মঙ্গলবার

৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে ধুলিকণার সাথে ড্রপলেট মিশে ঘনকুয়াশার বলয়

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২০

আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, সময়টা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক

শাহানুর রহমান রানা : সারাদেশেই কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি কমে গেছে বাতাসের গতি। এতে বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে আদ্রতা মিশে ঘনকুয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটাও অন্যতম কারণ। এছাড়াও রাজশাহীর বাতাসে ধুলিকনা বা ডাস্ট বেশি থাকার কারণে রাজশাহী নগরীজুড়ে ঘনকুয়াশার মতো পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানান রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জৈষ্ঠ্য পর্যবেক্ষক শহীদুল্লাহ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে একটি লঘুচাপ প্রবাহিত হচ্ছে। রাজশাহীর বর্তমান আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের রাজশাহীকে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে যে কুয়াশা বা ফগ বিদ্যমান আছে সেটি প্রকৃত পক্ষে কোন কুয়াশা নয়।

সার্ফেস থেকে আপার পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে ধুলিকনা থাকার কারণে বায়ুমন্ডলের ড্রপলেটগুলো নিচে পড়তে না পারায় সেটি প্রতি মূহুর্তে ঘণ হচ্ছে। রাজশাহীর বাতাসে ধুলিকনা বা ডাস্টের পরিমাণটা অত্যাধিক বেশি বলে নগরীজুড়ে এমন ঘণকুয়াশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ড্রপলেটগুলো ধুলিকণার উপর ভর করে থাকছে সেটি নিচে নামতে পারছে না কিংবা অন্যত্র প্রবাহিত হতে পারছেনা। যার কারণে এর ঘনত্ব অনেক বেশি মনে হচ্ছে। গতকাল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬.০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তার আগের দিন ৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৬.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর ঐদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

গতকাল সকাল ৬ টায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৫ আর তার আগের দিন ছিল ৯৯ শতাংশ অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ আর তার আগের দিন ছিল ৯৪ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, রাজশাহী শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলাতেও বাতাস নেই বললেই চলে। বাতাস নেই বলেই বায়ুমন্ডলের ড্রপলেটগুলো এমন ঘনত্ব সৃষ্টি করছে। বিদেশে এই সময়টাকে বলা হয় দুর্যোগকালিন সময়। তিনি আরো জানান, শীতের প্রকৃত কুয়াশাতে মানবদেহে কিংবা শস্যক্ষেতে তেমন কোন ক্ষতিসাধন না হলেও এই পরিস্থিতিতে মানুষের দেহে ও শস্যক্ষেতে ক্ষতি হয় পর্যাপ্ত। তাই এই সময়টা প্রতিটি মানুষকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

কারণ, ধুলিকনা বা ডাস্টের সাথে মিশে থাকা বায়ুমন্ডলের ড্রপলেটগুলো মানুষের নাক দিয়ে সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করলে সেটি মানবদেহের জন্য অনেকটাই বিপদগামী হতে পারে। মানুষের দেহে যদি হিউমেনিটি কম থাকে তবে করোনার চাইতেও ধুলিকণার এই ড্রপলেটগুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে বলেও তিনি জানান।

এদিকে, রাজশাহী শহরের প্রতিটি স্থানেই সেই ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশাতে আচ্ছন্ন থাকছে। দুপুরের দিকে সূর্যের কারণে কিছুটা হ্রাস পেলেও আবার সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহুর্ত থেকে সারারাত কুয়াশার চাদরে আবৃত্ত থাকছে নগরী। ঘন কুয়াশাতে আচ্ছন্ন থাকলেও ঠান্ডার প্রকোপ খুব একটা না অনুভুত না হওয়ায় কুয়াশার কারণে মানুষের মাঝে ভীতি সঞ্চার হচ্ছে আগত ঠান্ডাকে নিয়ে। অগ্রহায়ণ মাসের আজ ২৩ তারিখ। কিন্তু, প্রকৃতিতে তেমন ভাবে এখনো ঠান্ডার প্রকোপতা তেমন লক্ষনীয় না হলেও নগরীর বিভিন্ন স্থানেই শীতের ভাপা পিটা ও ধুপিসহ অন্যান্য পিঠা তৈরির আমেজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যথেষ্ট পরিমাণে ঘন কুয়াশার কারণে নগরীর রাস্তাসহ হাইওয়ে সড়কগুলোতে গাড়ি চলাচলেও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন চালকরা।

রাজশাহীর চিরাচরিত আবহাওয়ার বিবেচনায় এই অগ্রহায়ণ মাসে পরিপূর্ণ শীত না পড়লেও শীতের প্রকোপতা যথেষ্ট পরিমাণে আবির্ভূত হবার কথা থাকলেও নগরীজুড়ে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি আর নগরীর উপকুলে ইটভাটা থেকে নির্গত হওয়া ক্ষতিকর ধোঁয়ার কারণে নগরীর সর্বত্র বাতাসের ডাস্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রকৃত কুয়াশার বিপরীতে কুয়াশাতুল্য এমন ঘন পরিস্থিতির আবহ তৈরি হয়েছে যা সকলের জন্যই ক্ষতিকর বলে জানান পর্যবেক্ষকগণ।

রাজশাহী বক্ষ্যব্যদী হাসপাতালের প্রাক্তন সুপারিনটেনডেন্ট ডা. আমির হোসেন এবিষয়ে বলেন, বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চলে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে সেটি মানবদেহের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। বিশেষ করে এ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিজ, হাপানি কিংবা ফুসফুসজনিত রোগীদের জন্য এমন ধরনের ধুলিকণা মিশ্রিত ড্রপলেটযুক্ত কুয়াশা অনেকটাই বিপদগামী। একই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন সিনিয়র কনসালটেন্ড মাসুদুর রহমান বলেন, এই ধরনের আবহাওয়া শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য যেমন ভীতিকর ঠিক তেমনিভাবে করোনাকালীন সময়ের জন্য অনেকটাই বিপদগামী অবস্থা। মাস্ক দিয়ে মুখ ও নাক না ঢেকে এইসময় বাইরে বের হওয়াটা স্বাভাবিক ও সুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। এদিকে, শিশু বিশেষজ্ঞ ও রামেক এর অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, এই ধরনের আবহাওয়া বড়দের চাইতে শিশু ও কিশোর বাচ্চাদের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। এই ধরনের ভারি কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া শিশুদেরকে নানারকম ঠান্ডাজনিত রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত করতে পারে অতিসহসায়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris