শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অনেক উপাদানগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও নষ্টের আশঙ্কা

Paris
Update : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

এফএনএস : করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। যদিও করোনার দীর্ঘ ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পাঠদান কিছুটা এগিয়ে নিলেও বেশির ভাগ ব্যবহারিক ও গবেষণা ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে না থাকায় ব্যবহারিক ল্যাবগুলো খোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আর শিক্ষকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষণা চালিয়ে নিলেও সিংহভাগ শিক্ষকই করোনার ঝুঁকি এড়াতে গবেষণাগারের কাজ বন্ধ রেখেছে।

ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ল্যাবগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হচ্ছে না। আর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ার কারণে ওসব ল্যাবের অনেক যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে অকেজো হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ময়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে গবেষণার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইউজিসি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞানাগারও বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইজ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। তার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর বিজ্ঞানাগারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিও অকেজো হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনার কারণে দূর-দূরান্তের শিক্ষকরা বাড়িতে থাকায় নিয়মিত বিদ্যালয় ও কলেজে আসে না। আর যারা আসে তারাও নিয়মিতভাবে ল্যাব দেখভালের যুযোগ পায় না। আবার সব শিক্ষক ল্যাবের বিষয়গুলো বোঝেও না। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বিশ্বজুড়েই বিজ্ঞান অনুষদ বিশেষ করে জীববিজ্ঞানের বিভাগগুলোতে গবেষণা কার্যক্রমের হার অনেক বেড়েছে। যদিও এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই গবেষণাগার বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে ৩টি ব্যবহারিক ও ৬টি রিসার্চ ল্যাব রয়েছে। তাছাড়া উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) অধীন প্রতিষ্ঠিত দুটি ল্যাবসহ বেশকিছু ছোট ল্যাবও আছে।

কিন্তু গত বছরের মার্চের পর থেকে অধিকাংশ দিনই ওসব ল্যাব বন্ধ ছিল। আর দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় ল্যাবগুলোর অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি গবেষণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ও স্যাম্পল মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে কার্যক্ষমতা হারাবে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের রয়েছে দুটি গবেষণা ও ৪টি ব্যবহারিক ল্যাব। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে ফার্মেসি অনুষদের ল্যাব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ল্যাব দেখভালের জন্য কারিগরি কর্মকর্তা নিয়োজিত থাকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের ল্যাবগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় ইউভি/ভিআইএস স্পেকট্রোমিটার মেশিনটি এর কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৭ লাখ টাকা। ল্যাবের ইউপিএস কাজ করছে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় রোটারি ইভাপোরেটর ও ফ্রিজ ড্রায়ার মেশিনও নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। তাছাড়া কিছু কেমিক্যাল নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ল্যাবে ওই রকম কেমিক্যালের মধ্যে রয়েছে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, সোডিয়াম বাই কার্বনেট ইত্যাদি। ওসব উপাদান গত বছরের শুরুর দিকে কেনা হয়েছিল। ক্যাম্পাস খোলার পর নতুন করে আবার সব কিনতে হবে। সব মিলিয়ে শুধু ওই ল্যাবেই প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট হয়ে গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও একই অবস্থা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ল্যাবই কভিড-১৯ সংক্রান্ত বন্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে ল্যাবগুলো বন্ধ থাকার ফলে কিছু না কিছু সমস্যা হবেই। কিছু ম্যাটেরিয়ালস, ইনস্ট্রুমেন্ট, কেমিক্যাল নষ্ট হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ কোনো একটি রাসায়নিকের মেয়াদ হয়তো ৬ মাস বা এক বছর। অথচ গত প্রায় দেড় বছর ধরে ল্যাব বন্ধ থাকায় সেগুলো ব্যবহারই করা হয়নি। ফলে মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই রাসায়নিক স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হবে। যদি কোনো কেমিক্যাল পুরোপুরি নষ্ট নাও হয়, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় তার গুণগত মান নষ্ট হবেই। আর গুণগত মান ঠিক না থাকলে সেটা গবেষণা কাজে আর ব্যবহার করা যাবে না।

তাছাড়া দেখা যাবে বন্ধের আগে কেউ হয়তো গবেষণা কাজের জন্য কোনো স্যাম্পল ফ্রিজে রেখেছিল। কিন্তু দীর্ঘ বন্ধের পর সেগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। বরং নতুন করে সংগ্রহ করা লাগবে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা গবেষণাগারের অন্যতম শক্তি। তারা যেহেতু আসতে পারছে না, সেহেতু গবেষণার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রী, লাখ লাখ টাকার আধুনিক গবেষণা যন্ত্রপাতি এক বছরের বেশি অচল অবস্থায় থাকায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবেই।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, কভিড-১৯ সংক্রমণের ভয়ে ল্যাবগুলো বন্ধ রাখা ঠিক হয়নি। বরং পালাক্রমে ল্যাবগুলো ব্যবহারের সুযোগ রাখা দরকার ছিল। বিশ্বের কোনো দেশই করোনার ছুটিতে ল্যাব বন্ধ রাখেনি, বরং কোথাও কোথাও ল্যাবে ব্যস্ততা বেড়েছে। গবেষণাগার ও বিজ্ঞানাগার দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতি হবে। অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যেতে পারে, অনেক যন্ত্রে ফাঙ্গাস জমে যাবে। এমনকি অনেক গবেষণা ফল সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ল্যাবগুলো দ্রুত খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris