শাহানুর রহমান রানা : দৈনিক আমাদের রাজশাহী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আফজাল হোসেন তার সহকর্মীদের সাথে নিয়ে যান রাজশাহীর ডিআইজি আব্দুল বাতেনকে পত্রিকার এগারো বছর পূর্তি ও একযুগে পদার্পণে শুভেচ্ছা বিনিময় ও সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য। পত্রিকার এগারো বছর পূর্তি ও একযুগে পদার্পণ উপলক্ষে সম্পাদক সৌজন্য সাক্ষাতকালে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ডিআইজি আব্দুল বাতেনকে। তার দপ্তরে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ও চা চক্রের এক ফাঁকে আলাপচারিতায় ডিআইজি মহোদয় বলেন, ‘আমাদের কাছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনিভাবে প্রিন্ট মিডিয়াও সমগুরুত্বপূর্ণ।
তবে যে কথাটি না বললেই নয়, সেটি হলো আমার কাছে স্থানীয় পত্রিকাগুলোর গুরুত্ব ও কদর একটু বেশি। স্থানীয় পত্রিকাগুলো আমার কাছে তথ্য-উপাত্ত’র ভান্ডার’। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ডিআইজি কার্যালয় মানেই উক্ত বিভাগীয় শহরের পুলিশের প্রধান দ্বার। একজন ডিআইজি মানেই উক্ত বিভাগের পুলিশ প্রধান। ডিআইজি আব্দুল বাতেন আলাপচারিতায় জানান, আমাদের এখানে রয়েছে দক্ষ আইসিটি ইউনিট।
অন্যান্য দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি এই শাখায় কর্মরতরা স্থানীয় পত্রিকায় পুলিশ ও অপরাধ রিলেটেড প্রতিবেদনগুলো প্রিন্ট করে আমার টেবিলে ফাইল আকারে প্রাত্যহিক ভিত্তিতে জমা দেন। সেগুলো আমি নিয়মিত অবজার্ব করি। কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি থাকার কারণে উক্ত ফাইলগুলো ছাড়াও আমি নিজেই স্থানীয় পত্রিকাগুলো নিয়মিত দেখি। দাপ্তরিক কাজের সহায়তার জন্য মানসম্পন্ন স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে আমি সর্বপ্রথম গুরুত্ব দিয়ে থাকি বলে জানান ডিআইজি আব্দুল বাতেন। যার কারণে, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মানসম্পন্ন একাধিক পত্রিকা নিয়মিত এই কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তার মধ্যে দৈনিক আমাদের রাজশাহীও রয়েছে।
অন্যান্য গণমাধ্যমের চাইতে কেন তিনি স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে অধিক গুরুত দেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, জাতীয় পত্রিকা কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চাইতে স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে লোকাল অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতা বিষয়ক ইনফরমেটিভ সংবাদের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্থানীয় অপরাধ বিষয়ক ও পুলিশি বিষয়াবলি নিয়ে সংবাদের আধিক্যতা থাকায় সেগুলো আমাদের দাপ্তরিক কাজে অনেক সহায়ক হয়ে থাকে। পুলিশি বিষয় ছাড়াও যে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বিষয়াবলী নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হলে সেটিকে অতিরিক্ত ‘ক্লু’ হিসেবে আমরা ব্যবহার করে
উক্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ড সম্পর্কে সরেজমিনে তদন্ত করতে অনেকটাই সহায়ক হিসেবে কাজ করে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি। যার কারণে, জাতীয় পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চাইতে কখনো কখনো স্থানীয় পত্রিকার গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেকটাই বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের বিষয়ে তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমি তখন কর্মরত ছিলাম চুয়াডাঙ্গা জেলার এসপি হিসেবে। সেখান থেকে প্রকাশিত দৈনিক মাথাভাঙ্গা’ নামক একটি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তদন্তাধিন একটি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য-উপাত্ত ঐ প্রতিবেদনে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। যদিওবা আমাদের রয়েছিল নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
কিন্তু দাপ্তরিক অন্যান্য কাজের জন্য মাঝে-মধ্যে কখনো কখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ‘ক্লু’ পেতে আমাদের কিছুটা সময় লাগে। পত্রিকায় উক্ত অপরাধটি নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা হয়েছিল সেটি আমাদের ইন্টেলিজেন্স শাখার দায়িত্বরতরা কাজের চাপে পরিপূর্ণভাবে সামনে আনতে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছিলেন। যদিওবা ঐসময় তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেনো তারা পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়টি অবগত হতে পারেন নি। প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্তকে অতিরিক্ত ‘ক্লু’ হিসেবে ধরে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকি এবং একপর্যায়ে অপরাধটির সকল বিষয়াবলী উৎঘাটন করতে আমরা সক্ষম হই’।
এরপর থেকে আমি যখন যেখানে দায়িত্বপালন করেছি তখন ঐ এলাকার স্থানীয় পত্রিকাগুলো ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিকভাবে নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করি। তিনি স্থানীয় পত্রিকা সম্পর্কে আরো বলেন, জাতীয় পত্রিকাগুলো আঞ্চলিক বিষয়াবলীকে গুরুত্ব দিলেও অসংখ্য প্রতিবেদনের চাপে কখনো কখনো ছোটখাটো বিষয়গুলোকে চাইলেও যথার্থভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পায় না। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো লোকালি ফোকাসে পরিপূর্ণ বিধায় আমাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো সহায়ক হিসেবে কাজে লাগে।
তিনি স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করার প্রতি আহ্বান জানান। কারণ, তথ্যবহুল ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ যেমন পাঠককুলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেশি পায়, ঠিক তেমনিভাবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সেটির মূল্যও যথেষ্ট হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে দৈনিক আমাদের রাজশাহী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, আমরা বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ পরিবেশনে বদ্ধপরিকর। পাঠকের জন্য মুখরোচক সংবাদ নয়; আমরা সর্বদা চেষ্টা করি ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকে কিংবা অপরাধ প্রবণতার সত্য ঘটনাবলীকে পরিচ্ছন্নভাবে প্রকাশ করার।
রাজশাহী রেঞ্জে ডিআইজি আব্দুল বাতেন (বিপিএম, পিপিএম) যোগদান করেন গত ১৪-৯-২০২০ ইং তারিখে। যোগদানের পর থেকেই তিনি তাঁর কর্মদক্ষতায় অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের অভিপ্রায়ে এগিয়ে চলেছেন সরকারি দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ের অন্তর্গত জেলা রয়েছে ৮টি আর সার্কেল অফিস রয়েছে ১৮টি। থানা রয়েছে সর্বমোট ৭১টি।