রবিবার

২৬শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইসিইউর তীব্র সঙ্কটে করোনায় মৃত্যু বাড়ার শঙ্কা

Paris
Update : বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

এফএনএস : আবারো আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। আর করোনায় আক্রান্ত সঙ্কটাপন্নদের চিসিৎসার জন্য হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) জরুরি। কিন্তু বিশেষায়িত এ চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা কাটছে না। সারা দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোর ৬৪ শতাংশে কোনো আইসিইউ সুবিধা নেই। ৩৬ শতাংশ হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য এ সেবা থাকলেও তার সবই বিভাগীয় শহরে। আইসিইউ সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ।

দেশজুড়ে আইসিইউ সঙ্কটে করোনার ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মোট সরকারি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের সংখ্যা ৯৬। তার মধ্যে ৬৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬১টিতেই আইসিইউ নেই। যে ৩৫টি হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা আছে, সেখানে শয্যা সংখ্যা মোট ৩৪২টি। দেশে সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে কভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫৬৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

তার মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ২৮৬ ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৪৫টি। চট্টগ্রাম মহানগরী বাদে চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য নির্ধারিত ১১টি সরকারি হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তার সবই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর বিভাগের ১১ জেলার ৯ জেলাতেই সরকারিভাবে আইসিইউর ব্যবস্থা নেই। ফলে ওসব জেলার জটিল রোগীর চাপ কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম শহরের সরকারি হাসপাতালে এসে পড়ে। ফলে রোগীর চাপে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের মতো দেশের বাকি ৭ বিভাগের অবস্থাও অনেকটা একই রকম।

সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে করোনা রোগীদের জন্য ১৬টি সরকারি হাসপাতাল নির্ধারিত রয়েছে। তার মধ্যে দুটি হাসপাতালে ২০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের ৯টি হাসপাতালের ৩টিতে আইসিইউ রয়েছে ৪১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫টি হাসপাতালের একটিতে ১০টি আইসিইউ রয়েছে। সিলেটের ৬টি হাসপাতালের ২টিতে ২১টি আইসিইউ এবং ঢাকা বিভাগের (মহানগর বাদে) ১৫টি হাসপাতালের ৮টিতে ৬০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়।

তার মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে শুরু থেকেই আইসিইউ শয্যা নেই। বাকি ৮টি হাসপাতালে ১১৭টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তবে বিভাগভিত্তিক হিসাবে আইসিইউ শয্যা সংখ্যায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বরিশাল বিভাগ। ওই বিভাগের করোনা রোগীরা ৭টি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়। তার মধ্যে কেবল বরিশাল শহরের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাত্র ১২টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।

এদিকে করোনা বিষয়ে সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম জানান, করোনা মোকাবেলায় সরকার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা ভালো ব্যবস্থাপনা করতে পারেনি। বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে পরিস্থিতির চরম অবনতি হতে পারে। আইসিইউ রোগীদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হলেও তা এখন মহার্ঘ্যে পরিণত হয়েছে।

আইসিইউ সংকটের কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নেও সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আইসিইউতে রোগীর চাপ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, ঢাকার আইসিইউতে রোগীর চাপ বাড়লেও প্রান্তিক পর্যায়ে বাড়েনি। ঢাকায় যতো রোগী আসে, তার বেশির ভাগই সংকটাপন্ন। এর কারণ হলো, ওসব রোগী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে।

মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তারা যেখানে আছে, সেখানেই চিকিৎসা করালে ভালো হবে। অযথা ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে কিছু আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হয়েছে। আইসিইউ স্থাপন সময়সাপেক্ষ বিষয়। করোনা সামলাতে গিয়ে অনেক কাজই করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris