রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের শালবাগানে ফুটপাত বন্ধ করে তৈরি করা হচ্ছে অর্ধশত ফলের আড়ৎ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের রেলগেট ও শালবাগান বাজার। এ দুই এলাকার মধ্যে দিন-রাতে ছুটে চলে হাজারো বাস, ট্রাক, সিএনজি, অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবহন। পথের দু’পাশেই রয়েছে পথচারীদের চলাচলের জন্য ১০ ফিটের ফুটপাত। অথচ, এ ফুটপাতগুলো দখলে নিয়ে সেখানে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত দোকান। সম্প্রতি সপ্তাহ খানেক ধরে রাজশাহী শালবাগান বাজার ও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের দেয়ালের সামনের ফুটপাতে বাঁশ ও চাঁটাই দিয়ে ঘিরে ফুটপাত দখলে নেমেছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও রাজশাহী ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন হোসেন কালু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোস্তাক হোসেন, গোলাম কিবরিয়া নান্নু, ওয়াহিদ ও তাদের দলবল। এতে প্রতিনিয়তই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পথচারীদের।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ১০ দিন যাবত ফুটপাত দখলে নেমেছেন কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। দিন-দুপুরে ফুটপাতের ওপর বাঁশ, খুটি, চ্যাগার ও চালায় টিন দিয়ে দোকান নির্মাণ করে চলেছেন তারা। ফুটপাত দখলের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণকে; বিশেষ করে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রাজশাহী পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি স্কুল ও রাজশাহী বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। ব্যস্ত সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের পাশ দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে তাদের। এতে বিভিন্ন সময়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয়, ফুটপাতের ওপর দোকান নির্মাণের কারণে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করায় বাড়ছে যানজট। দিন-দুপুরে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও কোন প্রকার উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই রাসিকের পক্ষ থেকে মহানগরীর লক্ষীপুর, ভাটাপাড়া, সিএন্ডবি মোড় সহ বেশকিছু জায়গায় অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু অধরা রয়েছে রেলগেট থেকে শালবাগান এলাকার অবৈধ স্থাপনাগুলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গড়ে তোলা এসব আড়ৎ থেকে প্রভাবশালী নেতারা প্রতিদিন নিয়ে থাকেন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অন্যদিকে রেলগেটের ফুটপাতে বসানো ফলের দোকানগুলো থেকে তুলছেন দৈনিক দু’শ থেকে হাজার টাকা ভাড়া। ফুটপাতের ওপর নির্মিত এসব দোকান ও ফলের আড়তের কারণে প্রতিদিনই কোনো কোনো পথচারী পড়ছেন দুর্ভোগে। এনিয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) নগর বিশেষ শাখা ও চন্দ্রিমা থানায় একটি চিঠি দেন। চিঠির বিষয় ছিল- ‘প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন ফুটপাত থেকে বাঁশের আড্ডা অপসরণ প্রসঙ্গে’। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল- ‘রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সংলগ্ন ফুটপাতের ওপর জনৈক ব্যক্তি বাঁশের স্তুপ করে রেখে ব্যবসা করছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এমতবস্থায় উক্ত বাঁশের আড্ডা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো’।

 

রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউশানের মেকানিক্যাল বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী আলিফ আক্তার রুমন। এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। রাস্তায় পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অটোরিক্সার ধাক্কায় আহত হন রুমন ও তার বন্ধু হাকিম। জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুটপাত দখলে থাকার কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তার দিয়ে হাটতে হয়। শুধু আমি নই, ওই দিন আমার বন্ধুও গুরুতর আহত হয়েছিল। শালবাগানে প্রায়ই এমন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেক মানুষ। ফুটপাতে হাঁটার পরিবেশ থাকলে হয়তোবা এমন ঘটনার শিকার হতাম না।’ আরেক ভুক্তভোগী রাজশাহী বোর্ড মডেল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহজাবিন আরার মা গুলশান আরা। তিনি নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মেয়ে নিতে গিয়ে তিনিও হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। শুধু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই নন; ফুটপাত দখলের কারণে ভোগান্তিতে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শিক্ষার্থী রুমনের মতন তারাও একই অভিযোগের কথা জানান প্রতিবেদককে। এ ব্যাপারে রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউশনের অধ্যক্ষ মোহম্মদ আব্দুর রশীদ মল্লিক বলেন, ‘ফুটপাত দখলের কারণে আমরা বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছি। এর আগে শুধু বাঁশের আড্ডা ছিল। এখন বাঁশের আড্ডার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ফুটপাতজুড়েই ৩০-৪০ টা দোকান বানিয়ে ফেলেছে তারা’। অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে হাজারো শিক্ষার্থী। ফুটপাত দখলের কারণে এসব শিক্ষার্থীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। আমার কাছে এর অভিযোগ আসছে। একবার পুলিশকে চিঠি দিয়ে এর প্রতিকার পেয়েছিলাম। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক পর আরও ব্যাপকভাবে কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা মিলে দোকানঘর নির্মাণ শুরু করছেন। অভিযোগ দিয়েও খুব একটা ফল পাচ্ছি না’। রাজশাহী বোর্ড মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসনের ভাষ্য, ‘প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরুর আগে ও ছুটির পরে এমনিতেই ওই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ভীড় থাকে। তখন টুকটাক ঝালেমার সম্মুখীন সবাইকে পড়তে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ এসব অনিয়মের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া’।
ফুটপাত দখল করে আড়ৎ ও দোকান নির্মাণ অন্যায় তা স্বীকার কওে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও ফল ব্যবসায়ী শাহিন হোসেন কালু বলেন, ‘রাজশাহীর বাইরের জেলাগুলোতে ফল ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত মার্কেট আছে, আমাদের নেই। সামনের দু’তিন মাস ফলের সিজন। তাই বাধ্য হয়ে ফুটপাতে আড়ত করেছিলাম। আমরা দলের লোক, মেয়র সাহেবকে বললে হয়তোবা বসার অনুমতি দিবেন। পথচারীদের সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি। ফুটপাত দখলে রাখা ঠিক হবে না। যতদ্রুত সম্ভব ওখান থেকে আড়ৎ তুলে ফেলবো, কথা দিলাম’। এ বিষয়ে রাসিকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন (সিনিয়র সহকারী সচিব) প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের অলরেডি পরিকল্পনায় বিষয়টি আছে। আপনি যে এলাকার কথা বললেন, তার নোট রাখলাম। আমাদের যে সিডিউল আছে, ওই সময়ে সেটাকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব’।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris