সোমবার

১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তানোরে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে কৃষকের স্বস্তি

Paris
Update : রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

আব্দুস সবুর, তানোর : স্বরুপে দেখা দিয়েছে আষাড়, ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। তবে ঈদের পরদিন গত শুক্রবার ভোর থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে এবং ১১টার পর থেকে ১২টা পর্যন্ত দু’দফায় প্রচুর পরিমানে ভারিবর্ষণ হয়। অবশ্য দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিটেফোটা বৃষ্টি পড়লেও সন্ধ্যার পর থেকে পুনরায় ভ্যাপসা গরম শুরু হয়। তবে প্রায় এক দেড় ঘন্টা ভারি বর্ষষনে জমি চাষ উপযোগী হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে। নিচুঁ জমিতে পানি জমা হলেও উঁচু জমিগুলোতে তেমন ভাবে পানি জমেনি। কিন্তু গত সোমবার থেকে থেমে থেমে টিপির টিপির বৃষ্টিতে জমির শুকনো মাটি ভিজেছে। এতে করে জমি চাষ অনায়াসেই করতে পারবেন কৃষকরা। এদিকে চাষ যন্ত্র সংকটের কারনে অনেকের জমিতে পানি থাকার পরও চাষ দিতে পারছেন না। এজন্য সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নচেৎ চাষের অভাবে উঁচু জমিগুলো পতিত হয়ে পড়ে থাকবে। স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত আদর্শ কৃষক নুর মোহাম্মাদ বলেন, শুক্রবার সকালে ও জুম্মার নামাজের আগে ভারি বৃষ্টি হয়। সকালের চেয়ে সাড়ে ১১ ও ১২ টার দিকে দীর্ঘ সময় ধরে ভারি বর্ষন হয়েছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে অনেকেই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জমি চাষ শুরু করেছেন। আষাঢ়ে জমি তৈরি করে শেষের দিকে ও শ্রাবন মাস ধরে জমি রোপন হয়। তিনি আরো বলেন, রোপা আমন নির্ভর উপজেলার জনসাধারন। সব এলাকায় এচাষাবাদ হয়। কিন্তু উঁচু জমিগুলোতে চাষ করা যাবে না। আষাড় মাসে মহান রব বৃষ্টি দিয়ে তার জমিনকে উর্বর করবেন। তবে চাষ যন্ত্রের প্রচুর সংকট।
শনিবার(০১ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, পৌর এলাকার গুবিরপাড়া, ধানতৈর, চাপড়া ও তালন্দ গোকুল, সুমাসপুর হরিদেবপুর, কলমা ইউপির কুজিশহর দেউল, আজিজপুর, দরগাডাংগা, কলমা, চৌরখৈর, কামারগাঁ, হাতিশাইল, ছাঐড়, হরিপুর, হাতিনান্দা, পারিশো দূর্গপুর,বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা, সিন্দুকাই, আড়াদিঘি, লালপুর, কৃঞ্চপুর, কচুয়া, চিনাশো, চিমনা, ইলামদহী, নারায়নপুর, চকপাড়া, বনকেশর, বানিয়াল, জিওল চাঁনপুর, আমশো, বরুজ, কালিগঞ্জ, সরনজাই, সরকারপাড়া, মন্ডলপাড়া, মোহর, প্রানপুর, চান্দুড়িয়া, রাতৈল, চকদমদমা, গাগরন্দ, কাসারদিঘি, হাড়দহ, বাধাইড়, হরিশপুর, নারায়নপুর, ময়েনপুর, সাদিপুর, জুমারপাড়া, দিবস্ব্যালসহ ধানী জমিতে কোমর বেধে চাষ শুরু করে দিয়েছেন। কেউ আইলের কাজ করছেন, আবার কেউ পাওয়ার টিলার ও ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি চাষ চলছে ব্যাপক ভাবে। রাবেয়ার মোড় পার হয়ে জামাল নামের এক কৃষক গরুল হাল দিয়ে জমি চাষ করছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় সবাই পাওয়ার টিলার ও ট্র্যাক্টর দিয়ে চাষ করে দ্রুত রোপনের জন্য কিন্তু আপনি গরুর হাল দিয়ে চাষ দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, বাড়ির গরু হাল আছে এজন্য চাষ করছি। একবিঘা জমিতে একটি চাষ দিতে পাওয়ার টিলার বা ট্র্যাক্টরে লাগে ৪০০ টাকা। চারটি করে চাষ দিতে হয়, এক বিঘায় ১৬০০ টাকা রক্ষা পেলাম। এবারে ৬ বিঘা জমি রোপন করব, ৬ বিঘাতে চাষ বাবদ ৯৬০০ টাকা বেঁচে যাবে। সার বিষের দাম অতিরিক্ত। ৯৬০০ টাকা দিয়ে রোপন সার বিষ কিনা যাবে।
নারায়নপুর গ্রামের কৃষক খলিল জানান, পাওয়ার টিলার বা ট্র্যাক্টর পাওয়া যাচ্ছে না। দুএক দিনের মধ্যে না পেলে এবং বৃষ্টি না হলে জমি চাষ করা যাবে না। কারন শুক্রবারে যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে ও রাতে ভ্যাপসা গরম ও শনিবারে আকাশ মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি এবং প্রচুর ভ্যাপসা গরম।
তিনি আরো বলেন মইফুলের ১৮ বিঘা, রাব্বানীর ১২ বিঘা জমি চাষ করতে পারেনি। অনেক কিছু করেও মিলছে না ট্র্যাক্টর বা পাওয়ার টিলার। ঈদের জন্য গাড়ী আসেনি। তবে দুএকদিনের মধ্যে ট্র্যাক্টর আসার কথা। বিল শহর গ্রামের আসরাফ ৫৫ বিঘা জমি রোপন করবেন এর মধ্যে ৪-৫ বিঘা চাষ হয়েছে। গাগরন্দ গ্রামের কৃষক মুসলেম জানান, ৩৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন রোপন করা হবে। এর মধ্যে ২০ বিঘা জমির চাষ হয়ে গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকে রোপন শুরু করব। তিনি আরো জানান আইয়ুবের ৪৫ বিঘার মধ্যে ২০ বিঘা জমি চাষ শেষ হয়েছে, রহিদুলের ১০ বিঘা জমির চাষ শেষ আগামী সপ্তাহ থেকে রোপন শুরু হবে। তবে পাওয়াট টিলার ও ট্র্যাক্টর পাচ্ছেনা কৃষকরা। এজন্য অনেকেই চাষ শুরু করতে পারেন নি। তানোর রেইনগেজ ত্রেরক আব্দুল মতিন বলেন, গত শুক্রবারে উপজেলায় সর্ব্বোচ্চ ৬২ মিলি মিটার বৃষ্টি পাত রেকর্ড হয়েছে, বৃহস্পতিবারে ২০, বুধবারে ১০, মঙ্গলবারে ৩৬ ও সোমবারে ৭ মিলি মিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, গত শুক্রবারের সকাল ও দুপুরের বৃষ্টি কৃষকের আশির্বাদ। এবৃষ্টিতেই কৃষকরা কোমর বেধে জমি চাষ শুরু করেছেন। এবারে রোপা আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। বোরো আউসের মতই বাম্পার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris