বৃহস্পতিবার

২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
মোহনপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত, ২ জন আহত ইউনিয়নের সম্পাদক মাহাতাবের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রাজশাহীর বাস শ্রমিকদের রাজশাহী নগরীতে পলাতক আসামির অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ বাঘায় স্ত্রীর লাঠির আঘাতে আহত শিক্ষকের মৃত্যু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে জনপ্রশাসনে চিঠি শিক্ষামন্ত্রীর জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে : গবেষণা গোপন নথিতে উঠে এল ইরানি কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন-হত্যার ঘটনা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি আজ মহান মে দিবস তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো দেশবাসী

সিরাজগঞ্জে ছাত্রকে গুলি করা সেই ডাক্তার শিক্ষকের পিস্তলটি অবৈধ, মামলা দায়ের

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে আরাফাত আমিন তমাল (২২) নামে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার ঘটনায় শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। এ ছাড়াও তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি অবৈধ বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত সোমবার রাত সোয়া ১২টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানা পুলিশের ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম। এর আগে, সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে আটক করে মেডিকেল কলেজ থেকে থানায় আনে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, আমার ছেলে আরাফাত আমিন তমাল। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। গত সোমবার মেডিকেল কলেজের একাডেমি ভবনের চতুর্থ তলায় ডা. সামাউন নূরের কক্ষে পরীক্ষা চলছিল। এ সময় আমার ছেলের বন্ধু আক্তারুজ্জামান বিকাল ৪টার দিকে ফোন করে বলে যে, আপনি দ্রুত সিরাজগঞ্জ চলে আসেন। তমাল হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে বগুড়া থেকে রওনা হয়ে সিরাজগঞ্জ এসে আমার ছেলেকে সিরাজগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে সংকটাপূর্ণ অবস্থায় দেখি। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার ছেলে তমালের ক্লাসমেটসহ তার সহপাঠীরা জানান, ওই শিক্ষক কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের লেকচারার। তিনি সর্বদাই শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। তিনি সব সময় ব্যাগে অস্ত্র নিয়ে এসে ক্লাসে টেবিলের ওপর রেখে লেকচার দেন। ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে আপত্তি তুললে তিনি তাদের ভয়ভীতি ও গুলি করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। গত সোমবার পরীক্ষা চলাকালীন বিকাল ৩টার দিকে ওই শিক্ষক হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অহেতুক বকাবকি করেন। বকাবকির একপর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে আমার ছেলেকে হত্যার করার উদ্দেশে গুলি করলে গুলিটি তার ডান পায়ের ঊরুর ওপরের অংশ লেগে গুরুতর জখম হয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সহপাঠীরা আমার ছেলেকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে চাইলে ওই শিক্ষক অস্ত্র উঁচিয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে বলে যে, তোরা যদি ওকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাস তাহলে তোদের সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলবো। পরে তার বন্ধুরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে সিরাজগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি ঘটনাস্থলে এসে ওই শিক্ষককে ও অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর থানা ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তার (শিক্ষক) কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি অবৈধ। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা হবে।
নানা অভিযোগ : শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, অস্ত্র নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এবং তাকে বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কলেজ প্রশাসন। গত সোমবার বিকেলে পিস্তল নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে পিস্তল বের করে গুলি করেন। এতে আরাফাত আমিন তমাল নামে এক শিক্ষার্থীর পায়ে গুলি লাগে। লাবিবা নামে অপর এক শিক্ষার্থীর মাথার পাশ দিয়ে গুলি চলে যায়। ঘটনার পর ওই শিক্ষককে আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে এবং শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তিনি শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ উগ্র মস্তিষ্কের মানুষ। গত সোমবার বিকেলে তিনি শ্রেণিকক্ষে এসে শিক্ষার্থীদের ভাইভা নিচ্ছিলেন। এ সময় আমার একটি পোষা পাখি আছে- এ কথা বলেই তার ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করেন। পিস্তল দেখিয়ে বলেন, এটাই আমার ‘পোষা পাখি।’ পিস্তলটি নড়াচড়া করতেই গুলি বের হয়ে তমালের পায়ে লাগে। আরেক শিক্ষার্থী লাবিবার কানের পাশ দিয়ে যায়। কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া ও লাবিবা বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ ছাত্রীদেরও উত্ত্যক্ত করতেন। আপত্তিকর ইশারা করতেন। ভয়ভীতিও প্রদর্শন করেন। কলেজ ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন তিনি। এসব বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন তার সহকর্মী শিক্ষকরাও। কলেজের ফরেনসিক ও মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হিল কাফিসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ এর আগেও কলেজে পিস্তল নিয়ে এসেছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর তাকে সতর্ক করায় তিনি উল্টো ভয় দেখিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও হোস্টেলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদক অফার করারও অভিযোগ রয়েছে। তাকে বেশ কয়েকবার বদলির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কলেজ অধ্যক্ষ। ডিজি অফিসকে ম্যানেজ করে তিনি স্বপদে বহাল থাকেন। রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কলেজের অধ্যক্ষ আমিরুল হোসেন চৌধুরীও। তিনি বলেন, ওই শিক্ষক এক ধরনের সাইকো। তার মেজাজ সবসময় চড়া থাকে। মাঝে মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার খারাপ আচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়। একাধিকবার তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। তাকে বদলির জন্য কয়েক দফায় চেষ্টা করেছি। অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও বদলি করাতে পারিনি। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ছাত্রকে গুলি করার ঘটনায় ডা. রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি কীভাবে কলেজ ক্যাম্পাসে পিস্তল নিয়ে ঢুকলেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রায়হান শরীফের কাছ থেকে ৭.৫ বোরের একটি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। পিস্তলটির কোনো লাইসেন্স নেই। রায়হান শরীফকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রের পায়ে গুলি করেন শিক্ষক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নামে মামলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকালে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত ডা. রায়হান শরীফ কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কমিটিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।-এফএনএস

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris