আলিফ হোসেন, তানোর
রাজশাহীর তানোরের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটা অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। এতে সামনে অশনি সঙ্কেত রয়েছে বলে মনে করছে তৃণমুল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দুর্বল স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর (কাঁচি) কাছে হেভিওয়েট প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর (নৌকা) পরাজয় নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মনে এমন আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও সাংগঠনিক নেতার ভূমিকা, ব্যক্তিস্বার্থ, নীতিনৈতিকতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।সর্বত্রই চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। খোদ দলের অভ্যন্তরে আদর্শিক, নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১(গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের তানোরে নৌকার চরম ভরাডুবি হয়েছে। এমন ফল বিপর্যয় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও আওয়ামী লীগের অন্দরমহলে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছে, সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাবেক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনের যে কেউ নৌকার পক্ষে থাকলে এমন ভরাডুবি হবার সম্ভবনা ছিলো না। তারা আগামি দিনের কথা বিবেচনা করে তাদের ফেরানোর দাবি তুলেছে। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নাই। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, দলের প্রয়োজনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আসাদুজ্জামান আসাদ যদি নৌকা নিয়ে এমপি হতে পারেন, তাহলে তানোর আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে রাব্বানী-মামুনদের ফেরাতে সমস্যা কোথায় ? তাদের ফেরালে নেতাকর্মীদের কোনো সমস্যা নাই, সমস্যা হাতে গোনা গুটিকয়েক মতলববাজের। যারা দল ও এমপির নাম ভাঙিয়ে রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছেন। এরা কখানো চাই না তারা ফিরে আসুক। তা না হলে এই আওয়ামী লীগ নিয়ে আগামীতে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তানোরে নৌকা ভরাডুবির ঘটনা সেই বার্তায় দিয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূলের নেতাকর্মীগণ স্থানীয়রা নৌকাডুবির ঘটনায় অভিযোগের তীর ছুড়েছে একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি যারা নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছে এবং দলের দায়িত্বশীল একশ্রেণীর জনবিচ্ছিন্ন নেতার বিরুদ্ধে। যারা ঘরে বসে থেকেই ভোটের হিসেব-নিকেশ ও ভোটের মাঠের প্রকৃত চিত্র এমপির কাছে গোপণ করে মাঠে-ময়দানে বগী আওয়াজ দিয়েছে। তৃণমূলের অভিমত, ত্যাগী- নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের অবমূল্যায়ন, জনবিচ্ছিন্নদের পদে বসানো এবং তাদের চ্যালা-চামুন্ডাদের দাপট, আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার দাম্ভিকতা এবং একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধির নানা অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি বিশ্বাসঘাতকতা ও নিজস্ব বলয় সৃষ্টির কারণেই তানোরে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে।
জানা গেছে, সারাদেশে যেখানে নৌকার জয়জয়কার সেখানে তানোরে নৌকার স্মরণকালের সর্ববৃহত পরাজয় ঘটেছে। অন্যদিকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও এমন নৌকা ডুবির ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে, দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া, বইছে নানা মুখরুচোক গুঞ্জন, প্রতিনিয়ত এসব গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে, চলছে নানা বিশ্লেষণ। কিন্ত্ত কেন-? এমপি ফারুক চৌধুরী একজন আদর্শিক, পরিক্ষিত হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এখানো তিনি সমান জনপ্রিয়। অথচ ফারুক চৌধুরীর মতো নেতৃত্ব নৌকা প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতিকের দুর্বল প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। অথচ কদিন পরেই উপজেলা নির্বাচন। যেখানে জাতীয় নির্বাচনে এমপি
ফারুক চৌধুরীর মতো নেতৃত্ব নৌকা প্রতিক নিয়ে পরাজিত হয়েছে, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে এসব নেতারা কি বিবেচনায় বিজয়ী হবার স্বপ্ন দেখেন। যদি সেটা হয় তাহলে বুঝতে হবে হয় তারা ফারুক চৌধুরীর থেকে বেশী জনপ্রিয় নয় ভিতরে কোনো রহস্য আছে ?
এদিকে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মানসিকতা, আচরণ, মান-অভিমান ও মনোভাব পর্যালোচনা দেখা গেছে, তারা নেতা (এমপি) নয়, বির্তকিত পাতিনেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের ধারণা পাতিনেতাদের দৌরাত্ম্যে প্রতিহত করতে হলে এমপিকে পরাজিত করতে হবে, সেই মানসিকতা নিয়ে তারা নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। যদি তাই না হবে, তাহলে প্রতিপক্ষ কাঁচি প্রতিকের প্রার্থী গোলাম রাব্বানী এতোটা জনপ্রিয় নেতৃত্ব না, যে ফারুক চৌধুরীর মতো নেতৃত্বকে তার কাছে পরাজিত হবে। কারণ ইতিপূর্বে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে দুবার প্রতিদন্দীতা করে বিএনপির দুর্বল প্রার্থীর কাছে দুবারই গোলাম রাব্বানী পরাজিত হয়েছেন।এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।