মঙ্গলবার

৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় জাতিসংঘ মহাসচিব

Paris
Update : শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

এফএনএস : জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় গতকাল শুক্রবার সকাল) লটে নিউইয়র্ক প্যালেসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় এই প্রশংসা করেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক কার্যক্রমের ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসকে স্বাগত জানান। জাতিসংঘ বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলোকে গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো জাতিসংঘেরও অগ্রাধিকার।

শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের উচ্চপদে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আরও বেশি সদস্য নিযুক্ত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে জাতিসংঘের সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুতেরেস এই আহ্বানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন এবং তিনি এটিকে ন্যায্য মনে করেন ও বাংলাদেশের জন্য আরও কিছু করতে চান। এ পরিপেক্ষিতে তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনের কথা ও শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের সাফল্যের গল্প রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। ড. মোমেন বলেন, একটি গতিশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

গুতেরেস বাংলাদেশের ও দেশটির সার্বিক অর্জনের ব্যাপারে এর নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদরদপ্তরে নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুক ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সহিলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে তার সরকার ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা চালু করার চিন্তা ভাবনা করছে। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মাদ সহিলের সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে ড. মোমেন বলেন, মালে ও চট্টগ্রামের মধ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ চালু করার ব্যাপারে উভয় দেশ কাজ করছে। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে ফুককে অনুরোধ জানান।
নেদারল্যান্ডের রানির সঙ্গে বৈঠক : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে তিনি নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমা, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন জুয়ান পাক, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইবরাহিম মোহামেদ সোলিহ ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে হোটেল লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেসে নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নগুয়েন জুয়ানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সোলিহ সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। গত মার্চে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করেছিলেন। এছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

প্রধানমন্ত্রীর ৫ সুপারিশ : বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি ‘স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ ফুড সিস্টেমস সামিট ২০২১’-এ গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি একইসঙ্গে একটি বৈশ্বিক জোট ও অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্যের অপচয় হ্রাসের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ার অধিকার একটি মৌলিক অধিকার, যা সকল নাগরিকের কল্যাণ ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত এবং বৈশ্বিক ব্যবস্থার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে।

৭৬তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, খাদ্য নিরাপত্তা জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসংযুক্ত। পূর্ব-রেকর্ডকৃত বক্তৃতায় ‘২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যা ১০ বিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য আরও খাদ্য উৎপাদন করা অপরিহার্য। শেখ হাসিনা তার পরামর্শে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি উন্নয়নের জন্য গবেষণা, বিনিয়োগ ও উন্নত প্রযুক্তি বিনিময়ের ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা অর্জনের জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বর্ধিত তহবিল প্রয়োজন। টেকসই নিরাপত্তা অর্জনে প্রযুক্তি শেয়ারিংসহ জলবায়ুজনিত চরম ইভেন্টগুলোর সাথে অভিযোজনের জন্য প্রতিশ্রুত তহবিল ছাড়েরও পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ শীর্ষ সম্মেলনে আয়োজনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় প্রণীত কাংলাদেশের সংবিধানে খাদ্য ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনে আমাদের জাতীয় নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনায় খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরকে একটি অন্তর্ভুক্ত হাতিয়ার হিসেবে সমন্বিত করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি-২০২০ এবং এর কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০৩০) দেশের খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে…। আমরা খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছি এবং দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘনঘন চরম আবহাওয়া-জনিত দুর্যোগ এ গতিবেগকে প্রভাবিত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বৈশ্বিক নেতা হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি আমরা সবার জন্য মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করেছি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris