মঙ্গলবার

২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ

Paris
Update : সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২

ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) দুই-তিনটি বিষয়ে (নির্ধারিত আলোচ্যসূচির বাইরে) আলোচনা হয়েছে। এরমধ্যে একটি সাইবার সিকিউরিটির বিষয়। এটাকে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে হঠাৎ তৎপর হওয়ার কোনো বিশেষ কারণ আছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ কারণ না। আমরা গত দুই-তিন বছর থেকেই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে দেখছিলাম।

এ ক্ষেত্রে আরও মডার্ন ইকুইপমেন্ট ইউজ করার জন্য… অনেকেরই যাতে কোনোভাবেই ওয়েবসাইট বাইরে থেকে হ্যাক করা না যায়। তিনি বলেন, আমি রিসেন্টলি আমেরিকায় ছিলাম। ওইখানেও দেখলাম দুই-তিনটি বড়-বড় অফিসে হ্যাক হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদেরও আর একটু যেন কমফোর্ট থাকে বিশেষ করে আমরা এখন আস্তে আস্তে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দিকে যাচ্ছি। ওগুলোতেও যাতে একটু ভালো করে নিরাপত্তা থাকে, সেজন্য। সাইবার সিকিউরিটিটাতো জেনারেল একটি কনসেপ্ট। এছাড়া ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের নিরাপত্তা বাড়ানো ছাড়াও সাবমেরিন ক্যাবল ইস্যুতেও মন্ত্রিসভা নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের সিকিউরিটির বিষয়ে আরেকটু স্ট্রংলি দেখতে বলা হয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের নেক্সট যে আরেকটি ক্যাবল অনুমোদন করা হয়েছে, সেগুলো যেন আরও কুইকলি কাজ করা হয়।

গ্যাস পাইপলাইনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ: মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পাইপলাইনগুলো আরও তাড়াতাড়ি করতে বলা হয়েছে, যাতে গ্যাস এবং ফুয়েল পাইপলাইনের মাধ্যমে দেওয়া যায়। তাহলে সিস্টেম লসসহ অন্যান্য লস যেমন ক্যারিং কস্ট, হ্যাজার্ড- এগুলো কমে আসবে, অ্যাফেক্টিভিটি বাড়বে। সেজন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক জায়গায় পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। এগুলো খুব কুইকলি কাজ করে সাপ্লাইটা যেন পাইপলাইনের মাধ্যমে যথাসম্ভব বিশেষ করে মেজর সাপ্লাইগুলো যেন আনা হয়। কারণ ইন্ডিভিজুয়ালি সব জায়গায় পাইপলাইন দেওয়া সম্ভব হবে না। গ্রিডলাইনের মতো। গ্রিডলাইন যেমন মেজর জায়গায় যাচ্ছে ওরকম পাইপলাইনও মেজর জায়গায় নিয়ে গেলে, যেমন ধরুন ঢাকা থেকে পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস যাচ্ছে সব জায়গায়। এটার খরচ তো স্বাভাবিকভাবেই কম। এজন্যই পাইপলাইন খুব কুইকলি করার জন্য বলা হয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যয়েও লাগবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি: শতভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো স্বায়ত্তশাসিত, লেজিসলেটিভ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সম্মতি নেওয়ার বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সরকারি কর্মচারী আইনে একটা জিনিস পরিষ্কার ছিল না। আইনে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত, লেজিসলেটিভ বডি যেগুলো, যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এদের ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি উত্থাপন করেছিল। তারা বলেছিল, তাদেরও বেশিরভাগ ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে হয়। সুতরাং তাদের বিষয়েও অর্থ বিভাগের একটা অথরিটি থাকতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংবিধানের ৮৪, ৮৫ ও ৮৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রের যত ব্যয় আসবে সব একটা অ্যাকাউন্টে আসবে, একটা অ্যাকাউন্ট থেকেই খরচ করা হবে। যেটাকে আমরা ট্রেজারি বলি। এ ট্রেজারির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো অর্থ বিভাগ।

সুতরাং খরচের ক্ষেত্রে যেন অর্থ বিভাগের এখতিয়ার থাকে। যদি কোনো করপোরেশন বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের মতো বেতন-কাঠামো ঠিক করে নেয়, তাহলে তো হবে না। সেজন্য যেকোনো অর্থনৈতিক বিষয় হলে অর্থ বিভাগের কাছ থেবে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিতে হবে। এজন্যই আইনটির মধ্যে এই ছোট কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী আইন হওয়ার আগেও এ বিধান ছিল জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগেও এটা বাধ্যতামূলক ছিল, এখন আইনগত একটা ভিত্তি দেওয়া হলো। উল্লেখ্য, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারকে নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। সেই হিসাবে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিং ছিল খন্দকার আনোয়ারুলের শেষ ব্রিফিং। বৈঠকের পর বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিং করেন খন্দকার আনোয়ারুল। এটাই শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিং মনে করিয়ে দিয়েই খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃতজ্ঞতা জানাই, আজ (গতকাল সোমবার) অফিসিয়ালি আপনাদের (সাংবাদিক) সঙ্গে শেষ (ব্রিফিং)। মন্ত্রিসভা ধন্যবাদ দিয়েছে।

তিনি বলেন, ধন্যবাদ আপনাদের কথাও মনে থাকবে। আপনাদের সবার প্রতি আমার দোয়া রইলো। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা মানুষের কথা চিন্তা করে, দেশের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কাজ করতে গিয়ে ভুলত্রুটি হয়েছে, দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাই ক্ষমা করে দেওয়ার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা- আই হ্যাভ রিটায়ার্ড। এখন আল্লাহর রহমতে দেখা যাক কী করা যায়। সরকার যদি কোনো প্রকল্প বা কোনো খাতে যদি আপনাকে অফার করে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমি তো করেছি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে। আমি ভেরি লাকি, আমি সম্ভবত ৪০ বছর। আমি সেক্রেটারিও ১২ বছর থেকে, ২০১১ থেকে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ, গুড গভর্ন্যান্স, রাইট টু ইনফরমেশন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে জড়িত ছিলেন বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris