মঙ্গলবার

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদে মুখ থুবড়ে পড়েছে রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫

Paris
Update : মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

এফএনএস

রাশিয়ার পাঠানো চন্দ্রযান লুনা-২৫ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদেই বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪৭ বছর পরে রাশিয়া লুনা-২৫ নামের মহাকাশযানটি চাঁদে পাঠিয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের কক্ষপথ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এটি ছিল প্রথম মহাকাশযান, যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু এই মহাকাশযানটি অবতরণের পূর্ববর্তী কক্ষপথে অগ্রসর হওয়ার পরে সমস্যা দেখা দেয়। রাশিয়ার চন্দ্রযানটি চাঁদের এমন একটি অংশে অভিযান চালানোর কথা ছিল যেখানে জমাটবাঁধা পানি ও মূল্যবান বস্তু থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস শনিবার সকালে জানিয়েছে, গ্রিনিচ মান সময় ১১টা ৫৭ মিনিটে লুনা-২৫ চন্দ্রযানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রসকসমস-এর বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণে মনে হচ্ছে, ৮০০ কেজি ওজনের চন্দ্রযানটি চাঁদের উপরিভাগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে বিধ্বস্ত হয়। গতকাল সোমবার মহাকাশযানটির চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কেন এই চন্দ্রযানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি খুঁজে বের করার জন্য একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হবে বলে রসকসমস জানিয়েছে। লুনা-২৫ চন্দ্রযান বিধ্বস্ত হবার ঘটনা রসকসমস-এর জন্য একটি বড় ক্ষতি। গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ এই প্রতিষ্ঠানটির অবনমন হচ্ছে কারণ রাশিয়ার বাজেটের একটি বড় অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য রাশিয়ার লুনা-২৫ প্রতিযোগিতা করছে ভারতের চন্দ্রাযান-৩ এর সঙ্গে। ভারতের চন্দ্রযান আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের কথা রয়েছে। রসকসমস স্বীকার করেছিল যে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি ব্যর্থ হতে পারে। গত ১১ আগস্ট এই চন্দ্রযানটি পাঠানো হয় এবং গত বুধবার সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা :এক সময়ে মহাকাশ অভিযানে যে সোভিয়েত রাশিয়ার বিশাল ভূমিকা ছিল, এই অভিযানের ব্যর্থতা থেকে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা পরিষ্কার হয়ে উঠছে। কিন্তু এই ব্যর্থতা রাশিয়ার মহাকাশ শক্তির পতনকেই তুলে ধরেছে, যারা স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ অভিযানে বিশাল ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৫৭ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে স্পুটনিক-১ নামে প্রথম মহাকাশযান পাঠিয়েছিল রাশিয়া এবং সোভিয়েত নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন ছিলেন প্রথম মানুষ যিনি ১৯৬১ সালে মহাকাশে ভ্রমণ করেছিলেন। চন্দ্রপৃষ্ঠে রাশিয়ার মহাকাশযান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটল এমন সময় যখন দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশটি বহু দশকের মধ্যে বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ যার প্রধান কারণ। সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভের শাসনামল ১৯৭৬ সালের পর থেকে চাঁদে আর কোনো মিশন পাঠানোর চেষ্টা করেনি রাশিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার অর্থনীতির হাল খারাপ। তার ওপর লুনা-২৫ চন্দ্রাভিযানের জন্য এ যাবৎ দেশের কোষাগার থেকে খরচ হয়ছে প্রায় ২০ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক অর্থ বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি রাশিয়ার। সেই অর্থনীতির ওপর কিছুটা চাপ নিয়েই লুনা-২৫ অভিযানের খরচ গত ১৩ বছর ধরে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছে রাশিয়ার সরকার। চাঁদে মহাকাশযান বিধ্বস্ত হওয়ার এই খবরটি ৮ নম্বরে প্রচার করা হয়েছে দেশটির সরকারি টেলিভিশনে, সেখানে মাত্র ২৬ সেকেন্ডের খবর পরিবেশন করা হয়েছে। -বিবিসি


আরোও অন্যান্য খবর
Paris