সোমবার

২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বেপরোয়া গতির কারণেই প্রাণ হারালেন ১৭ জন, বাসচালক গ্রেপ্তার

Paris
Update : রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া গতির কারণেই রাজশাহীর কাটাখালিতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালি থানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নারী ও শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। রাস্তার পাশে কাটাখালি থানার সিটিটিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশের গাছতলায় আগে থেকেই একটি সাদা রঙয়ের লেগুনা বা হিউম্যান হলার (রাজ মেট্রো- হ-১১-০২১১) দাঁড়িয়ে ছিল। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে বাঁশ নিয়ে একটি ভ্যান রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। পেছন থেকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৭০৬৬) ভ্যানটিকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে।

ওই সময় হানিফ পরিবহনের দ্রুতগামী একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো ট-১৫-৩৮১০) চলে এলে মাইক্রোবাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ছিটকে গিয়ে বাসটি মহাসড়ক থেকে নেমে গিয়ে গাছের সঙ্গে আটকে যায়। অন্যদিকে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার গ্যাস ফেটে আগুন ধরে যায়। মাইক্রোবাস থেকে সে আগুন পাশে দাঁড়ানো লেগুনাতে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রশিদ জানান, বেপরোয়া গতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটিতে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার গ্যাস ফেটে আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসের চালকসহ সবাই মারা যান। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর ছয়জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন দমকলকর্মীরা। হাসপাতালে ছয়জনই মারা যান।

পরে নারী ও শিশুসহ ১১ জনের অঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয় মাইক্রোবাসটি থেকে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছেন। নিহতরা হলেন, উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের সালাহউদ্দিন (৩৮), তার স্ত্রী সামসুন্নাহার (৩২), শ্যালিকা কামরুন্নাহার (২৫), ছেলে সাজিদ (১০) ও মেয়ে সাবাহ খাতুন (৩), রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় মহাজিদপুর গ্রামের ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫), মেয়ে সুমাইয়া (৭) ও সাবিহা (৩), একই ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের সাইদুর রহমান (৪৫), পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়ার মোটরসাইকেল মেকার তাজুল ইসলাম ভুট্টো (৪০), স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩৫), ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইয়ামিন (১৪), রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোকলেছার রহমান (৪০), স্ত্রী পারভীন বেগম (৩৫) ও ছেলে পাভেল মিয়া (১৮)।

তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি: এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, এরমধ্যে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। প্রতিবেদন দাখিল করতে কোন সময়সীমা দেয়া হয়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষে করে প্রতিবেদন দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় হতাহতদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় মো. আবদুর রহিম (৩৫) নামের হানিফ পরিবহনের বাসচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীর বেলপুকুর থানার মাহিন্দ্র বাইপাস এলাকা থেকে দুপুর ২টায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার রহিম পুঠিয়ার বাড়ইপাড়া গ্রামের মো. ফজলুল হকের ছেলে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর কাটাখালি থানার এসআই নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। তবে দুর্ঘটনার পর থেকেই চালক পলাতক ছিল।

দুর্ঘটনার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাতে থাকে পুলিশ। পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার আসামি চালক আবদুর রহিমকে এক বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনের লাশ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris