সোমবার

২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী চিনিকলের ঘটনা তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, বরখাস্ত ৩

Paris
Update : শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী চিনিকলের ঘটনা তদন্তে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। এ ঘটনায় তিন কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া রড দিয়ে শ্রমিক নেতার হাতের আঙুল ফাটিয়ে দেওয়ায় সেই সহকারী ব্যবস্থাপকের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল বাশার গতকাল শুক্রবার এ চিঠি ইস্যু করেছেন। অভিযুক্ত সামিউল ইসলাম রাজশাহী চিনিকলে সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) পদে কর্মরত। গত ২৪ মার্চ চিনিকল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার কমিটি তদন্ত শেষ করে এমডির কাছে প্রতিবেদন দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল ইসলামের কাছে গতকাল শুক্রবার কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। এছাড়া সিবিএ সভাপতি মাসুদ রানা ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের কাছেও কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। তাদের সাতদিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামিউলের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন তিন কর্মচারী। এজন্য তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- টারবাইন অপারেটর সোহেল রানা, খালাসি আলমগীর হোসেন ও হিসাব শাখার অফিস সহায়ক মুরাদুল ইসলাম। এদিকে রাজশাহী চিনিকলের সহকারী ব্যবস্থাপক (সিভিল) সামিউল ইসলামের কৈফিয়ত চাওয়ার চিঠিতে বলা হয়েছে, চিনিকলের টারবাইন অপারেটর সোহেল রানার কোয়ার্টারে পানির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে সামিউল ইসলাম সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তিনি শ্রমিক নেতাকে উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন এবং শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেন। কাজের অগ্রগতির বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে না দিয়ে এমন আচরণ করে তিনি অপেশাদার আচরণ করেছেন। তাই বিষয়টি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শ্রমিকরা জানান, সবার সঙ্গে এমন আচরণই করে থাকেন সহকারী ব্যবস্থাপক সামিউল ইসলাম। বিভিন্ন সময় তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। বছরখানেক আগে চিনিকল সংলগ্ন হরিয়ান বাজারে কাঠ ফাঁড়াই করতে গিয়ে এক সমিলে চিনিকলের এমএলএসএস মনসুর আলীর সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন সামিউল। অন্য শ্রমিকরা তাকে সামিউলের হাত থেকে রক্ষা করেন। মাস ছয়েক আগে চিনিকলের যান্ত্রিক প্রকৌশল প্রধান মেসবাউল ইসলামের সঙ্গেও মারমুখী আচরণ করেন তিনি। সেদিন চিনিকলে নতুনের জায়গায় পুরাতন বোরিং পাম্প ও পাইপ বসাচ্ছিলেন প্রকৌশলী সামিউল। মেসবাউল ইসলাম এ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে সামিউল তার সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কৈফিয়ত চাওয়া প্রশ্নে সামিউল ইসলাম বলেন, তিনি এখনও কৈফিয়ত চাওয়ার কোনো চিঠি পাননি। চিঠি পেলে জবাব দেবেন। এ সময় তিনি তার অধীনদের সঙ্গে মারমুখী আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে রাজশাহী চিনিকল সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাকে রড দিয়ে মেরে আঙুল ফাটিয়ে দিয়েছেন সামিউল। এ ঘটনায় এমডির কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু এ অভিযোগের তদন্ত হয়নি। সামিউল উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগ তদন্ত করে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এমন পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে চিনিকলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন এ সিবিএ নেতা। রাজশাহী চিনিকলের এমডি আবুল বাশার বলেন, রফিকুল ইসলাম সবার আগে তার কর্মচারী। পরে তিনি সিবিএ নেতা হন। তিনি তার বিভাগের মাধ্যমে অভিযোগ না করে সংগঠনের পক্ষ থেকে করেছেন। এজন্য তার অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। আর সামিউলের বদলির জন্য মৌখিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছিলেন। কিন্তু তাকে এখনও বদলি করা হয়নি। এর মধ্যে আবার শ্রমিক নেতার সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল। তাই তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। এর আগে ২৪ মার্চ রাজশাহী চিনিকল শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলামকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর তিনি রাজশাহীর কাটাখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। তবে ঘটনাটি সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে অভিযোগের তদন্ত করছে না পুলিশ। ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার মহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও তদন্ত) আকুল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির দুই সদস্য হলেন-ব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) সাইফুল ইসলাম ও উপব্যবস্থাপক (পুরকৌশল) শাহিনুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার তদন্ত কমিটির ওই সদস্যরা চিনিকলেই অবস্থান করছিলেন।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris