বৃহস্পতিবার

২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
মোহনপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত, ২ জন আহত ইউনিয়নের সম্পাদক মাহাতাবের বিরুদ্ধে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রাজশাহীর বাস শ্রমিকদের রাজশাহী নগরীতে পলাতক আসামির অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ বাঘায় স্ত্রীর লাঠির আঘাতে আহত শিক্ষকের মৃত্যু চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করতে জনপ্রশাসনে চিঠি শিক্ষামন্ত্রীর জলবায়ু বিপর্যয় উপকূলীয় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে : গবেষণা গোপন নথিতে উঠে এল ইরানি কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন-হত্যার ঘটনা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি আজ মহান মে দিবস তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো দেশবাসী

মানহীন বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সনদ নিয়ে পদোন্নতি বাগাচ্ছেন শিক্ষকরা

Paris
Update : সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

এফএনএস
সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোই একসময় শুধু বিএড কোর্সের প্রশিক্ষণ হতো। কিন্তু বিএড কোর্সের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে গত কয়েক দশকে দেশে শতাধিক বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ গড়ে উঠেছে। তবে ওসব কলেজের অধিকাংশই শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ক্লাস বা প্রশিক্ষণ আয়োজন না করেই বিএড সার্টিফিকেট প্রদান করছে। আর অপেক্ষাকৃত সহজে কোর্স সম্পন্নের সুযোগ থাকায় স্কুল শিক্ষকরাও ওসব প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছে। কারণ যারা বিএড সম্পন্ন করেন তারা বেতন-ভাতাসহ বেশকিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। বেসরকারি বিএড কলেজের একাংশে শিক্ষা মানহীন হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সংখ্যা ৯৪টি। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করার পরই এসব কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়। এরপর কোনো কলেজগুলো যদি এসব শর্ত লঙ্ঘন করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বর্তমানে যে কলেজগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মানহীনতার কারণে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত কয়েক বছরে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। এর বিপরীতে বেড়েছে বেসরকারি কলেজগুলোয়। ২০১৮ সালে দেশে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৩ হাজার ৯৫১ এবং ১০৪টি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৫ হাজার ১৭৬ শিক্ষার্থী ছিল। পরবর্তী সময়ে বেশকিছু বেসরকারি কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সংখ্যা নেমে আসে ৯০-তে। তবে কলেজ সংখ্যা কমলেও এ সময় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর সরকারি কলেজের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। ২০২২ সালে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৭৬, যা ২০১৮ এর তুলনায় ৯৭৫ জন কম। ৯০টি বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল প্রায় ৯ হাজার ৪১৯, যা আগের তুলনায় ৪ হাজার ৩৪৩ জন বেশি। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর প্রতিটিতে এক বছর মেয়াদি বিএড কোর্সে ৬০০টি করে মোট ৮ হাজার ৪০০ আসন রয়েছে। এ কোর্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক ছুটি এবং সরকারি ছুটির দিনগুলো ব্যতীত নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয় এবং প্রশিক্ষণসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক অংশ নিতে হয়। অন্যথায় তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন না। অন্যদিকে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিংগুলোর বড় একটি অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, এগুলোয় নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে ভর্তি এবং ফর্ম পূরণ করে পরীক্ষা দিলেই সার্টিফিকেট মেলে। ঢাকার প্রাইম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজ, ভিক্টোরিয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, নারায়ণগঞ্জের ফাতেমা রহমান টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ফরিদপুরের সানফ্লাওয়ার টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, পটুয়াখালীর দক্ষিণবঙ্গ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, বরিশালের কলেজ অব এডুকেশন বিএড, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ অর্ধশতাধিক বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ নিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। আর এর ফলে স্কুল শিক্ষকদের বড় একটি অংশ এখন বেসরকারি কলেজগুলোর দিকে ঝুঁকছে। এদিকে শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, শিক্ষার মান নিশ্চিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। একজন স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও তিনি ছাত্রদের কীভাবে শেখাবেন, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় কীভাবে সামাল দেবেন- এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। শিক্ষক যদি এসব বিষয়ে প্রশিক্ষিত না হন তবে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর এ সংবেদনশীলতার বিষয়টি বিবেচনা করেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে এমন কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যারা ক্লাস বা প্রশিক্ষণ ছাড়াই বি-এড ডিগ্রি সম্পন্ন করার সুযোগ দিচ্ছে। আর যেহেতু তাদের কাছ থেকে কোর্স সম্পন্ন করলে কম পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাই শিক্ষকরাও সেদিকে ঝুঁকছেন। ফলস্বরূপ দক্ষ শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করতে চাইলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে অবশ্যই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এর জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে নীতিমালার আওতায় আনা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন তার অর্থ তিনি শুধু একটি সার্টিফিকেট পেয়েছেন তাই নয়, বরং তিনি প্রকৃতপক্ষেই বিষয়গুলো শিখে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থীদের মতে, শুধু সহজে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি বা দূরত্বই নয়, নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি না পাওয়ার কারণেও অনেক সময় জেনেশুনেই মানহীন বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কারণ দ্রুততম সময়ে উচ্চতর গ্রেড পেতে হলে বিএড সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করলে যতটুকু সুবিধা পাওয়া যায়, বেসরকারি কলেজগুলো থেকে করলেও সে একই সুবিধা মেলে। তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ঝোঁক বাড়ছে। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, বেসরকারি ট্রেনিং কলেজগুলোর মান সন্তোষজনক না হলেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বড় জটিলতা আইনি বাধা। যেমন তারা নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন না এমন অভিযোগটা অনেক জায়গা থেকেই আসে। কিন্তু তারা ঠিকই শিক্ষকদের স্বাক্ষরের কাগজ হাজির করে যে নিয়মিত ক্লাস হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আবার স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয় এলে তারা জমির দলিল দেখায় যে এটা কলেজের জমি। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে তারা আদালতে এর বিরুদ্ধে রিট করে এবং এসব কাগজপত্রের কারণে পার পেয়ে যায়। এয়াড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল সংকট রয়েছে। ফলে নিয়মিত সব কলেজ পরিদর্শনও অসম্ভব। তবে যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে কলেজগুলোয় মান নিশ্চিত করার।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris