এফএনএস : চীন তাদের নাগরিকদের বিদেশি গুপ্তচর সংস্থার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সতর্ক করেছে। যারা ‘বিদেশি সুন্দরী’ নারীদের দিয়ে মানুষকে প্রলুব্ধ করে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। দেশটির রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় বলেছে, লি সি নামে এক চীনা ব্যক্তি বিদেশে ভ্রমণের সময় একটি নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন এবং সেখানে বিদেশি গুপ্তচরদের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের ওয়েচ্যাট পোস্টের শিরোনাম ছিল, ‘সৌন্দর্যের শিকার করছেন? আপনি নিজেই সেই শিকার হতে পারেন।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের সতর্কবার্তা চীনের নেতাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় চীনের গোয়েন্দা এবং গোপন পুলিশ সংস্থা হিসেবে কাজ করে। তারা বিদেশি গুপ্তচরদের বিপদ সম্পর্কে নাগরিকদের মধ্যে সতর্কতা বাড়িয়েছে। তাই চীনে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে এমন ব্যক্তিদের ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে আনছে মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের শুরুতেও মন্ত্রণালয় বলেছিল, বেইজিং ব্রিটেনের বিদেশি গোয়েন্দা পরিষেবা এমআই৬-এর জন্য গুপ্তচরবৃত্তি করার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। সাম্প্রতিক সতর্কবার্তাটি আসে একটি ঘটনা ঘটার পর। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় ওয়েচ্যাটে এই ঘটনা নিয়ে পোস্ট করে নাগরিকদের সতর্ক করেছে। পোস্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড লি সি-কে একটি নাইট ক্লাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে যাওয়ার পর তাঁকে বেশ কয়েকজন সুন্দরী নারীর মধ্যে একজনকে বাছাই করতে বলা হয়েছিল। তিনিও বিদেশি গুপ্তচর সংস্থার সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন এবং এক নারীকে নিয়ে একটি রুমে যান। এর পরেই কিছু বিদেশি ঘরে ঢুকে তাঁর নগ্ন ছবি তোলা শুরু করে। ছবিগুলো প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে লি-কে ব্ল্যাকমেইল শুরু করা করেন তারা। তাঁকে তাদের গোয়েন্দা সংস্থায় যোগদানের জন্য বাধ্য করা হয় এবং বলা হয়, তিনি যোগদান না করলে ছবিগুলো প্রকাশ করে দেওয়া হবে। বিদেশি ওই গুপ্তচর সংস্থাটি লি-কে শুরু থেকেই নজরদারির মধ্যে রেখেছিল। কিন্তু লি সেটা বুঝতে পারেননি। ঘটনাটি কোথায় এবং কখন ঘটেছিল তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। লি অনুমিতভাবে একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার জন্য কাজ করতেন। লি চীনে ফিরে ভয়ে তাঁর নিজের ল্যাপটপ হস্তান্তর করে বলে মন্ত্রণালয় জানায়। মন্ত্রণালয়ের পোস্টে আরো বলা হয়েছে, ‘এভাবে প্রায় ১০ বছর ধরে ওই ল্যাপটপে ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুপ্তচর সংস্থাটির হাতে পড়ে যায়।’ লির দুঃস্বপ্ন এখানেই শেষ হয়নি। তিনি চীনে ফিরে আসার পরেও সংস্থাটি তাঁকে আরো তথ্য সরবরাহ করার জন্য ক্রমাগত বাধ্য করে আসছিল বলে মন্ত্রণালয় জানায়। শেষ পর্যন্ত লি বিদেশি গোয়েন্দাগোষ্ঠীর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পুতুলে পরিণত হয়েছিলেন এবং চীনের জাতীয় নিরাপত্তার অপরিমেয় ক্ষতি করে ফেলেছিলেন। লিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাঁকে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। “আমি মনে করি শুধু মধুর ফাঁদগুলো নয়, মানুষের দুর্বলতাগুলোকেও কাজে লাগানো হচ্ছে এ ধরনের ঘটনায়। সেটা লোভ-লালসা, অহংকার, রাগ, হতাশা বা এইরকম অনেক কিছুই হতে পারে” বলে ইয়ান চং নামে চীনের একজন অনাবাসিক ফেলো বিবিসিকে জানিয়েছেন। আগস্টে চালু হওয়ার পর থেকে চীনের মন্ত্রণালয় তাদের অফিশিয়াল ওয়েচ্যাট ঘন ঘন আপডেট করে পোস্ট করছে। গত মাসেও তারা সামরিক সরঞ্জামের ছবি তোলা নিয়ে নাগরিকদের সতর্ক করেছে। সূত্র : বিবিসি