রবিবার

২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়ার কবর সরানোর দাবি

Paris
Update : মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২

১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কয়েক হাজার বিমান ও সেনাবাহিনী সদস্যদের হত্যা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতসহ সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমান ও সব যুদ্ধাপরাধীদের কবর সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে মায়ের কান্না সংগঠনের আয়োজনে মানববন্ধনে এমন দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনরা। স্বামীহারা লায়লা আঞ্জুমান বলেন, আমার স্বামী বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭৭ সালে বিচারের নামে জিয়া আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। জিয়া যদি মুক্তিযোদ্ধা হতো তবে আমার স্বামীকে হত্যা করতে পারতো না। ৪৫ বছর পার হলো আজ পর্যন্ত আমার স্বামীর লাশ খুঁজে পাইনি। তিনি বলেন, আমার স্বামীর লাশ খুঁজতে বিমান বাহিনীর অফিসসহ অনেকের দ্বারে গেলেও কুকুরের মত তাড়িয়ে দিয়েছে। আমার সন্তানরা তার বাবার মৃত দেহটি পর্যন্ত দেখতে পাইনি। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেক কষ্টে সন্তানদের নিয়ে জীবন যাপন করছি। আমাদের কান্না নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী শুনতে পাবেন। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকতে আর্থিক সহায়তাসহ চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। নিহত কর্নেল নাজমুল হুদার সন্তান সংসদ সদস্য নাহিদা এজাজ খান বলেন, ৪৭ বছর আগে আমার বাবাকে হারিয়েছি। আমি ও আমার পরিবার মুক্তিযোদ্ধা বিরোধীদের স্বীকার। জিয়া নির্মমভাবে আমাদের বাবাকে হত্যা করেছে। একজন খুনির লাশ সংসদ ভবনের মতো পবিত্র এলাকায় থাকতে পারে না। জিজ্ঞাসহ সব যুদ্ধাপরাধীদের কবর এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার বদরুল হক বলেন, ১৯৭৭ সালে ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা কেন্দ্র করে জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। তথাকথিত বিদ্রোহী দমনের নামে জিয়া একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ২০০০ এর মতো সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে। কোনো প্রকার ধর্মীয় সংস্কার ছাড়াই লাশগুলো ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে কুমিল্লার টিক্কাচরণ কবরস্থানে মাটি চাপা দেয়া হয়। তিনি বলেন, জিয়ার সামরিক ট্রাইব্যুনালে পতিত বিচারে ফাঁসি হওয়া ১৯৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেলেও অন্যান্যের এখনো খোঁজ-খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তরা রাস্তায় দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও ন্যায্য বিচার পাননি। শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছেন। সেই রাতে নির্মমভাবে সৈনিকদের হত্যার বিচার এখনো অসম্পূর্ণ রয়েছে। নির্বাচনের আগে এটি সম্পূর্ণ করতে হবে। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহচর হিসেবে কাজ করেছেন। সে কারণে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে খুন করেন। অনেক মানুষকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছেন। বর্তমানে তার অনুসারীরা আমাকে খুন করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, জিয়া যে দলটি গড়ে তুলেছিল তার ব্যানারে রাজনীতি করার কারো অধিকার নেই। জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ দুটি দল স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন হিসেবে পরিচিত। বিএনপিকে বিলুপ্তি করার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যখন একত্র হয়েছিল জিয়া তখন বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতা ও অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিচারের প্রহসনের নামে বাড়ি থেকে সেনাদের ডেকে এনে হত্যা করে। স্বজনরা আজও তাদের প্রিয়জনের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একটি তদন্ত কমিশন গঠন নিহতদের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার দাবি জানান তিনি। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও খুনিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ, শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফের কন্যা মাহজাবিন খালেকসহ ১৯৭৭ সালে গণ ফাঁসির শিক্ষার সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য প্রমুখ।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris