রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদকের পাশাপাশি মজুদদারদের বিরুদ্ধে র‌্যাবকে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Paris
Update : বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের অপব্যবহার এবং কিশোর গ্যাং কালচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে খাদ্য মজুদ ও জাল মুদ্রার বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে র‌্যাবের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় এমন পণ্য মজুদ করে রাখে এবং আরো বেশি লাভের আশায় দাম বাড়াতে অন্যান্য অনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে। আপনাদের তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। শেখ হাসিনা বুধবার (০৬ মার্চ) সকালে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ফোর্সেস এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে র‌্যাব সদর দপ্তর কুর্মিটোলায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন রমজান মাস। এই রমজান মাসে এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয়। কারণ, রমজানকে বলা হয় সংযমের মাস। কিন্তু আমরা দেখি এই সময় আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে তারা যেন সংযমতার পরিবর্তে আরো লোভী হয়ে পড়ে। যে নিত্যপণ্যগুলো আমাদের বেশি প্রয়োজন সেইগুলোর মজুদদারি দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারসাজি তারা করে থাকে। এই অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারবারি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার প্রধান বলেন, ঈদ সামনে আসলেই জাল মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়। সে সব বিষয়েও নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। যদিও এসব বিষয়ে অভিযান চলছে, কাজেই সেই অভিযান আপনারা অব্যাহত রাখবেন। সেটাই আমাদের কাম্য। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আরকটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে কিশোর গ্যাং,্ কভিড-১৯ মহামারির সময় এদের উত্থান ঘটেছে। এই ব্যাপারে অভিযান চলছে এবং এই বিয়ষটির দিকে আমাদের আরো দৃষ্টি দিতে হবে। আর মাদক একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশেষকরে যুব সমাজের মেধা ও কর্মশক্তি নষ্ট হচ্ছে এবং তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। এই মাদক বিস্তার প্রতিরোধে র‌্যাব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে যা আরো বেশি কার্যকর করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, মাদক সেবনকারি শুধু নয়, মাদক ব্যবসায়ী ও সরবরাহকারিদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর কোন কোন এলাকা থেকে মাদক আমাদের দেশে ঢোকে সেসব রুট চিহ্নিত করে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর প্রতিসহিংসতা, ধর্ষণ, নারী পাচার প্রভৃতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্যাতিতা নারীদের পুনর্বসানেও তিনি র‌্যাবের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহবান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক এম. খুরশীদ হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিযর সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে র‌্যাব ফোর্সেস এর বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন হয়। এরআগে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদর দপ্তরে পৌঁছলে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত চৌকস দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। তিনি বলেন, দেশের অবকাঠামোগত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তাঁর সরকার যে করছে তা সফলভাবে অব্যাহত থাকবে যখন আইন শৃঙ্খলা বাজায় থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারি সংস্থাগুলো এই ব্যাপারে সচেতন থাকবে। কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের ফলে পণ্য মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে মুল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় তিনি আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকার সারাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। যেখানে নিরাপত্তার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তিরও প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই র‌্যাবসহ প্রতিটি সংস্থা ও বাহিনীকেই তাঁর সরকার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের যা যা প্রয়োজন আমরা করেছি এবং র‌্যাবকে ইতোমধ্যে ১৫টি ব্যাটালিয়ান সমৃদ্ধ চৌকস ত্রিমাত্রিক সংস্থা হিসেবেই আমরা গড়ে তুলেছি। কারণ, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি এবং দেশের মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা এনে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে র‌্যাবের দু:সাহসিক অভিযান পরিচালনায় পুলিশ পদকের পাশাপাশি তাঁর সরকার র‌্যাব মহাপরিচালক পদকও প্রবর্তন করবে বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, র‌্যাব মহাপরিচালক পদক প্রণয়নের মাধ্যমে এই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আরো উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি হবে। র‌্যাবের কাজের আকাঙ্খা আরও বাড়বে বলেই আমি মনে করি। র‌্যাবের অভিযান পরিচালনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করে তিনি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে সকলের আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দ্রুত যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন সেটা সবসময় সরকার করে যাবে। বিমান বন্দরের পার্শ^স্থ আশকোনা হজ ক্যাম্পের পাশে র‌্যাবের নতুন সদরদপ্তর প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলেছে বলেও তিনি জানান। শেখ হাসিনা আবারও তাঁকে স্বতস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার মাধ্যমে টানা ৪র্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার সুযোগ সৃষ্টিতে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করায় র‌্যাবসহ সকল আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। দেশের সুন্দরবনকে জলদস্যু মুক্ত করে তাদের পুনর্বাসনসহ, চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গি মোকাবেলায় র‌্যাব সদস্যদের সাহসী ও কার্যকর ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি। সরকার প্রধান বলেন, আমাদের কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানব সৃষ্ট দুর্যোগও আছে। সবচেয়ে দু:খের বিষয় কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা দেখি আমাদের বিরোধী দল নামের সংগঠনও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। এই সময় তিনি গত ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের পাশাপাশি গত ২৮ অক্টোবরের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা,অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, রেলকে লাইনচ্যুত করা, রেলে ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা ও জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এসব ঘটনাকে মোকাবেলা করা এবং এর আসামীদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি র‌্যাব সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। না হলে দেশে একটি অঘটন ঘটানোর পর এর দায়ভার অন্যের ওপর চাপানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদাহারণ দেন, তিনি যখন বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, তখন ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাঁকেই হত্যার প্রচেষ্টায় আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মী নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হয়। সে সময় তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমি নিজে (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই নাকি মেরেছি। মানে আমি মনে হয় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। এভাবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এবং জ্বালাও পোড়াওয়ের দায়ও অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এবং সিসিটিভির ফুটেজ থেকে সত্যিকার তথ্যগুলো বেরিয়ে আসে। ফলে অপরাধীরা চিহ্নিত হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা সহজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত নির্বাচনের পূর্বের কোন একটা সময়ে একটি বড়দেশের র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ অনেকের ওপর নিষেধাঞ্জা আরোপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেখানে আমার প্রশ্ন ছিল যারা আমাদের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, জলদস্যু, বনদস্যুদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা মানুষের অধিকার সংরক্ষণে যারা কাজ করেছে তাদের ওপর কীভাবে নিষেধাঞ্জা আসে? তাদের অপরাধটা কি? আর কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তো সে আইনের উর্ধ্বে নয়। শেখ হাসিনা বলেন, সে যে সংস্থার লোকই হোক তাকে আমরা আইনের আওতায় এনে তার বিচার করি এবং করছি। ভবিষ্যতেও বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত যার যার কর্তব্য পালন যথাযথভাবে করছে কি-না সেটা দেখার দরকার। কিন্তু আমাদের দেশের সংস্থা তারা দেশের মানুষের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য যখন কোন অপরাধি শনাক্ত করবে বা ধরবে বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সেক্ষেত্রে আর একটি দেশ এসে নিষেধাঞ্জা দেবে, এটা আমাদের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের। রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। ‘সেভেনথ ফ্লিট’ পাঠিয়েও এই স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল যেটা আমেরিকার জনগণ করতে দেয়নি। আদালতে তারা বাধা দিয়েছিল। তিনি এক্ষেত্রে মন খারাপ না করে সবাইকে আত্মবিশ^াস ও আত্মর্যাদাবোধ নিয়ে চলার আহবান জানিয়ে বলেন, অন্যের অধিকার রক্ষা করার যে দায়িত্ব সেটা যথাযথভাবে পালনের পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ নানা অপকর্ম থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে এবং অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য সামাজিক প্রেরণা দিতে হবে। যে ক্ষেত্রে র‌্যাব যথাযথ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূল মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা আরো দায়িত্বশীর কার্যক্রম ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে-সেটাই আমরা আশাকরি। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার জন্য আহবান জানান।-এফএনএস


আরোও অন্যান্য খবর
Paris