বুধবার

১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জন্ম-মৃত্যু সনদ ডিজিটাল নিবন্ধন নিয়ে বিড়ম্বনার শেষ নেই

Paris
Update : সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

সেবা সহজ করতে অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু সনদ নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে সরকার। উল্টো সেখানেই বেড়েছে জটিলতা। ডিজিটালভাবে নিবন্ধন নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন সেবাগ্রহীতারা। বছরের পর বছর ধরে চলা এই ভোগান্তির যেন শেষ নেই। নিবন্ধন নিয়ে একেকবার একেক ধরনের সিদ্ধান্ত আসে। একবার নিবন্ধন করে পরে আবার নিবন্ধন করতে হচ্ছে। এতে ছুটোছুটি করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয় সাধারণ মানুষ। এছাড়া কোনো কারণে সংশোধন করার প্রয়োজন হলে আবারও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া প্রায় সময়ই সার্ভার বিকল থাকার কারণে এই কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দিনের পর দিন মানুষকে ঘুরতে হয়। জানা গেছে, স্কুলে ভর্তিসহ চাকরিতে নিয়োগ, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ ১৯টি ক্ষেত্রে জন্ম সনদ আবশ্যক এবং চারটি সেবা পেতে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। যে কারণে বছরজুড়ে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ নিতে ভিড় লেগে থাকে। তবে পদ্ধতি নিয়ে ধারণার অভাব, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জোগাড় করতে না পারাসহ নানা সমস্যায় ঘুরপাক খাচ্ছেন জন্ম সনদ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা। এছাড়া জন্ম নিবন্ধন নিয়ে একেক সময় সরকারের একেক সিদ্ধান্তে ভুগছে লাখো মানুষ। সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মা জানতে পারছেন, তাদের নিবন্ধন করাতে হবে নিজের স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে। সন্তানের বাবা ও মা দুটি ভিন্ন জেলার বাসিন্দা হলে সেই বিড়ম্বনা আরও বেশি। ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলছেন, বর্তমান ঠিকানায় জাতীয় পরিচয়পত্র করা গেলে জন্ম নিবন্ধন কেন করা যাবে না। আর নিবন্ধনের আবেদনে স্থানীয় ঠিকানা তো রয়েছেই। আবার কেউ যদি ঢাকাকে অস্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র করে থাকেন, তাহলে তিনি ঢাকায় নিবন্ধন করতে পারছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক ঘটনায় দুই নীতি হতে পারে না। ভোগান্তির আরেকটি দিক হল- একবার জন্মনিবন্ধন করা হলেও সেটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে নিবন্ধন করাতে হচ্ছে। সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করাতে গিয়ে বাবা-মায়ের জন্ম সনদ তৈরি, সংশোধন করতে হচ্ছে। এমনও দেখা যাচ্ছে কারও বাংলায় সনদ থাকলেও ইংরেজিতে নেই। কারও আবার ইংরেজি থাকলে বাংলা করা নেই। নিবন্ধনকারী কর্মীদের ভুলে সংশোধন করতে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে নাগরিকদের। সংশোধনে অনলাইনে আবেদনের একটি পদ্ধতি আছে। কিন্তু নানা জটিলতায় কাজ শেষ করতে পারে না ভুক্তভোগীরা। এদিকে সব ভুল আবার তৃণমূল পর্যায়ে সংশোধন করা যায় না, ইউনিয়ন পরিষদের ভুল সংশোধন করতে আসতে হয় উপজেলায়। সেটিও এক দিনে বা এক সপ্তাহে হবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। এদিকে একবার করা জন্ম নিবন্ধন আরেকবার করতে হচ্ছে সরকারের নীতিমালার কারণে। আগের জন্ম নিবন্ধন বাংলা অথবা ইংরেজি দুটি ভাষায় ছিল। গত বছরের জানুয়ারি থেকে একটা জন্ম নিবন্ধনেই বাংলা ইংরেজি দুই ভাষাই থাকছে। এ অবস্থায় যাদের জন্ম সনদ ইংরেজিতে করা ছিল তাদেরগুলো সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস বাংলা করে দিয়েছে, বাংলাটা ইংরেজি করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে অনেকের নামের বানান, ঠিকানা ভুল করা হয়েছে। এই ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ছুটোছুটি এক ভোগান্তি, আরেক ভোগান্তি হল এর আগে কেবল একটি ভাষায় করা জন্ম নিবন্ধন এখন গ্রহণযোগ্য না। বাংলা, ইংরেজি দুটোই চাচ্ছে। অন্যদিকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন পেতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় ২০২৩ সালে তিন মাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই কার্যক্রম বন্ধ রাখে। নিজস্ব সার্ভার তৈরি করে গত ১ অক্টোবর থেকে আবার শুরু হয় এই কার্যক্রম। করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ডিএসসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো থেকে এসব সনদ দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছে তারা। কিন্তু এই সনদ জমা নিচ্ছে না কোনো সংস্থা। কারণ, সরকারের কেন্দ্রীয় সার্ভারের সঙ্গে ডিএসসিসির সার্ভারটি যুক্ত না। ফলে তাদের দেওয়া জন্ম সনদগুলো সরকারি সার্ভারে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে জন্ম-মৃত্যু সনদ নিবন্ধনের জন্য একটি বড় ভোগান্তি ছিল পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর। শিশুর জন্ম নিবন্ধন আবেদনে পিতা-মাতার বাংলা ও ইংরেজি তথ্যসহ ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হলেই পিতা-মাতার বাংলা ও ইংরেজি নাম আবেদনে যুক্ত হতো। তবে সে নিয়মটি বাতিল করায় এখন পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর না দিয়ে আবেদনে সরাসরি পিতা-মাতার নাম লিখেই আবেদন জমা দেয়া যাচ্ছে। এছাড়া শুধুমাত্র হাসপাতাল থেকে শিশু জন্মের পর দেয়া ছাড়পত্র/জন্ম সনদ বা টিকার কার্ড যেকোনো একটি ডকুমেন্ট দিয়েই জন্ম নিবন্ধন করা যায়। জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধনের ফরম্যাট সফটওয়্যারের মাধ্যমে হয়, সেটা জন্মনিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে করা হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দিলে সেখান থেকে (অনলাইনে) নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করা যায়। তবে অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকে, ধীরগতিতে কাজ করে। আবার অনেক সময় বন্ধও থাকে। এসব জটিলতার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। এদিকে আবেদনকারীরা সঠিক ডকুমেন্ট দিতে পারেন না জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, সব সময় সঠিক ডকুমেন্ট আসে না। যেমন- জন্ম তারিখের জন্য অবশ্যই বৈধ ডকুমেন্ট থাকা দরকার। সেটা এনআইডি হতে পারে, শিক্ষাগত সনদের কপি হতে পারে কিংবা টিকা কার্ড হলেও চলবে। মানুষ সেগুলো দিতে পারেন না। এ সেবা প্রক্রিয়া কীভাবে জনবান্ধব ও ভোগান্তিমুক্ত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।-এফএনএস


আরোও অন্যান্য খবর
Paris