রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩২০ বছরের পুরোনো পত্রিকাটি আর ছাপা হবে না

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩

এফএনএস

অস্ট্রিয়ার ৩২০ বছরের পুরোনো সংবাদপত্র “উইনার জেইতুং”-এর ছাপা বন্ধ হয়েছে। এখন থেকে এটি শুধু অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। শনিবার সংবাদপত্রটির সর্বশেষ প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দৈনিকটির ভবিষ্যত নিয়ে অস্ট্রীয় সরকার ও সংবাদপত্রটি মধ্যে দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসা বিরোধের চূড়ান্ত নিস্পত্তি হবে। ১৭০৩ সালে উইনারিস্খিস ডায়ারিয়াম নামে সংবাদপত্রটির প্রকাশ শুরু হয়। ১৭৮০ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় “উইনার জেইতুং”। বেসরকারি পাক্ষিকটিকে ১৮৫৭ সালে অস্ট্রিয়ার সম্রাট প্রথম ফ্রাঞ্জ জোসেফ জাতীয়করণ করেন। এরমধ্য দিয়ে এটি সরকারি পত্রিকা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। গত এপ্রিলে দেশটির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোয়ালিশন সরকার সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট একটি আইন পরিবর্তন করে। আইন অনুযায়ী এটির ছাপা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী, “উইনার জেইতুং” এর ছাপা সংস্করণে সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিনিময়ে সংবাদপত্রটিকে যে অর্থ দিতে হতো, এখন থেকে আর সেটি দিতে হবে না। জাতীয় এই পত্রিকাটিতে গ্যাজেট আকারে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও অফিসিয়াল নোটিশ ছাপানো হতো। এইসব বিজ্ঞাপন থেকেই পত্রিকাটির বেশিরভাগ আয় হতো। একইসাথে সংবাদও প্রকাশিত হতো। তবে কয়েক বছর ধরেই এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। ২০২১ সালে অস্ট্রিয়ার সাবেক চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ বলেন, “একটি দৈনিক সংবাদপত্রকে অর্থায়ন ও পরিচালনা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়।” এ আরও আলোচনার জেরেই বিষয়টি সংসদে তোলা হয় ও আইন করে এটির মুদ্রণ বন্ধের কথা বলা হয়। এদিকে এ সিদ্ধান্তের কারণে আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে সংবাদপত্রটি। আইন পাশের পর এটি ১৫ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া ৬৩ জন কর্মীকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। এডিটরিয়াল স্টাফের সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ২০ এ নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে এই পত্রিকাটি শুধু অনলাইনে চালু থাকবে। আর সেটিকেও শুধু দৈনিক সংবাদপত্র হিসেবে নয়, বরং প্রশিক্ষণ ও অধিকতর শিক্ষার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মাসে একবার করে সংবাদপত্রটির একটি প্রিন্ট সংস্করণ বের করার পরিকল্পনা রয়েছে। অবশ্য সেই পরিকল্পনা এখনো বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। সংবাদপত্রটির প্রথম সংস্করণের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, কোনো কথার ফুলঝুরি বা কাব্যিকতা নয়, আমরা সংবাদের সরল বিবরণ দিতে চাই। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রিয়া পরাজিত হলে পত্রিকাটি শেষ হ্যাবসবার্গ সম্রাট কাইজার কার্লের পদত্যাগ নিয়ে একটি বিশেষ সংস্করণ ছেপেছিল সংবাদপত্রটি। ইউরোপীয় কমিশনের (ইইউ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেরা জুরোভা অস্ট্রিয়ান নিউজ এজেন্সিকে (এপিএ) বলেন, “পত্রিকাটির বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি খুশি নন।” তিনি বলেন, “বছরের পর বছর ধরে মানুষকে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ‘উইনার জেইতুং’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”গত শনিবার সংবাদপত্রটির শেষ প্রিন্ট সংস্করণের সম্পাদকীয়তে সরকারের জারি করা নতুন আইনটির সমালোচনা করা হয়। একইসাথে বর্তমানে মানসম্মত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কঠিন সময় চলছে বলেও অভিহিত করা হয়। শতাব্দীর প্রাচীন এ পত্রিকার ছাপানো বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার রাস্তায় শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। দীর্ঘ তিনশ বছরের বেশি সময় ধরে মুদ্রণের ইতিহাসে “উইনার জেইতুং” এর প্রকাশনা বন্ধ হয়েছিল মাত্র একবার। ১৯৩৯ সালে হিটলার বাহিনী অস্ট্রিয়া দখলের পর নাৎসিরা সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। ৬ বছরের বিরতির পর ১৯৪৫ সালে ফের সংবাদপত্রটির প্রকাশনা চালু হয়। যদিও তখনও অস্ট্রিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির দখলে ছিল। অনলাইন সংস্করণ চালু থাকলেও পত্রিকাটির ডেপুটি এডিটর ইন চিফ থমাস সিফার্ট মনে করেন, “সিদ্ধান্তটি শুধু অনলাইন কিংবা প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশ নিয়ে নয়। বরং এর সাথে সংবাদপত্রটির স্পিরিট জড়িত।” ২০০৪ সালে ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজ পাবলিশার্সের এক জরিপে “উইনার জেইতুং” পত্রিকাকে এখনও সচল থাকা প্রাচীন পত্রিকাগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এটি বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন পত্রিকার জায়গায় উঠে এসেছে “উইনার জেইতুং” পত্রিকার দুই বছর পরে ১৭০৫ সালে প্রকাশ হওয়া জার্মান পত্রিকা “হিলডেসহাইমার অ্যালগেমেইনে সাইটুং”।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris