শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

করোনার ২য় ঢেউয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ

Paris
Update : শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : সরকার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। করোনা মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে বর্তমান ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ২৩ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রফতানি বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্স আহরণে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে শিল্প-কারখানা চালু রেখে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা এবং মনিটরিংয়ের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ গরিব পরিবারকে আড়াই হাজার টাকার দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। ঈদের আগেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারের হাতে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসাবে ওই অর্থ পৌঁছে দেয়া হবে। পাশাপাশি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পখাতে চলমান ঋণ সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সাথে দেশের অর্থনীতির প্রাণ ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি মানের শিল্প খাতে গতি সঞ্চার করতে নীতিমালা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে মানুষের জীবন বাঁচাতে এখন সারাদেশ লকডাউনে রয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে অর্থনীতি সচল রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয়। ঈদ সামনে রেখে এই সময়ে প্রতি বছরই অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হয়। চাঙ্গা হয় সামগ্রিক অর্থনীতি। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে ঈদ বাণিজ্যে ধস নামে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে এবারও বেচাকেনায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজের পরিসর বৃদ্ধি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

মূলত গত বছরের শেষের দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ বাড়তে থাকলেই প্রধানন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ওই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আর্থিক প্রণোদনা ও বাস্তবায়নে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়। ওই প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দারিদ্র্য খাত সুরক্ষাসহ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ১৩ দফা সুপারিশ এসেছে। পাশাপাশি দ্রুত প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আস্থাহীনতাসহ ৫টি বড় বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- প্যাকেজ বাস্তবায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু ও বিলম্বে বাস্তবায়নের কারণ শনাক্ত, রফতানি খাতে নজর ও শ্রমিকদের সহায়তা প্রদান করা।

সূত্র জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত করতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং প্যাকেজ দ্রুত বাস্তবায়নে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে- প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি স্বাধীন (তৃতীয় পক্ষ দিয়ে) মূল্যায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাকে (এসএমই) আরো সহায়তা দেয়া, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্যাকেজের সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। তাছাড়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদর ঋণের অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত, এসএমই খাতে প্যাকেজের অর্থ দ্রুত ছাড় ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এসএমই খাতে নিয়ে আসা। একই সঙ্গে নতুন গরিব হওয়াসহ দরিদ্র মানুষকে সহায়তা করতে দেশব্যাপী ওএমএস কর্মসূচী চালু. কৃষিতে আগ্রহ বাড়াতে ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা ও প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ করা। মূলত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হলে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দ্রুত ছাড় করা জরুরি।

সূত্র আরো জানায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন। নতুন প্যাকেজ আরো সুপরিকল্পিতভাবে তৈরির কথা বলা হয়েছে। প্যাকেজে যুক্ত করা হচ্ছে নতুন প্রণোদনা। পাশাপাশি চলমান কয়েকটি প্যাকেজের গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের আওতা বাড়ানো এবং বাস্তবায়ন কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন প্রণোদনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প ও সেবা খাত, গ্রামীণ অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের সুবিধা সম্প্রসারণে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কৌশল নতুন করে সাজানো হচ্ছে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, করোনার শুরুতে যারা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পায়নি, পরের বছরগুলোতে সেসব গ্রাহক ঋণসুবিধা নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে সরকারের সুদ ভর্তুকি সুবিধা কোন গ্রাহক একবারই পাবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রণোদনার সুবিধা পৌঁছানোর বিষয়ে এবার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দু’দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণের অর্ধেকও ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিতরণ করতে পারেনি। ফলে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতটি করোনার আঘাত মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় প্যাকেজটি বাস্তবায়নে এনজিওদের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কাছে সুবিধা পৌঁছানোর জন্য এনজিও ফাউন্ডেশন, এসএমই ফাউন্ডেশন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনকে (পিকেএসএফ) অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ খাতে প্রণোদনার যে অর্থ বিতরণ অবশিষ্ট রয়েছে, তা ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ওসব সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। বিতরণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমে সকল ব্যাংকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হবে। সিএমএসএমই খাতে চলতি মূলধনে জোগান দিতে গত এপ্রিল মাসে ঘোষিত এই প্যাকেজের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, যার ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি দেবে। বাকি ৪ শতাংশ সুদ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য বাজেটে পিকেএসএফ, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়, তার এক হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। বাকি এক হাজার কোটি টাকা এ মাসেই ছাড় করে দ্রুত মাঠপর্যায়ে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদেশফেরত বেকারসহ অন্যদের ছোট ছোট ব্যবসা শুরুর জন্য এই অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। আর নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যে ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম নেয়া হয়, তাও ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি।

সেজন্য জেলে, কামার, কুমার, তাঁতি, সবজি, মুদি ব্যবসায়ীসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে ব্যবসা ও উৎপাদনে অর্থায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রেও এনজিওদের সম্পৃক্ত করা হবে। তাছাড়া রফতানিমুখী খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ ঋণ পরিশোধের সময় ও গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। করোনার প্রভাব মোকাবেলায় দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) দ্রুত প্রণোদনা ঋণ দিতে এ প্যাকেজটি তৈরি করা হচ্ছে। সেজন্য ঋণ নীতিমালাও প্রায় চূড়ান্ত। এ খাতে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হতে পারে।

অন্যদিকে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান জানান, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর ৪ শতাংশ ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ঋণ সুবিধা নিয়ে পুনরুদ্ধার হয়েছে আর ২৯ শতাংশ হতে পারেনি। এজন্য প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে এটি কার্যকর হবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার জানান, দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সুপারিশের ভিত্তিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। করোনায় দু’ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রথম স্বাস্থ্য খাতের ও দ্বিতীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি। স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি প্রতিদিনই প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব বের করতে আরো সময় লাগবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris