শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

আমরা ঋণ নেবো না, ঋণ দেবো : অর্থমন্ত্রী

Paris
Update : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১

এফএনএস : অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দেশ ভালো করছে। সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। ভারতসহ অন্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঋণ দেওয়ার সময় এসে গেছে। আমরা ঋণ নেবো না, ঋণ দেবো। গতকাল শুক্রবার বাজেট পরবর্তী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে, গত বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বেশিদিন থাকবে না। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাবো। আমরা এর আগে যা বলেছি তাই করেছি এবারও করে দেখাবো। তিনি আরো বলেন, ৭ দশমিক ২ অর্জন করবো। সারা বিশ্ব যখন নিচের দিকে যাচ্ছে আমরা উপরের দিকে যাচ্ছি। আমরা যা বলি তাই করি। জিডিপি প্রবৃদ্ধিও অর্জন করে দেখাবো। আমারা সারা পৃথিবীতে আলোচনার বিষয়- আপনারা মানেন আর না মানেন। আমাদের ডেট টু জিডিপি ৪০ এর নিচে। সময় যত যাচ্ছে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়ছে।

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ী বান্ধব। আমি মনে করি, যে বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন।

আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবেন? সেজন্য আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা “মেড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগ লাইনটা ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যেগুলোকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বাজেটে যা দেখেছেন সেটাই যে থাকবে তা নয়, আমরা কিছু ফ্লেক্সিবল থাকব।

আমরা আরও পরিবর্তন করব, কখনো বাড়াবো না। আমরা সবসময় প্রয়োজনে ট্যাক্স, ভ্যাট কমাবো। কালো টাকার সুযোগ না রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কালো টাকা নিয়ে আমি কখনো কথা বলিনি। আমাদের বাজেটে আমরা যেই প্রিভিশনটি রেখেছিলাম তা হলো অপ্রদর্শিত আয়। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, আর অপ্রদর্শিত টাকাটা আমাদের সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়।

ট্যাক্সের টার্গেট করা হয় ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ। এটা অনেক অন্যায় করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সাথে। এখানে কোনো একসময় ছিল সুপার ইনকাম ট্যাক্স, যারা বেশি ইনকাম করবে তাদের আরও বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। অথচ উল্টোটা হওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, যারা সীমিত সম্পদকে এক্সপ্লয়েড করে ম্যাক্সিমাম আয় করবে তাদেরকে বেশি করে সুযোগ করে দেয়া উচিত ছিল। সেটা না করে যারা বেশি আয় করেছিল তাদের আরও বেশি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটা ঠিক না। সেজন্য আমরা এই বিষয়গুলো দেখে যতটা সম্ভব হয়েছে এই বাজেটে খোলামেলাভাবে সুন্দর ও সহজ করে আরও সার্বজনীন করার চেষ্টা করেছি।

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে কর ছাড়ের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আইনটিকে আমরা সহজ করব। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, ট্যাক্স পেয়ারদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রেভিনিউ জেনারেশন অনেক বৃদ্ধি পাবে। রেভিনিউ জেনারেশন বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল।

এমনকি আমেরিকায়ও কোনো একসময় ৭৫ শতাংশ ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল, সেটা এখন নেই। বেশি করে ট্যাক্স আদায় করা যায় কি না সেটি সবাই চেষ্টা করেছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি যদি আমরা রেভিনিউয়ের হার আস্তে আস্তে কমাই, তাহলে আমাদের কালেকশন বাড়বে। আমরা যে কর কমালাম, আমরা বিশ্বাস করি ‘উই উইল বি উইনার’। করের হার কমানো হয়েছে, আশা করি আমাদের রেভিনিউ কালেকশন আরও বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ী যারা বলছে ব্যবসায়ীবান্ধব বাজেট করার কথা।

ব্যবসায়ী শব্দটি ফ্লেক্সিবল জব, এটাকে ফিক্সড করে রাখা যাবে না। প্রত্যেক সময় মানুষের চাহিদার পরিবর্তন হয়। চাহিদা পূরণে ব্যবসায়ীদেরও পরিবর্তন আসে। তাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পরিবর্তন আসে। সুতরাং এটা কখনো ফিক্স রাখা যাবে না। আমাদের সিচুয়েশন কী ডিমান্ড করে, সারা বিশ্ব কী করছে, সেটি দেখতে হবে। উন্নত বিশ্ব যদি পিছিয়ে পড়ে, তাহলে আমরা কিন্তু এগুতে পারব না। কারণ উন্নত বিশ্বের মাধ্যমে কিন্তু আমরা সমৃদ্ধ। আজকে মার্কিন ইকোনমি এটাই আমাদের শেখায়, আমরা একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত।

করোনা মহামারির প্রভাবে নতুন করে সৃষ্ট দরিদ্র ও দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাওয়া জনগোষ্ঠীর পূর্ণাঙ্গ হিসাব সরকারের কাছে নেই। তাদের পূর্ণাঙ্গ হিসাব পেলে এসব মানুষের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বিআইডিএস (বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কিছু কাজ করেছে। সম্ভবত তাদের হিসাবে এই হার ২৬ শতাংশ। আমরা এখনও এটার পূর্ণ মাত্রার হিসাব পাইনি। বিবিএস-ও (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) এটা নিয়ে কাজ করছে। বিবিএস যখন করবে তখন আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন হয়। ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসে। সুতরাং, বাজেটে যা দিয়েছি সেটা ফিক্সড রাখা যাবে না। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, যারা করদাতা, তাদের যদি আমরা এই অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। আমরা মনে করি, কর হার কমালে আদায়ের পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়বে। কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রাইভেট সেক্টরকে আমাদের পুরো ইকোনমিক সিস্টেমের ড্রাইভিং সিটে বসাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের সহায়তা দিতে হবে তাদের বসার জন্য। তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয়বারের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এবারের বাজেটে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। বাজেটে সঙ্গত কারণেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থবছরের পুরো সময় জুড়েই থাকবে সরকারের নানান ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris