বুধবার

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ আজ প্রকল্প কতটুকু জনকল্যাণে লাগবে তা বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর চৌবাড়িয়া পশুহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ তানোরের গরুর গাড়ি আর মাটির বাড়ি স্থান পেয়েছে ডাক বিভাগের বিশেষ খামে রাজশাহীতে পাথরের ট্রাক থেকে ৫ কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার কাল গোদাগাড়ী উপজেলায় নির্বাচনে লড়াই হবে ত্রিমূখী? রাজশাহী নগরীতে প্রশস্তকৃত সড়কে আলোকায়নের উদ্বোধন করলেন মেয়র দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মোহনপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনামূল হকের কর্মী সমাবেশ

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি

Paris
Update : শনিবার, ২২ মে, ২০২১

এফএনএস : টানা ১১ দিন রক্ষক্ষয়ী হামলার পর অবশেষে যুদ্ধ বিরতিতে এলো গাজা ও ইসায়েল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার রাত ২টা থেকে এ যুদ্ধ বিরতি কার্যকর শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এরআগে মিসরের প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রীসভার বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা মিসরের প্রস্তাবিত চুক্তিতে রাজি হয়ে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধবিরতি হবে সমঝোতার ভিত্তিতে এবং নিঃশর্ত।

এদিকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে হামাস। বৃহস্পতিবার রাতে হামাসের সমর্থকরা গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। তবে হামাস নেতারা বলেছেন, ঘোষণা এলেও যুদ্ধবিরতি চুক্তির খুটিনাটি চূড়ান্ত না হওয়া অবধি তারা সতর্ক অবস্থায় থাকবেন। টানা ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজায় ২৩২ ফিলিস্তিনি ও হামাসের রকেট হামলায় নিহত হয়েছে ১২ ইসরায়েলি।

গাজার ‘বিজয়োল্লাস : গাজা উপত্যকায় স্থানীয় সময় রাত ২টা (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা) থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। টানা ১১ দিন ধরে তাণ্ডব চালানোর পর মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। এ ঘোষণার পর রাস্তায় নেমে উল্লাস করতে থাকেন গাজার জনগণ। খবর : আল জাজিরা। এ যুদ্ধবিরতিকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে ঘোষণা আসার পর হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ জানায়, স্থানীয় সময় রাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এরপরই নিরাপদ আশ্রয় থেকে বের হয়ে এসে উল্লাস করতে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজা এবং ফিলিস্তিনের রাস্তায় নেমে হাজার হাজার মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়।

এ সময় তারা ফিলিস্তিনের পতাকা প্রদর্শন করেন এবং বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। এ ছাড়া এ সময় গাজার মসজিদ থেকে মাইকে আল্লাহর প্রশংসাসূচক বক্তব্যও শোনা যায়। জনগণের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে গাজায় থাকা হামাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘এটা জয়ের উচ্ছাস।’ এ সময় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পুনর্নিমাণের ঘোষণাও দেন তিনি। ১১ দিনে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৬৫ জন শিশুসহ অন্তত ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে ফিলিস্তিনি বাহিনীর পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন দুই শিশুসহ মোট ১২ জন।

এদিকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস মিশরের মধ্যস্থতায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে গতরাতে অর্জিত যুদ্ধবিরতি মেনে চলার শর্ত ঘোষণা করেছে। সংগঠনটি বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তেল আবিব এটি মেনে চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও তা বাস্তবায়ন করবে। হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধানের গণমাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা তাহের আল-নুনু গাজায় সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় হামলা বন্ধের পাশাপাশি আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার যে প্রতিশ্রুতি ইসরাইল দিয়েছে তা যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে তেল আবিব চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসও যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করবে।

এই শর্ত দেয়ার মাধ্যমে হামাস মূলত বোঝাতে চেয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত সংঘর্ষে তারা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল এবং ইসরাইল প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাকে পরিণতি ভোগ করতে হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হয়। ওই মন্ত্রিসভা বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ‘মিশরীয় প্রস্তাব’ মেনে নিয়েছে। ইসরাইলি মন্ত্রিসভার গতরাতের ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোররাত ২টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।

হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা ওসামা হামদান যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি লেবাননের আল-মায়াদিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে বলেছেন, “প্রতিরোধ আন্দোলন মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে এই নিশ্চিয়তা পেয়েছে যে, গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ হবে।” ওসামা হামদান গতরাতে আরো বলেন, “বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শহরের শেখ জাররাহ এলাকা এবং আল-আকসা মসজিদ থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারও আমরা (মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে) নিশ্চয়তা পেয়েছি।” ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার ঘোষণাকে ফিলিস্তিনিদের বিজয় বলেও জানিয়েছেন ওসামা হামদান।

তিনি বলেন, “ইহুদিবাদী ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিজয় হয়েছে।
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া : টানা ১১ দিন রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। আক্ষরিকভাবে এটি যুদ্ধের বিরতি হলেও এই ঘটনা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কাছে বিজয়ের সমতুল্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর রাস্তায় নেমে বিজয়োল্লাস শুরু করেছে তারা। ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রধানরা।

জাতিসংঘের মহাসচিব: জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, শান্তি পুনরুদ্ধার ছাড়াও ‘দ্বন্দ্বের’ মূল কারণ সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ শুরু করায় ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নেতাদের বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করি। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এই বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে সত্যিকারের জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য কোনো প্রচেষ্টা বাকি রাখা উচিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আমরা জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গাজার জনগণের জন্য দ্রুত মানবিক সহায়তা প্রদান এবং গাজা পুনর্নির্মাণ চেষ্টায় আন্তর্জাতিক সহায়তা জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার সঙ্গে বেঁচে থাকা এবং স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র উপভোগের সমান অধিকার রয়েছে। আমার প্রশাসন এ বিষয়ে নিরলস কাজ করে যাবে।

মিসরীয় প্রেসিডেন্ট : মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি বলেছেন, আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছ থেকে একটি ফোনকল পেয়েছি। আমরা ইসরায়েল ও গাজার মধ্যকার বর্তমান বিরোধকে শান্ত করতে পারে এমন একটি সূত্রে পৌঁছানোর বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছি। কূটনীতির মাধ্যমে সব পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসনই আমাদের লক্ষ্য।

মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের দূত : মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত জাতিসংঘের শান্তিদূত টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেছেন, গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতিকে আমি স্বাগত জানাই। সহিংসতায় ভুক্তভোগী ও তাদের প্রিয়জনদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইল। জাতিসংঘের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় শান্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তার জন্য আমি মিসর ও কাতারের প্রশংসা করি। এবার ফিলিস্তিন গড়ার কাজ শুরু হতে পারে। জাতিসংঘে মার্কিন দূত : জাতিসংঘে মার্কিন দূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, এখন আমাদের অবশ্যই স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠার দিকে আরও এগিয়ে যেতে মনোনিবেশ করতে হবে।

আর গাজায় প্রচুর পরিমাণে জরুরি মানবিক সহায়তার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী: ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, ইসরায়েল ও গাজার যুদ্ধবিরতির খবরকে স্বাগত। এটি স্থায়ী করতে এবং বেসামরিক প্রাণহানির অগ্রহণযোগ্য চক্র ভাঙতে সব পক্ষকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। মালয়েশীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী: মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামউদ্দিন হুসেইন বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা শত শত লাশ ফেলে গেছে, কয়েক হাজারকে আহত করেছে। সহিংসতায় ভুক্তভোগী সবার জন্য গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে মালয়েশিয়া। এবার ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য মানবিক ও পুনর্নির্মাণ সহায়তায় নজর দেয়ার পালা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris