করা হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris