পরিবার, বন্ধুত্ব, রোমান্স- এই তিনটি বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে একের পর এক হিট ছবি বানিয়ে গিয়েছেন পরিচালক সুরজ। কিন্তু ২০২২ সালে এসে সেই চিরাচরিত ধারা ভেঙে কাজ করলেন অ্যাডভেঞ্চার ড্রামা ঘরানার হিন্দি ছবি ‘উঁচাই’তে। শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। চারজন বয়স্ক বন্ধুর এভারেস্ট বেস ক্যাম্প যাত্রা নিয়ে এই ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে। সুরজের ঠাকুরদা তারাচাঁদ বরজাতিয়া ১৯৪৭ সালে ‘রাজশ্রী প্রোডাকশনস’ নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। আশির দশক থেকে এই প্রযোজনা সংস্থা বহু হিট ছবি দর্শককে উপহার দিয়ে এসেছে। কিন্তু একসময় পর তাদের ছবির মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জনপ্রিয়তাও কমে যেতে থাকে প্রযোজনা সংস্থার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই সংস্থাটি বিক্রি করে দেওয়া হবে। এত নামী সংস্থার এই দশায় পৌঁছানো মানে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে বরজাতিয়া পরিবারের সম্মানহানি হওয়া। সেই সময়েই পরিবারকে বাঁচাতে ‘রাজশ্রী প্রোডাকশনস’ এ যোগ দিলেন সুরজ। তারপর সুরজ ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবির গল্প লিখে ফেলেন। সালমানের বিপরীতে ভাগ্র্যশ্রীকে বেছে নিয়েছিলেন সুরজ। ১৯৮৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ম্যায়নে প্যার কিয়া’ ছবিটি। ছবিটির গল্প থেকে শুরু করে ছবির গান, সবই দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়। ক্যারিয়ারের প্রথম ছবি, তাতেই ছক্কা মেরেছিলেন পরিচালক। মুহূর্তের মধ্যেই যেন সুরজের কাছ থেকে সকলের প্রত্যাশা তৈরি হয়ে যায়। সকলে তাকে পরবর্তী ছবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন। দ্বিতীয় ছবির গল্পও লিখে ফেললেন তিনি। ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে দেখা যায় সালমান খান এবং মাধুরী দীক্ষিতকে। ছবি মুক্তি পাওয়ার প্রথম কয়েকদিন কোনো ইতিবাচক সাড়া পান নি সূর্য। কিন্তু কয়েকদিন পর থেকেই এই ছবি দেখার জন্য প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাপ্রেমীদের ভিড় উপচে পড়তে থাকে। তৃতীয় ছবিটি বানানোর সময় তার মনের অবস্থা ঠিক ছিল না। তার ছাপ তৃতীয় ছবি ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির মধ্যে পড়ে। অনেকে এই ছবি পছন্দ করলেও বলিউড পাড়ার একাংশ জানিয়েছিলেন সুরজ যে ধাঁচের ছবি বানান, তাতে একটি ইতিবাচক মনোভাব ফুটে ওঠে। কিন্তু এই ছবিতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে, তা দর্শকের মনে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তারপর বলিউড পাড়া থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিরতি নেন পরিচালক। সিদ্ধান্ত নেন নতুন প্রজন্মের তারকাদের নিয়ে কাজ করবেন তিনি। তাই হৃতিক রোশন, কারিনা কাপুর খান এবং অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ‘ম্যায় প্রেম কি দিওয়ানি হুঁ’ ছবি তৈরি করেন। ২০০৬ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বিবাহ’ ছবিটি। মুখ্যচরিত্রে শহিদ কাপুর এবং অমৃতা রাওকে অভিনয় করতে দেখা যায়। ছবিটি বিপুল সাড়া ফেলায় একই ঘরানার আরও একটি ছবি বানান তিনি- ‘এক বিবাহ… অ্যায়সা ভি’। কিন্তু সেই ছবিটি সাড়া পায় নি। এরপর আবার বলিউড পাড়া থেকে দীর্ঘ বিরতি নেন সুরজ। ২০১৫ সালে আবার সালমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ফিরে আসেন তিনি। তবে ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবিটিও দর্শকের মন ছুঁয়ে যেতে পারে নি। পরিচালক জানিয়েছিলেন, সময়ের সঙ্গে দর্শকের চিন্তাধারা পাল্টে গিয়েছে। তাই ভিন্ন ধারার ছবি তৈরি করেছিলেন তিনি। গল্পের মধ্যে অ্যাকশনও রেখেছিলেন যা সাধারণত তিনি এড়িয়ে চলেন। সুরজ তার স্ত্রীকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি এমন ধরণের ছবি বানাবেন, যা বহু বছর পরেও পরিবারের সকলে মিলে দেখতে পারেন। তাই ২০২২ সালে আবার একটি পারিবারিক ছবি নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরেছেন তিনি।