সোমবার

২৭শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঠিয়ায় ভিজিডি কার্ড স্বচ্ছলদের দখলে?

Paris
Update : বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

আরিফ সাদাত, পুঠিয়া : গরিব ও দুস্থ্য মহিলাদের নামের পরিবর্তে ভিজিডি খাদ্য তালিকায় স্বচ্ছলরা রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে তাদের পছন্দের নারীদের নাম তালিকা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। জিউপাড়া ইউপি সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, চলতি ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকা করা হয় গত বছর ডিসেম্বরে। তালিকায় পুরো ইউপিতে মোট ৩১৯ জন সুবিধা ভোগী মহিলা রয়েছেন। এদের সকলকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা (চাউল-গম) দেয়া হচ্ছে। যা আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে ইউনিয়নের কানাইপাড়া গ্রামের আতাহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম নিজেকে দুস্থ্য নারী হিসাবে দেখিয়ে ভিজিডির আওতায় রয়েছেন। অথচ তাদের নিজেস্ব কয়েক বিঘা ফসলী জমি রয়েছে। সেই সাথে আধুনিক মানের একটি ফ্লাট বাড়িও রয়েছে। একই গ্রামের এনামূল হকের স্ত্রী রুমা বেগমও প্রভাবশালী। তার ছেলে থাকেন প্রবাসে। সে সুবাধে জমিজমাসহ রয়েছে ভালো মানের বাড়ি। হলহলিয়া গ্রামের সুজিত কুমার সরকারের স্ত্রী অর্পনা রানীদের বাড়িসহ রয়েছে কয়েক বিঘা জমি।

সম্প্রতি প্রায় ১০ লাখ টাকায় আরো এক বিঘা জমি কিনেছেন। পুরো ইউপি এলাকায় মোট ৩১৯ জন সুবিধা ভোগিদের মধ্যে অধিকাংশরাই এরকম স্বচ্ছল পরিবারের সদস্য। ভিজিডির সুবিধা ভোগি হলহলিয়া গ্রামের জতিন সরকারের স্ত্রী মানিতা রানী বলেন, এই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য হেলেনা বেগম কার্ড করার কথা বলে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে অনেক আকুতি-মিনতি করার পর দুই হাজার টাকা নিয়ে তিনি এই কার্ড করে দেন। একই এলাকার মনিতা রানীও কার্ডের বিনিময়ে দুই হাজার টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেন।

পশ্চিম কানাইপাড়া-পালপাড়া গ্রামের শেফালী রানী বলেন, আমাদের পরিবার অনেক অস্বচ্ছল। একটা ভিজিডির কার্ডের জন্য পরিষদে অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কোনো ভাবেই সে কার্ড পাইনি। অবশেষে মহিলা মেম্বার হেলেনা বেগম কার্ড দেয়ার নামে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি কার্ডতো দেননি এখন ওই টাকাও ফেরৎ দিচ্ছেন না। নাম পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে একজন ইউপি সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান তিনজন মহিলা মেম্বারকে ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরি করতে দেন।

ওই তালিকায় অনেক প্রভাবশালীদের নামও রয়েছে। তবে অর্থের বিনিময়ে ওই তালিকা তৈরিতে মহিলা মেম্বার হেলেনা বেগম ও চেয়ারম্যানের একজন খাস লোক জড়িত আছেন। ওই সময় টাকা নেয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। তবে এ বিষয়টি চেয়ারম্যান অবহিত আছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রকার প্রতিবাদ করেননি। অর্থের বিনিময় স্বচ্ছলদের ভিজিডির তালিকায় নাম দেয়ার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হেলেনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মানুষ খুব খারাপ। টাকা নিলেও দোষ না নিলেও দোষ।

তবে আমি কাউকে টাকার বিনিময়ে কার্ড দেয়নি। মানুষ আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন। আমি গরীব মানুষের নামেই তালিকা দিয়েছি। এ বিষয়ে জিউপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বেগম বলেন, অর্থের বিনিময়ে ভিজিডির কার্ড দেয়ার বিষয়টি আমার জানান নেই। তবে তালিকা তৈরি করা ওই মহিলা সদস্যদের বলা হয়েছিল স্বচ্ছলরা নয়, দুস্থ্যদের নাম দেয়ার জন্য। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ডালিয়া পারভীন বলেন, আমি একা পুরো উপজেলার সকল তালিকা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে দেখা সম্ভব নয়।

যার কারণে ইউপি চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য মতে ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে জিউপাড়া ইউপিতে কয়েকজনের নামের বিষয়ে অভিযোগ থাকায় তাদের বাদ দেয়া হয়। আর নিয়ম অনুসারে কর্মসূচির ৬ মাস হলে নাম বাদ দেয়া সম্ভব হয় না। তবে কেউ মারা গেলে তার পরির্বতে আরেক জনকে সুবিধা ভোগিদের তালিকাভূক্ত করা যায়।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris