শুক্রবার

২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা মহামারীর ধাক্কাতেও রফতানি খাতে আশার আলো দেখাচ্ছে পাটপণ্য

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

এফএনএস : করোনা মহামারীতে দেশের রফতানিমুখী প্রায় সব খাতেই ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম পাট খাত। চলতি অর্থবছরের গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বাংলাদেশ পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে প্রায় ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার আয় করেছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। আর আগের অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানির এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ওই খাত থেকে রফতানি আয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৩০ কোটি (১.৩ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছবে রফতানিকারকরা আশাবাদী। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ ৯৫ কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই খাত থেকে বাংলাদেশ আয় করেছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। তবে সরকার চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। জুলাই-মার্চ সময়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৮৬ কোটি ১৮ লাখ ডলার।

ওই লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে চামড়াকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে পাট খাত। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে মোট ২ হাজার ৮৯৩ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ১২ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। এই ৯ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।

তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং লক্ষ্যের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম। আর চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৫৩ শতাংশ কম। এই সময়ে হিমায়িত মাছ রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৬৬ কোটি ৭ লাখ ডলারের পাট সুতা (জুট ইয়ার্ন) রফতানি হয়েছে আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ০৯ শতাংশ। তাছাড়া কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রফতানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। পাট ও পাট সুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। তাছাড়া এই ৯ মাসে ৬ কোটি ১২ লাখ ১০ হাজার ডলারের পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রফতানি হয়েছে।

যদিও কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটপণ্য রফতানিতে খারাপ সময় যাচ্ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওই খাত থেকে বাংলাদেশ ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার আয় করেছিল। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাট ও পাট পণ্য রফতানি করে দেশের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা আয় হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই একবারই পাট খাতের রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসেছিল ৯২ কোটি ডলার।

এদিকে পাটপণ্যের রফতানি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাটপণ্য রফতানিকারক সমিতির (বিজেজিইএ) চেয়ারম্যান এম সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল জানান, বিশ্ব বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় টাকার অঙ্কে এদেশের রফতানি বেড়েছে। তবে পরিমাণে খুব একটা বাড়েনি। তবে আশা করা যায় পাট দেশের জন্য আরো সুখবর বয়ে আনবে। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমলেও পাটপণ্যের চাহিদা কমবে না। খাদ্যের জন্য ফসল ফলাতেই হবে, আর ওই ফসল প্যাকেট বা বস্তাবন্দি করতে পাটের থলে লাগবে। অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইতিমধ্যে ভালো অর্ডার পাওয়া শুরু হয়েছে এবং রফতানিও হচ্ছে।

মূলত বিশ্বব্যাপী পলিথিনের ব্যবহার কমায় পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। ভবিষ্যতে চাহিদা আরো বাড়বে। এমন অবস্থায় একটু নজর দিলেই সোনালী আঁশ পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাড়া আর মাত্র একটি-দুটি দেশে পাট উৎপন্ন হয়। বিশ্ব যতো বদলাবে পাটপণ্যের চাহিদা ততোই বাড়বে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলো এ পথে অগ্রসর হবে।

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান জাহিদ মিয়া জানান, এখন শুধু বস্তা, চট ও থলে নয়, পাটসুতাসহ পাটের তৈরি নানা ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। করোনা মহামারীর কারণে পরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসায় বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলে পাট খাতের রফতানি অনেক বাড়বে। করোনা মহামারীর মধ্যেই এদেশের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করা সক্ষম হবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris