বৃহস্পতিবার

৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন সোহেল পবায় ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দের সাথে চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াজেদের মতবিনিময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত তানোরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন ময়না মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর লাল গামছা দেখে থামল ট্রেন, অল্পের জন্য রক্ষা রাজশাহী নগরীতে প্রস্তাবিত কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ আজ প্রকল্প কতটুকু জনকল্যাণে লাগবে তা বিবেচনার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর চৌবাড়িয়া পশুহাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ

নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ সংকটে ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ

Paris
Update : শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪

জসিম উদ্দিন, মান্দা : ভরাট হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদীর তলদেশ। উত্তাল নদীটি এখন শুধু নামেই নদী। বাস্তবে পরিণত হয়েছে মরা খালে। খরা মৌসুম শুরু হলেই এর পানি হু হু করে কমতে থাকে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে পানি কমে চলে আসে হাঁটুর নিচে। এসময় এলাকার লোকজন হেঁটেই পারাপার হন নদীটি। এবারও কয়েকদিন ধরে নদীটির পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। উজানের নিচু এলাকাগুলোতে সামান্য পানি থাকলেও পানিশুন্য হয়ে পড়েছে পুরো ভাটিঅংশ। এনিয়ে ৬ষ্ঠবারের মতো শুকিয়ে গেল নদীটি। এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে নদীকেন্দ্রিক ভাটিঅংশে ৩শর বেশি সেচ পাম্প। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে এসব সেচ পাম্পের আওতায় চাষ হওয়া অন্তত ৪৫ হাজার বিঘা জমির বোরো ধানের আবাদ। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত কিংবা নদীতে পানি না আসলে এ আবাদে ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন কৃষকেরা।
এদিকে আজ শনিবার দুপুরে শুকিয়ে যাওয়া নদীটি পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আত্রাই ও শিবনদ সংস্কারসহ খননের বিষয়ে কথা হয়েছে। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নদী দুটি সংস্কারসহ খননের প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। আশ্বস্ত করেছেন নদী দুটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
নদী গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আত্রাই নদীর দিনাজপুর এলাকায় অপরিকল্পিভাবে একটি রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। মাত্র কয়েকটি গ্রামকে সেচ সুবিধা দিতে এটি নির্মাণ করা হয়। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার এটিই প্রধান কারণ। রাবার ড্যাম তুলে নিলে নদীটি আবারও আগের জায়গায় ফিরে আসবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আত্রাই নদীর পানি দিয়ে দুইপাড়ের শতশত হেক্টর উর্বর জমিতে ধান, গম, আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরণের ফসলের চাষ করেন কৃষকেরা। মাঠের জমিতে চাষ হয় বোরো, আমন ও আউশ ধান। কিন্তু প্রত্যেক রবি মৌসুমের শুরুতেই অনাকাঙ্খিতভাবে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ছেন চাষিরা।
তাঁরা আরও বলেন, নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। একই সঙ্গে নদীপাড়ের মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারও নেই। ফলে নদীটি নাব্যতা হারানোর পাশাপাশি হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতিও। এর কারণে খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে নদীর পানি। অচিরেই খনন করা না হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে নদীটির অস্তিত্ব।
কৃষক ইব্রাহীম হোসেন বলেন, নদীপাড়ের মানুষের উৎপাদন করা প্রধান ফসলই হচ্ছে বোরো ধান। এবারে রোপণের পর ধানগাছের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ দিন হচ্ছে। পরিপক্ক ধানগাছ তৈরি হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। এ অবস্থায় সেচেকাজ ব্যাহত হলে ফলন বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নদীপাড়ের বাসিন্দা শতবর্ষী তনজেব আলী বলেন, আশির দশক জুড়েই নদীটির ভরা যৌবন ছিল। নব্বইয়ের দশক থেকে ক্রমেই যৌবন হারাতে বসে নদীটি। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, নদীটির হারানোর আর কিছুই নেই। ছোট-বড় নানান প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস ছিল এই নদী। এ কারণে নদীপাড় সংলগ্ন আশপাশের এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি। নদীটি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছের সেই উৎস এখন শুধুই অতীত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, বোরো ধানের আবাদ মুলত সেচনির্ভর। বর্তমানে ধান কুশি পর্যায়ে আছে। এখন সেচ কম হলেও সমস্যা নেই। ফলনেও তেমন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু থোড় অবস্থায় সময়মত সেচ ও জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি থাকা জরুরি। না হলে ফলন বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকবে।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris