মঙ্গলবার

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ

ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ, প্রস্তুত কাতার

Paris
Update : শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। এক দিন বাদেই কাতারের মাটিতে বেজে উঠবে বিশ্বকাপের দামামা। ৩২ টি দল লড়াইয়ে নামবে আরাধ্য এক সোনালি ট্রফির জন্য। বিশ্বযজ্ঞের বাঁশি বাজার আগে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কাতার আর বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। আজ থেকে এক যুগ আগে ২০১০ সালে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের নাম ঘোষনা করেছিল বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। তৎকালীন ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার কাতারের নাম ঘোষনা করতে গিয়ে বেশ গর্ববোধ করেই বলেছিলেন প্রথম কোন আরব দেশ হিসেবে কাতারের বিশ্বকাপ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দূর্নীতির দায়ে শেষ পর্যন্ত ফিফার সভাপতি পদে সবচেয়ে লম্বা সময় ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরে থাকা ব্ল্যাটার তার পদ হারানোর পাশাপাশি ফুটবল থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু সেই দুর্নীতিগ্রস্থ ব্ল্যাটারই সুর বদলে কাতার বিশ্বকাপের প্রাক্কালে বলেছেন ঐ সময় আয়োজক হিসেবে কাতারকে বেছে নেওয়া সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বিশ্বকাপ ফুটবল শুধু নয়, বিশ্বের যেকোন বড় ক্রীড়াযজ্ঞ আয়োজন করতে গেলে বিতর্ক থাকবেই। কাতারও তার উর্ধ্বে নয়। কিন্তু বল মাঠে গড়ানোর আগেই কাতারকে ঘিরে মাঠের বাইরের কিছু বিষয় নিয়ে যেভাবে সমালোচনা হয়েছে তাতে জল কম ঘোলা হয়নি। বিশেষ করে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভেন্যুগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে স্থানীয় আয়োজকদের প্রায় পুরোটাই অভিবাসী শ্রমিদের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল। এই অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে দাবী করে পশ্চিমা দেশগুলো বলেছে তাদেরকে নায্য পাওনা দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারী ইউরোপিয়ান দেশগুলোও এর সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু সব সমালোচনার জবাব হয়তো কখনো কখনো প্রমাণ করা যায়, কিছু আবার যায়না। কাতারের মতো তেল সমৃদ্ধ একটি ধনী দেশের জন্য বিশ্বকাপ আয়োজনে অর্থের কোন অভাব হয়নি। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে ২২তম আসর। ২০ নভেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাতারে মাটিতে বসবে বিশ্ব ফুটবলের মহারণ। এই প্রথমবারের মত মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে ও এশিয়ায় দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল। এবারই শেষ বারের মত ৩২ দেশের অংশগ্রহণে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আয়োজিত টুর্নামেন্টে ৪৮টি দেশ অংশ নিবে। ২০০৯ সালে জানুয়ারিতে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে আগ্রহীদের বিডিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৮ টুর্নামেন্ট আয়োজনের গ্যারান্টি পাবার পর ২০২২ বিশ্বকাপের বিডিং থেকে সব ইউরোপিয়ান দেশ তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ পর্যন্ত ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য পাঁচটি বিড টিকে ছিল : অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। ২২ সদস্যের ফিফা কার্যনির্বাহী কমিটি ২০১০ সালের ২ ডিসেম্বর ভোটের মাধ্যমে উভয় টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ বেছে নেয়। কাতারের প্রচন্ড গরমের কথা বিবেচনা করে প্রথমবারের মত জুন-জুলাই থেকে সরিয়ে টুর্নামেন্ট নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইসঙ্গে টুর্নামেন্টে পরিধি কমিয়ে এনে ২৯ দিনে শেষ করা হচ্ছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর কাতারের জাতীয় দিবসে টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের স্বত্ব পাবার পর থেকেই পুরো কাতার জুড়ে আটটি নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকৃত স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম। দোহার ১৫ কিলোমিটার উত্তরে দুই লাখ জনসংখ্যার পরিকল্পিত একটি শহর লুসাইল। সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে ৮০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন লুসাইল স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামে আগামী ১৮ ডিসেম্বর টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
রোববার কাতার বনাম ইকুয়েডরের মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে। এ ছাড়া অন্যান্য ভেন্যুগুলো হলো- এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম, আহমাদ বিন আলি স্টেডিয়াম, খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম, আল থুমামা স্টেডিয়াম, স্টেডিয়াম ৯৭৪ এবং আল-জানুব স্টেডিয়াম। কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩২টি দেশের মধ্যে ২৪টি দেশই চার বছর আগে রাশিয়ায় খেলেছে। ১৯৩৪ সালে ইতালির পর আয়োজক দেশ হিসেবে একমাত্র কাতার প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। নেদারল্যান্ড, ইকুয়েডর, ঘানা ও ক্যামেরুন রাশিয়ায় খেলতে ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও বিশ্বমঞ্চে ফিরেছে। ১৯৮৬ সালে একমাত্র বিশ্বকাপ খেলা কানাডা ৩৬ বছর পর ফিরেছে বিশ্বজয়ের ময়দানে। অন্যদিকে ইউরোপিয়ান দল হিসেবে ১৯৫৮ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে ওয়েলস। ফিফা র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে একমাত্র বাদ পড়েছে ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইতালি। এনিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হলো আজ্জুররিা। সর্বনিম্ন ৬১তম র‌্যাংক থেকে মাঠে নামবে ঘানা। সব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে সময়মতই মাঠে গড়াচ্ছে কাতার বিশ্বকাপ। ২০ নভেম্বর কাতার বনাম ইকুয়েডরের মধ্যকার উদ্বোধনী ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মাসব্যপী ফুটবলের মহাযজ্ঞ। যেখানে পুরো বিশ্বের চোখ থাকবে তাদের প্রিয় দলের দিকে। আল-বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচের আগে থাকবে ৩০ মিনিটের একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যদিও ফিফার পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পারফর্মারদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বিশ্বের বড় ক্রীড়া আসরের মতোই বর্ণিল আলো ও নানা রংয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি জাকজমকপূর্ণ করার চেষ্টা করেছে স্বাগতিক কাতার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন জনপ্রিয় পপ তারকা দুয়া লিপা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুয়া লিপা নিজেই জানিয়েছেন তিনি কাতারে পারফর্ম করবেন না। ৩২টি দেশ আটটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে লড়াই করবে প্রথম পর্বে। ২০ নভেম্বর-২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে গ্রুপ পর্বের খেলা। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি দল নক আউট পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। ৩-৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ ষোলো এবং ৯-১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হবে কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর হবে দুটি সেমিফাইনাল। ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ। ১৮ ডিসেম্বর হবে বহুল প্রতিক্ষীত ফাইনাল।

 


আরোও অন্যান্য খবর
Paris