আলিফ হোসেন, তানোর
রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) ধানুরা মাঠে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকুপ অপারেটরের দৌরাত্ম্যে কৃষকেরা অতিষ্ঠ হয়ে
উঠেছে। ড্রেন মেরামত, লাইনম্যান, পাহারাদার ইত্যাদি অজুহাতে কৃষেকর কাছে থেকে জোরপুর্বক টাকা আদায় করছে অপারেটর। এদিকে অপারেটরের অপসারণ এবং স্কীমভুক্ত কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে নতুন অপারেটর নিয়োগ ও সমিতির মাধ্যমে নলকুপ পরিচালনার দাবিতে কৃষকের বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ১৮১ ধানুরা মৌজায়, ১২৬৮ নম্বর দাগে অবস্থিত গভীর নলকুপের অপারেটর এনায়েতুল্লাহ। সেচ নিয়ে তিনি রীতিমতো জল জমিদারী শুরু করেছেন। এতে স্কীমের কৃষকেরা ফুঁসে উঠেছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র চাপা পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ ও দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আবার পাহারাদারের নামে টাকা আদায় করা হলেও পাহারাদার না রাখায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এখন সে কৃষকের ওপর দায় চাপিয়ে তাদের কাছে থেকে বিঘা প্রতি ৫শ’ থেকে হাজার টাকা করে আদায় করছেন। তার স্কীমে প্রায় ৩০০ বিঘা জমি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপারেটরের ঘনিষ্ঠ এক সহচর বলেন, অপারেটর হতে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এছাড়াও বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত টাকা দিতে হয়। এসব টাকা তো অপারেটর পকেট থেকে দিবেন না। যে কারণে কৃষকদের কাছে থেকে বেশী টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ দিকে এনায়েতুল্লাহ আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে অপারেটর হয়েছেন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সরাসরি প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে কাঁচি প্রতিকের ভোট করেছেন। এনিয়ে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেচ চার্জের নামে ও নানা অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা নিয়ে যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় কৃষকেরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে অপারেটর এনায়েতুল্লাহ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিয়মানুসারে ডিপ চালাচ্ছেন। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় তিনি কৃষকের কাছে থেকে টাকা নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে তানোরের মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রকাশনগর জাটভাঙ্গী মহল্লায় গভীর নলকুপের কমান্ড এ রিয়ায় অবৈধ মটরে আবাসিক সংযোগ থেকে সেচ বাণিজ্যে করা হচ্ছে। অথচ এই অবৈধ মটরের মাত্র কুড়ি গজ দুরেই বিএমডিএ’র গভীর নলকুপ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রকাশনগর মহল্লার প্রয়াত মাহামের পুত্র শরিফুল ইসলাম অনুমোদন ছাড়াই গভীর নলকুপের কমান্ড এরিয়ায় অবৈধ মটর স্থাপন করেছেন। এদিকে মহল্লার বাসিন্দা কামালের বাড়ি থেকে আবাসিক সংযোগ নিয়ে সেচ বাণিজ্যে করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সেচ চার্জ পরিশোধ করতে গিয়ে কৃষকরা প্রায় নিঃস্ব ও মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্ত্ত প্রভাবশালী শরিফুলের বিরুদ্ধে তারা কেউ প্রকাশ্যে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। কৃষকেরা জানান, অবৈধ মটরের আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা না হলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে শরিফুল ইসলামের পুত্র মাসুম বলেন, মটরের বিষয় পল্লী বিদ্যুৎ দেখবে। তোরা (সাংবাদিক) কেনো এসেছিস। মটর নিয়ে কোনো খবর করলে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে সাংবাদিকতা শিখিয়ে দিবো।এবিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর জোনের (ডিজিএম) জহুরুল ইসলাম বলেন, আবাসিক সংযোগ থেকে সেচ বাণিজ্যের কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।