শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে দাতাদের বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস

Paris
Update : সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০

এফএনএস : করোনা ভাইরাসের প্রথম ধাক্কা সাফল্যের সাথে সামাল দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে দেশে শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। আর করোনার এ ধাক্কা সামলাতে দাতা গোষ্ঠিগুলো সরকারকে বিপুল অংকের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। ওই লক্ষ্যে চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে। তাছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা), ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরাও বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ করোনার টিকা আমদানি, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি কেনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাজেট ব্যয় মেটাতে ব্যয় করা হবে। তাছাড়াও দাতা সংস্থার সঙ্গে আরো ৫০৮ কোটি ডলার ঋণচুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাংলাদেশ মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলাতে ইতিমধ্যে দাতাদের কাছ থেকে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বড় অংশ ছাড় হয়েছে। কিন্তু দেশে এরই মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। তার মধ্যে করোনার টিকা আমদানিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ দেশের প্রতিটি মানুষের করোনার টিকা নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ লাগবে। ইতিমধ্যে সরকার নাগরিকদের করোনা টিকা বিনামূল্যে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেজন্য চলতি বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা হলেও বাজেট ঘাটতি বেশি থাকায় সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে দাতাদের সহযোগিতা। তাছাড়া প্রণোদনার আওতায় ২১ প্যাকেজে ১ লাখ ২০ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে প্যাকেজের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। ওই কারণে প্যাকেজ ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করা হতে পারে। আর প্যাকেজ বাড়লে টাকার পরিমাণও বাড়াতে হবে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় তা নিয়ে কাজও শুরু করেছে।

সূত্র জানায়, করোনার টিকা আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের তা কেনার প্রস্তুতি রয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তিকে দুই ডোজ টিকা দিতে হবে আর সেক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য খরচ হতে পারে ১০ থেকে ১২ ডলার। সবমিলিয়ে দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষকে টিকা দিতে ২০০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। বিপুল পরিমাণ ওই অর্থ জোগানে সরকার সম্প্রতি দাতা সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে প্রথম দফার প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত পাওয়াসহ নতুন করে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়। করোনার টিকা কেনার জন্য চলতি মাসের শুরুতেই সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। টিকা আবিষ্কারের পর দ্রুত তা কিনতে যাতে অর্থ সঙ্কটে পড়তে না হয় সেজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে ঋণ চাওয়া হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, করোনার টিকা কেনার জন্য ইতিপূর্বে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে মোট ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়। তার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এডিবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার, এআইআইবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জার্মানির কাছে ২৫ কোটি এবং ফ্রান্সের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হয়। ওসব অর্থের একটি বড় অংশই ইতিমধ্যে দেশে এসে গেছে। কিছু অর্থ আসার প্রক্রিয়ায় আছে। গত এপ্রিলে এডিবি বাংলাদেশকে ১০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি টাকা। এবার করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবেলা, বাজেট বাস্তবায়ন এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। আর দ্বিতীয় দফায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে।

বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে জানিয়েছে, করোনার টিকা কেনার জন্য তারা ৬০০ কোটি ডলারের যে তহবিল গঠন করেছে, সেখান থেকে ঋণ পেতে আবেদন করা ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে।
এদিকে গত ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ১৫৬ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সই করেছে সরকার। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। ওসব অর্থে প্রণোদনা প্যাকেজের পাশাপাশি চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটেও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় করোনার টিকা আমদানি, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং বাজেট ঘাটতি মেটানো হবে। চলতি বাজেটে বিদেশী সহায়তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার কোটি টাকা যা, গত অর্থবছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থ সংগ্রহে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও আইএমএফের সহায়তার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে দাতা সংস্থাগুলো সহযোগিতা প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিজুল আলম জানান, করোনা মোকাবেলায় এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে দ্বিতীয় দফায় আরো ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চাওয়া হয়েছে। সংস্থাটির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। আশা করা যায় চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করবে। প্রথম দফায় করোনা যেভাবে সামাল দেয়া হয়েছে ঠিক একইভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা করা হবে। সেজন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দাতাসংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। ঋণ প্রাপ্তির এই অর্থ করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করবে সরকার।

এ প্রসঙ্গে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, করোনা মোকাবেলায় ও বাজেট সহায়তার জন্য দাতাদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে। প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত বৈঠকে এবার তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। কোভিড মোকাবেলার বিষয়টি তারা ভালভাবে অবগত আছে। দাতা সংস্থাগুলো ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলেছে। তাছাড়া করোনা মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিরিজ বৈঠকেও বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং জাপানের রাষ্ট্রদূত অংশগ্রহণ করেছেন। বৈঠকে দাতা গোষ্ঠির প্রতিনিধিরা করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris