শনিবার

২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
তীব্র তাপদাহে রাসিকের উদ্যোগে ১০ স্থানে বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প নওগাঁয় ১১০ মেট্রিক টন ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে বাঘা উপজেলায় আ.লীগের প্রার্থী নির্ধারণ! বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী গরমের জন্য সরকারকে দায়ী করলেন রিজভী আপাতত গরমেই খেলবে সাবিনা-সানজিদারা ১০ কোটি টাকা অনিয়ম পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক লালমনিরহাটেও যোগ দেননি কেএনএফ প্রধান নাথানের স্ত্রী বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে থাই বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তীব্র তাপদাহে নগরবাসীর পাশে থাকতে রাসিক যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে

সমস্যায় ধুকছে নিভৃত পল্লীর কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসা

Paris
Update : বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মান্দা প্রতিনিধি
প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় পড়তে যায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্মৃতি খাতুন। পলাশবাড়ী খালের ধারের ভাঙাচোরা সরু রাস্তায় গত ১০ বছর ধরে যাতায়াত এই শিক্ষার্থীর। বর্ষায় কাদা আর শুকনো মৌসুমে ধুলোবালি ছিল তার নিত্য সঙ্গী।
২০২৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেবে স্মৃতি খাতুন। শুধু স্মৃতি খাতুন নয়, তার মতো ৩২৮ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে যায় শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার আশায়। মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের পলাশবাড়ী খালের পাড়ে কুড়িয়াপাড়া গ্রামে এই মাদ্রাসার অবস্থান। নওগাঁ সদর ও রানীনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী মান্দার এই প্রত্যন্ত গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র পথ খালের পাড়ের এবড়ো-থেবড়ো একটি সরু রাস্তা। বিকল্প রাস্তা না থাকায় নিভৃত পল্লীর লোকজনও এই পথেই যাতায়াত করেন।
নিভৃত এই পল্লীতে শিক্ষার আলো জ্বালাতে গ্রামের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা ১৯৯৯ সালে কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২০ জন। দীর্ঘ ২৩ বছর পর গতবছরের ৬ জুলাই সরকারী কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা জয় করে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা যখন শিক্ষার্থী সংকটে ধুকছে, তখন কুড়িয়াপাড়ার এই দাখিল মাদ্রাসা পথ চলছে ঐতিহ্যের গৌরবে।

সরেজমিনে জানা যায়, কুড়িয়াপাড়া দাখিল মাদ্রাসার আশপাশে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এই প্রতিষ্ঠান থেকে কশব উচ্চবিদ্যালয়ের দুরত্ব অন্তত পাঁচ কিলোমিটার, তুড়ুকবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের দুরত্ব ছয় কিলোমিটার ও কশব মণ্ডলপাড়া নিম্নমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দুরত্ব তিন কিলোমিটার। দরিদ্র এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় অল্প খরচেই চালিয়ে নিতে পারছে পড়ালেখার কাজ।
কুড়িয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আজাহার আলী বলেন, নওগাঁ সদরের হাসাইগাড়ী ও রানীনগর উপজেলার মিরাট গ্রামের শিশুরা লেখাপড়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানে আসে। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে দাখিল পাশ করেছে। তারা এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছে। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলও ভালো করছে প্রতিষ্ঠানটি। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী জানায়, মাদ্রাসায় যাতায়াতের রাস্তা অত্যন্ত খারাপ। বর্ষার পানিতে খাল ভরে গিয়ে একমাত্র রাস্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। রাস্তায় কাদা জমে যাওয়া জুতা হাতে নিয়ে মাদ্রাসায় আসতে হয়। খরা মৌসুমে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে যায় রাস্তাটি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের টিনসেড ঘরে ক্লাস করতে চরম কষ্ট হয়।

শিক্ষার্থী অভিভাবক রেশমা খাতুন বলেন, গরমের সময় মাদ্রাসার টিনসেড ঘরে ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত কষ্টে লেখাপড়া করে। শীতকালে কনকনে ঠাণ্ডায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। প্রতিষ্ঠানে ভালো একটি ভবন হলে লেখাপড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। মাদ্রাসার সভপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও কুড়িয়াপাড়া গ্রামে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। যাতায়াতের ভালো রাস্তা নেই। গ্রামবাসীর জীবনযাত্রার মান তেমন উন্নত নয়। খালের পাড়ের রাস্তাটি সংস্কারসহ পাকাকরণ করা হলে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর হয়ে উঠবে একমাত্র মাদ্রাসাটি। পাল্টে যাবে এই পল্লী এলাকার চিত্র।

মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেন, যাতায়াতের রাস্তা সহ প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন অত্যন্ত প্রয়োজন। একটি কম্পিউটার ল্যাব হলে শিক্ষার মান কয়েকগুনে বেড়ে যাবে। আলোকিত মানুষ তৈরি হবে নিভৃত পল্লী কুড়িয়াপাড়া গ্রামের এই বিদ্যা নিকেতন থেকে। তিনি আরও বলেন, কৃষি সহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে পাকা সড়ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবী। নইলে পিছিয়ে থাকবে এলাকার জনজীবন, বদলাবে না মানুষের জীবনমান।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris