শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে ভূমিকা রাখবে ‘এন-৫৩’ জাতের পেঁয়াজ

Paris
Update : বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইউসুফ চৌধুরী

দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদে সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সার, উন্নত জাতের বীজ ও নগদ অর্থ প্রদানের প্রেক্ষিতে বিগত কয়েক বছরে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে রাজশাহীর পবা উপজেলার কৃষকদের মাঝে। কম সময়ে ভাল ফলন হওয়াতে ইতোমধ্যেই চাহিদার কেন্দ্রবিন্দু দখল করেছে গ্রীষ্মকালীন ‘নাসিক (এন-৫৩)’ জাতের পেঁয়াজের চাষ বলে মন্তব্য পবা উপজেলার কৃষকদের। বিষয়টির সতত্যা স্বীকার করে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (নওহাটা ব্লক) জালাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, গত বছর থেকে চলতি মৌসুমেও এই জাতের পেঁয়াজ চাষে সফলতার মুখ দেখেছে রাজশাহীর পবা উপজেলার চাষীরা। অল্প সময়ে অধিক ফলন হওয়াই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ক্রমান্বয়ে আগ্রহী হচ্ছে উপজেলার কৃষকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবা উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা তাসনিম বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ অনেক সম্ভাবনাময় একটি ফসল। আগে কৃষকেরা বছরে একবার শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করতো। কিন্তু এখন শীতকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসার পূর্বে এই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে মনোনিবেশ করছে কৃষকেরা। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এই জাতের পেঁয়াজ। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ‘কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচীর’ আওতায় বিনামূল্যে বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে এই বীজগুলো আরো একটু আগে পেলে চাষাবাদ ও ফলন প্রক্রিয়ার বিষয়টি আরো বেশি তরান্বিত হতো বলেও মন্তব্য এই কর্মকর্তার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন (এন-৫৩) পেঁয়াজ চাষাবাদ করে উৎপাদন হয়েছিল ২৭০০ মেট্রিক টন। চলতি ২৩-২৪ অর্থবছরে ১২১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৪৪৫ মেট্রিক টন। ক্রমান্বয়েই বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাদী জমি ও উৎপাদনের মাত্রা। পবার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষকেরা প্রতিবছরের জুলাই মাসে এই জাতের বীজ বপন করে। বপনের পয়ত্রিশদিন পর চারা উত্তোলন করে আগস্ট মাসে সেগুলো রোপন করা হয়। বীজ বপন থেকে শুরু করে সর্বমোট ১২৫ দিনের মধ্যেই সেগুলো বাজারজাত করতে পারে কৃষকরা। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সালাহ উদ্দিন আল-মামুন বলেন, মাঠ পর্যায়ে পেঁয়াজ চাষসহ বিভিন্ন কৃষি পন্য উৎপাদনে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছি। চিরাচরিত মৌসুমকালীন সময়ের শীতকালীন পেঁয়াজ আবাদের গন্ডি পেরিয়ে স্বল্প সময়ে গ্রীষ্মকালীন ‘এন-৫৩’ জাতের এই পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের সত্যতা স্বীকার করেন নওহাটা চৌবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম, বড়গাছি মাধাইপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন সহ আরো অনেককেই। নওহাটা নামোপাড়া এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর ধরে এই জাতের পেঁয়াজ চাষ করছেন। তিনি জানান, পবা কৃষি অফিসের কথামতো, এবারো তিনি দুই বিঘা জমিতে ‘এন-৫৩’ জাতের পেঁয়াজের চারা রোপন করেছিলেন। গেলবারের চাইতে এবার ফলন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দুই বিঘাতে প্রায় দুই’শ মণ পেঁয়াজ আবাদ হবে বলে তিনি জানান। ভুগরইল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। এবার ফলন ভাল হয়েছে। আশা করছি দেড়’শ মনের বেশি পেঁয়াজ হবে। এন-৫৩’ জাতের পেঁয়াজের ফলন বেশি ও ভাল দামে বিক্রয় করছি। সরকারের দেওয়া প্রণোদনা বীজ, সার ও অন্যান্য সহযোগিতায় আমার উপকার হয়েছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানায়।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে মে মাসে ওঠে তাহেরপুরী জাতের চারা পেঁয়াজ। এটি দেশি পেঁয়াজ। এই পেঁয়াজকে বীজ হিসেবেও লাগানো যায়। ওই বীজ থেকে যে পেঁয়াজ হয় তা মুড়িকাটা পেঁয়াজ হিসেবে পরিচিত। যা বর্তমানে বাজারে আসছে। কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা বলেন, প্রান্তিক চাষিদের মাঝে গ্রীষ্মকালীন এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণ ও যথোপযুক্তভাবে বীজ-সার সরবরাহের মাধ্যমে নতুন জাতের এই পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ক্রমাণ্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি চাহিদার বিপরীতে যোগানের ভারসাম্য রক্ষার একটি চলমান কার্যত পক্রিয়া। আশা করা যাচ্ছে, এই ক্রমধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে পেঁয়াজের সংকটকালীন সময়ে এইজাতের পেঁয়াজ যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে ক্রেতা ও ভোক্তাদের চাহিদাপূরণের ক্ষেত্রে। রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে এইজাতের পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন স্যার গুরুত্বপূর্ণ ও দ্বায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন এবিষয়ে বলেন, গ্রীষ্মকালীন ‘এন-৫৩’ জাতের পেঁয়াজ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে পেঁয়াজের ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক লাভবান হবেন দেশের চাষীরা। ইতিমধ্যে চাষীরা পেঁয়াজ উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করছেন। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে নানা মুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। আশা করছি কৃষক পর্যায়ে সঠিক সময়ে বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা হলে আগামী বছর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। পবা উপজেলায় ৯০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়। একজন কৃষক এক বিঘা জমির জন্য এক কেজি পেঁয়াজের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ২০ কেজি এমওপি সার এবং চারা উৎপাদন খরচ বাবদ বিঘা প্রতি ২ হাজার ৮শ’ টাকা সহায়তা হিসেবে পান।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris