সোমবার

১৭ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় এমপি আনারের দেহ ৮০ টুকরো করা ‘কসাই’ জিহাদ কে? হাড়হিম করা তথ্য!

Paris
Update : শনিবার, ২৫ মে, ২০২৪

আরা ডেস্ক : বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় হত্যার ঘটনায় ভারতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার ওরফে সিয়াম খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুরের বাসিন্দা। পেশায় একজন রঙমিস্ত্রি। স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাচেষ্টা মামলা, মারামারি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি হয়ে জিহাদ ছিল নিরুদ্দেশ। আনসার হত্যা মামলাসহ ফুলতলা ও যশোরে তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। চার ভাই এবং এক বোন তারা। জিহাদের ভাইয়েরা স্কুল ও মাদ্রাসায় চাকরি করেন। বারাকপুরের বাড়িতে তার বাবা জয়নাল হাওলাদার, মা, স্ত্রী মুন্নি বেগম ও দেড় বছরের শিশুসন্তান রয়েছে। জিহাদের বাবা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার বলেন, ‘জিহাদের সঙ্গে বহুদিন কথা হয়নি। ঢাকায় একটি ঝামেলার কারণে জেলে ছিল সে। ওই ঘটনার পর তার পরিবার ক্ষতির মুখে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় মারামারি থেকেই জিহাদ সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’ জিহাদের স্ত্রী মুন্নি বেগম জানান, ২০১৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে জিহাদের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সে সময় জিহাদ রঙমিস্ত্রির কাজ করতো। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর তার একটা ছেলে হয়। গত সাড়ে ৯ মাস আগে জিহাদের সঙ্গে তার (মুন্নি) কথা হয়। এখানে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ছিল। ঢাকার একটি মামলায় বাড়িতে কয়েকবার ডিবি পুলিশ এসেছিল। প্রায় এক বছর হলো জিহাদ চলে গেছে। যোগাযোগও করেনি, টাকাপয়সাও পাঠায়নি। তিনি বলেন, ‘প্রায় ৯ মাস আগে মুঠোফোনে জিহাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল। শুধু তার আড়াই বছরের ছেলে ও মা-বাবা কেমন আছেন সেই বিষয়ে খবর নিয়েছিল।’ মুন্নি বেগম জানান, জিহাদের কারণে তার নিজের মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। জিহাদের বড় দুই ভাইও তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করে না। শ্বশুর জয়নাল হাওলাদারের আয়ে চলে তাদের সংসার। বারাকপুরের বাসিন্দা নজরুল আকন্দ জানান, জিহাদ রঙমিস্ত্রির কাজ করতো। কয়েক বছর আগে স্থানীয় রাজনীতির দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় সেসহ গ্রামের অনেকের নামে মামলা হয়। তারপর থেকে সে নিখোঁজ। জিহাদের প্রতিবেশী মো. সোহেল জানান, জিহাদ স্থানীয় বিরোধে মামলায় জড়ানোর পর জেলও খাটে। তারপর জামিনে বের হয়ে একটি ডাকাতি মামলায় জড়ায়। এছাড়া একটি হত্যা মামলায়ও সে আসামি।
দিঘলিয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৮ জুন অস্ত্র আইন, ২০২০ সালের ২৫ মে মারামারি ও ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল মারামারির মামলা রয়েছে। সে অনেকদিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছে। এর আগে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পক্ষ থেকে জিহাদ হাওলাদারকে ভারতের মুম্বাই থেকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেফতার জিহাদের বয়স ২৪ বছর। তিনি মুম্বাইয়ের অবৈধ অভিবাসী। পেশায় একজন কসাই। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। বাড়ি খুলনার দিঘলিয়ায়। জিহাদ হাওলাদার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় ভাড়া করা খুনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভারতের পুলিশ এ হত্যার ঘটনায় সিয়াম নামের একজনকে গ্রেফতারের কথা বলেছিল। তবে সিয়াম এখন কাঠমান্ডুতে বলে জানা গেছে। আসলে জিহাদ হাওলাদারকেই তারা সিয়াম বলে মনে করেছিল। সিআইডির বার্তায় বলা হয়েছে, হত্যার ঘটনার দুই মাস আগে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন মো. আক্তারুজ্জামান শাহীন। এই আক্তারুজ্জামানকেই সংসদ সদস্য আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই। কলকাতা সিআইডি বলছে, গ্রেফতার জিহাদ স্বীকার করেছেন, আক্তারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি এবং চার বাংলাদেশি মিলে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করেন। শুক্রবার (২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের আদালতে নেওয়া হয় জিহাদকে। এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তাকে ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের আদেশ দিয়েছেন বারাসাত আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস।

এদিকে কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের হাড়হিম করা নতুন বেশকিছু তথ্য সামনে এসেছে। কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যার পর মরদেহের চামড়া ছাড়ানো হয়। এরপর ৮০ টুকরো করা হয় তার দেহ। যাতে করে পরিচয় শনাক্ত না করা যায়। খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ‘কসাই’ জিহাদ পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। গ্রেপ্তার জিহাদ আরও জানায়, আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করে নিউটাউন, ভাঙড় এলাকার নানা জায়গার জলাশয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে ৫০০০ টাকা পেয়েছে সে। খুনের তদন্তকারীরা মনে করছেন, দেহের খণ্ডাংশ জলাশয়ে ফেলে দেওয়ায় তা উদ্ধার করা কঠিন হয়ে গেল। ইতোমধ্যেই টুকরোগুলো পানিতে থাকা কোনও না কোনও প্রাণীর পেটে চলে গিয়ে থাকতে পারে। শুক্রবার (২৪ মে) ‘কসাই’ জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অভিযুক্ত জানায়, খুনের পর আনোয়ারুলের দেহ ৮০ টুকরো করে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ মিশিয়ে দেওয়া হয়। হাড়, মাংস পৃথক করে হলুদ মাখিয়ে একেকটি টুকরো একেক জায়গার জলাশয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও কোথায় কী ফেলা হয়েছে, সে বিষয়ে মুখে কুলূপ এঁটেছে গ্রেপ্তাররা। তবে পুলিশের ধারণা, দেহাংশ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তদন্তে জানা যায়, ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্কে কিছু বিষয়ে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ওপর ক্ষোভ ছিল তার বন্ধু ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের। ২০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে আনোয়ারুলকে খুন করা হয়। আগেও একাধিকবার এমপি আনারকে খুনের হুমকি দিয়েছিল শাহিন। সবশেষ গুলশান এবং কলকাতার নিউমার্কেটে দুদফায় তৈরি করা হয় হত্যার ব্লুপ্রিন্ট। এরপর গত ১২ মে এমপি আনার কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যাংয়ের সদস্য শিলাস্তির মাধ্যমে তাকে ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলা হয়। এরপর নিউটাউনের ফ্ল্যাটে এনে ১৩ তারিখ রাতে আনারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়াসহ তিনজনকে। তাদের তিনজনকে ৮ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে জিহাদ হাওলাদার নামের এক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। জিহাদের দেওয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে জলাশয়ে লাগাতার তল্লাশি চালিয়েও মরদেহের একটি টুকরোও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris