শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সয়াবিন আমদানি-রিফাইনের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে চিঠি

Paris
Update : শনিবার, ৫ মার্চ, ২০২২

এফএনএস : আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে হঠাৎ করেই সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে রিফাইনারি কোম্পানিগুলো। ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানের কাছে এ ভোজ্যতেলের আমদানি ও রিফাইনের পরিমাণ জানতে চেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সব রিফাইনারি কোম্পানির কাছে ভোজ্যতেল বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তারা গত তিন মাসে কী পরিমাণ ইম্পোর্ট (আমদানি) করেছে, কত পরিমাণ রিফাইন (পরিশোধন) করেছে, তা কাস্টমস পেপারসহ চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তারা কত পরিমাণের ডিও/এসও দিয়েছে, কত ডেলিভারি করেছে এবং কত মজুত আছে, সেটাও জানতে চেয়েছি। সফিকুজ্জামান বলেন, আগামী সোমবার পর্যন্ত তাদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলে তেল নিয়ে তেলেসমাতি কারা করছে, তা ধরা পড়বে।

তথ্য পাওয়ার পর প্রতিটি রিফাইনারিতে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালাবে। ভোক্তা অধিদপ্তর এ কাজে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। উল্লেখ্য, দেশে সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের মজুদ ফুরিয়ে গেছে। দোকানের থরে থরে সাজানো সয়াবিনের বোতল আর দেখা যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলো সয়াবিন সরবরাহ করছে না। ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছে সেভাবেই ক্রেতাদের কাছে সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। অসহায় ক্রেতা ব্যবসায়ীর মর্জি অনুযায়ী দাম পরিশোধে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কেউ কেউ ১৬৮ টাকার বোতলজাত সয়াবিন তেল ২০০ টাকা লিটার দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাজার ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের পর থেকেই বাজারে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তারা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩১ মের পর থকে সয়াবিন এবং ৩১ ডিসেম্বর থেকে পামঅয়েল খোলা অবস্থায় বিক্রি করা যাবে না। এই সময়ের পরে সয়াবিন ও পামতেল বোতলজাত করে বিক্রি করতে হবে। একইসঙ্গে দাবি অনুযায়ী সয়াবিন ও পামতেলের দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

এই দুই কারণেই মিল-মালিকরা বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে বোতলজাত তেল সরিয়ে রেখে নিজেদের মতো নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন বিক্রি করছে। কারণ, বোতলজাত তেলের গায়ে লেখা দামের বেশি রাখার সুযোগ নাই। অপর দিকে খোলা সয়াবিন এবং পামতেলের দর নির্ধারিত করা থাকলেও বিষয়টি মনিটর করা সহজসাধ্য নয়। তাই আপাতত এই সুযোগটিই গ্রহণ করছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা এক লিটার সয়াবিন তেল ২০০ টাকায় বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অপরদিকে বাজারে সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সয়াবিন ও পামতেলের মজুত গড়ছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়টি টের পেয়ে মাঠে নেমেছে, দায়ী ব্যক্তিদের সাজা দেওয়ার সংবাদও পাওয়া যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সয়াবিন তেল মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা এবং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করার অপরাধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ‘মায়ের দোয়া স্টোর’কে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অভিযান পরিচালনা করেন প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল।

তিনিজানিয়েছেন, সেখানে ১২০-২৫ ব্যারেল তেল পাওয়া গেছে। আরও বেশি হতে পারে। তারা আবার সাধারণ মানুষের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে বিক্রি করছে। তাদের কাছে মূল্য তালিকা নেই। বিক্রির পরিমাণ খুব কম। দাম আরও বাড়লে বিক্রির পরিকল্পনা করছিল। অথচ বাজারে তেল নেই। কৃত্রিম সংকট তৈরির একটা পায়তারা তাদের ছিল। এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা আমরা সেখানে টাঙানোর ব্যবস্থা করেছি। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে সয়াবিন তেল অতিরিক্ত দামে বিক্রি ঠেকাতে যৌথ অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এদিকে রাজধানীর অনেক বাজারের এবং পাড়া মহল্লার মুদি দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব দোকানে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে, তা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের সংকটের খবর পাওয়া গেছে। কদিন ধরে এ সংকট শুরু হয়েছে, যা এখন প্রকট। ফলে অনেক দোকানে এখন প্রতি লিটার তেলের দাম চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি তেলের বাজার মৌলভীবাজারেও সয়াবিন তেলের সংকট।

সেখানে তেল কিনতে গিয়ে ফিরে আসছেন খুচরা ক্রেতারা। কারও কাছে সয়াবিন থাকলেও সেটা গোপনে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এখানকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সয়াবিন সরবরাহকারী কোনও প্রতিষ্ঠান তাদের তেল সরবরাহ দিচ্ছে না। ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) ওঠাতে পারছেন না তারা। কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ বন্ধ রাখায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা গোলাম মাওলা জানিয়েছেন, অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা কোনও তেল মজুত করিনি। কোম্পানিগুলোই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।

ফলে বাজারে অস্থিরতা কাজ করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতিও আমাদের অনুকূলে নয়। এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, তারা আগের মতোই প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ তেল সরবরাহ করছেন। পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা রমজান সামনে রেখে সয়াবিন মজুত করছেন। এজন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। কারখানায় কোনও সমস্যা নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে তারা এসেছিলেন তেলের দাম আরও বাড়ানোর বিষয়ে।

আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি- নট পসিবল (সম্ভব নয়)। সাংবাদিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের প্রশ্ন করেই শেষ করবেন না, আপনারা বাজারেও ঢুকে পড়েন। আপনারা ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। নির্দিষ্ট করে বলেন- ‘এটার বেশি দাম দেবেন না, সচেতন হোন’ ইত্যাদি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris