মঙ্গলবার

৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মূল্যস্ফীতির চাপে অর্ধেক কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

Paris
Update : রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : মূল্যস্ফীতির চাপে অর্ধেকে নেমে এসেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বেশ কয়েকবছর ধরেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। তাতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল সরকারের ঋণের বোঝা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেও খরচ বেড়েছে। তাতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে তার প্রভাব পড়ছে। আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ওই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। সবশেষ জানুয়ারি মাসে ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। গতবছরের জানুয়ারিতে ওই বিক্রির পরিমাণ ছিল দ্বিগুণেরও বেশি ৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

একইসঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক এ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরো কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও সঞ্চয়পত্র বাড়তে থাকে বিক্রি। সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয় সেজন্য বিক্রি কমাতে গতবছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয়া হয়। তারপরও বিক্রি বাড়ছিল। তবে গত কয়েকমাস ধরে বিক্রি বেশ কমেছে।

সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে যে টাকার সঞ্চয়পত্র সরকার বিক্রি করেছে, সুদ-আসল পরিশোধে সরকারকে তার চেয়ে ৪৩৬ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে সরকার তার কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ ৪৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। অথচ ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও সুদ-আসল পরিশোধের পর সরকারের কোষাগারে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা ছিল, যাকে বলা হয় নিট বিক্রি। সরকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছে।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই খাত থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূল বাজেটে ওই খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজটে ওই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। তবে বছর শেষে দেখা যায় সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় ৩ গুণ। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়।

তার মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। ওই হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য গতবছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে দেয়।

সূত্র আরো জানায়, সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত এখনো ওই হারে পাওয়া যাবে। তার আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris