রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাচোলে গড়ে উঠেছে পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান

Paris
Update : শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৩

নাচোল থেকে প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় “কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায়” নিজামপুর ইউনিয়নের বাইপুর- মুরগিডাঙ্গা গ্রামে ৭৮টি পরিবারের মাঝে নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে এই পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান।
সরজমিনে দেখা গেছে বাইপুর- মুরগিডাঙ্গা মডেল বাগান বসতবাড়িতে বছরব্যাপী সবজি উৎপাদন। আর এই সবজি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে নাচোল উপজেলা কৃষি অফিস। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং উপসহকারী কৃষি অফিসারদের নিয়ে সুসংগঠিত টিম এই কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাইপুর- মুরগিডাঙ্গা মডেল বাগানে সবজি বেড প্রস্তুতিতে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীন বলেন, বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেও পুষ্টির দিক দিয়ে দেশের মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। তাই পুষ্টির ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে দেশের সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করতে চাই সরকার। সেই সঙ্গে চায় পুষ্টিমান প্রজন্ম তৈরি করতে। এই জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাড়ির সব অব্যবহৃত জমিতে ১০০ টি করে স্থাপন করা হবে “পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন”। এসব বাগানে উৎপাদিত হবে নিরাপদ শাকসবজি, মসলা ও মৌসুমী ফল যা সারা বছরের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে আয় বৃদ্ধি করবে পরিবারের।
নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ্ আকরাম বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় “পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন” প্রকল্পের আওতায় চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪টি ব্যাচে ১২০ জন কৃষক- কৃষাণির মাঝে প্রশিক্ষণসহ কৃষি উপকরণ ও কারিগরি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জৈব ও রাসায়নিক সার, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাল শাক, সবুজ শাকের বীজ। বাতাবি লেবু, মালটা, পেঁপে, কাঁচা মরিচ, পাইনরা বাসক, চুইঝাল, রসুন, পেঁয়াজ,বীজ ও চারা। সবজি বাগান নিরাপত্তার জন্য নেট জাল প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষক – কৃষানিরা। এ প্রকল্পের আওতায় বাইপুর- মুরগিডাঙ্গা মডেল সবজি বাগান তৈরিতে বিনামূল্যে এসব উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশের ইউনিয়ন ও পৌরসভার বসতবাড়ির অব্যবহৃত জমিতে প্রায় ৫ লক্ষ বাগান স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছ।এতে করে পরিবারের সারা বছরের শাকসবজি ও মসলার চাহিদা পূরণ করার জন্য বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেন এবং পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার বসতবাড়ির ও অব্যবহৃত জমিতে ১০০ টি করে সবজি ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন করা হবে। বসতবাড়ির স্যাঁতস্যাঁতে জমিতে কচু জাতীয় সবজির প্রদর্শনী ও স্থাপন করা হবে এবং বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে আদা, হলুদ চাষের জন্য বাগান করা হবে।
বাইপুর- মুরগিডাঙ্গা গ্রামের কৃষানী মাসুদা বেগম জানান, নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমরা বাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান করেছি। বর্তমানে আমাদের প্রয়োজনীয় সবজি চাহিদা পূরণ করে পাশাপাশি বাড়তি সবজি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছি। এ মডেল সবজি বাগান তৈরিতে সকল ধরনের উপকরণ বিনামূল্যে বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
নিজামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পারিবারিক পর্যায়ে নিরাপদ মানসম্মত শাকসবজি, মসলা এবং মৌসুমী ফল উৎপাদনে সহায়ক হবে। উৎপাদিত ফসল দ্বারা পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক- কৃষানিদের আয় বৃদ্ধি পাবে। অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি দপ্তর। সফলভাবে এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পারিবারিক শাক-সবজি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। এতে করে গ্রামীণ অর্থনীতিও সচল হয়ে উঠবে।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris