চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি, গভীর ও অগভীর নলকূপের পানিতেই আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ায় আমন ধান লাগানো শুরু করেন কৃষকরা। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় জমিতে সেচের জন্য একমাত্র ভরসা বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ। কৃষকরা বলছেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে তারা প্রত্যাশিত পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টি দেরীতে হলেও কৃষকরা পুরো শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আমনের আবাদ করতে পারবে। ইতোমধ্যে ৫৭ ভাগ জমিতে আমন ধান রোপনের কাজ শেষ করেছে কৃষকরা। এবারও আমনের ভাল ফলনের আশা করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৫’শ ৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫৩ হাজার ৬’শ ৫০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ৩০ হাজার ৬’শ ৬৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। এবছর জেলায় আমন ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৯’শ মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ১০ হাজার ২’শ ৫০ হেক্টরের বিপরীতে ৫ হাজার ৩’শ ২০ হেক্টর, নাচোলে ২২ হাজার ৮’শ ২৫ হেক্টরের বিপরীতে ১৫ হাজার হেক্টর, গোমস্তাপুরে ১৪ হাজার ৯’শ ৪৫ হেক্টরের বিপরীতে ৫ হাজার ৪’শ ৯৫ হেক্টর, ভোলাহাটে ৫ হাজার ৫ হেক্টরের বিপরীতে ৪ হাজার ৮’শ হেক্টর ও শিবগঞ্জে ৫’শ ৭০ হেক্টরের বিপরীতে ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আমনের আবাদের জন্য এসময় প্রকৃতির বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিল চাষিরা। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হলেও আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হওয়ায় চাষাবাদ শুরু করে কৃষকরা। পরবর্তীতে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের আওতায় সেচের পানির উপর নির্ভর করে কৃষকরা এবং জমিতে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর পুরো শ্রাবণ মাস পর্যন্ত এবার আমন আবাদ করবে কৃষকরা। নাচোল ইউনিয়নের নেজামপুরের ইয়াসিন নামে কৃষক বলেন, আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদ শুরু করা হয়। শ্রাবণ মাস শুরু হলেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় বাকি আবাদ করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। মেঘের আনাগোনা থাকলেও প্রত্যাশিত বৃষ্টি নেই। বাধ্য হয়েই গভীর নলকুপের পানি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ শুরু করা হয়েছে। এতে করে আমনের আবাদ খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আরেক কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারণে তারা গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানির সুবিধা পাচ্ছেন না। জমিতে সেচ সুবিধার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের প্রয়োজন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের পাশাপাশি সেচের পানি সংরক্ষণ করে বাকি জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। বৃষ্টি হলে ফলন ভাল হবে বলে আশাবাদী তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি না হওয়ার পরও কৃষকরা সেচের পানি সংরক্ষণ করে ধান রোপণ করছেন। কোন ধরনের দুর্যোগ দেখা না দিলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এ পর্যন্ত ৫৭ ভাগ জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে।