শনিবার

১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ সংবাদ
শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের আমানত কমেছে, ঋণ বাড়ছে, আস্থার সংকট ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে : শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আমের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ কৃষিমন্ত্রীর বড়াল নদের উপর ব্রীজ নির্মান স্থান পরিদর্শন করেন যুগ্ম সচিব পবায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান ইসলামী নার্সিং কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজশাহীতে গ্রীষ্মকালীন কারুশিল্প উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন অংকের হিসাব লাগে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত : আব্দুল ওয়াদুদ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন হজ পালনের ধাপসমূহ

নওগাঁয় বৃষ্টির পানিতে স্বস্তি ফিরেছে আমন চাষে

Paris
Update : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি : জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বদলে গিয়েছে বাংলার ঋতুচিত্র। কয়েক বছর ধরে ভরা বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। এরই ধারবাহিকতায় এবারো আষাঢ় শেষ হয়ে মধ্য শ্রাবণেও নওগাঁয় বৃষ্টির দেখা নেই। এতে বর্ষা মৌসুমেই দীর্ঘ খরার কবলে পড়তে হয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দেয় প্রচন্ড দাবদাহ। এতে আমন ধানের চারা রোপণে বিপাকে পড়েন কৃষক। তবে গত এক সপ্তাহ যাবত এ চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। গত সাতদিন জেলার ১১টি উপজেলায় শুরু হয়েছে মাঝারি বৃষ্টি। এতে যেসব মাঠের জমি দাবদাহে ফেটে চৌচির হতে বসেছিল, সেখানে জমতে শুরু করেছে বৃষ্টির পানি। টানা এক মাস পর বৃষ্টির পানি পেয়ে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন জেলার চাষীরা। তবে এ মৌসুমে ধান রোপণ বিলম্বিত হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর, রানীনগরে ১৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৬ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, বদলগাছীতে ১৪ হাজার ৩২৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর, মান্দায় ১৫ হাজার ৯২৫ হেক্টর, পত্নীতলায় ২৭ হাজার ১৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০ হাজার ৪৫৫ হেক্টর, সাপাহারে ৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর, পোরশায় ১৫ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ২৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যে ৫৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে। যা আমন ধান রোপনের লক্ষমাত্রার ২৭ শতাংশ।

 

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এবছর আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবন মাস শুরু হলেও টানা এক মাস বৃষ্টিপাত হয়নি। এতে তীব্র পানি সংকটে আমন ধান রোপন শুরু করতে পারছিলেন না জেলার সিংহভাগ চাষীরাই। এক পর্যায়ে আমনের বীজতলাও নষ্ট হতে বসেছিল। ওই পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে জেলায় আমন ধান রোপনে কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছিল। লক্ষমাত্রা অর্জনে বিএমডিএ সম্পূরক সেচ চালু করলেও তা যথেষ্ট ছিলো না। আবার সেচের বাড়তি খরচ বহন করতেও সক্ষম ছিলেন না বেশিরভাগ চাষীরাই। বিষয়টি নিয়ে যেমন কৃষি বিভাগ দুঃশ্চিন্তায় ছিলো, একইভাবে ধান রোপনে বিলম্ব হলে ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন চাষীরাও। এরই মধ্যে গত ৭ দিন যাবত জেলার ১১টি উপজেলায় মাঝাড়ি ধরনের বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। টানা ৭ দিনের মাঝাড়ি বৃষ্টিপাতে খড়ায় ফেঁটে চৌচির হওয়া সকল মাঠের জমি আবারো সতেজ হতে শুরু করেছে। বর্তমানে নিজ নিজ জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। জমি প্রস্তুতের পর তড়িঘড়ি করেই সেখানে রোপন করছেন আমন ধানের চারা।

 

সদর উপজেলার কিত্তিপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমন ধান পুরোপুরি বৃষ্টি নির্ভর ফসল। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলে এই ফসল করা যায় না। এবছর বীজতলা প্রস্তুত রেখেও পানির অভাবে সময়মতো ধান রোপন করতে পারিনি। সেচ দিয়ে যারা ধান রোপন করেছিলো তাঁদের অনেকেরই জমির রোপনকৃত ধান জমিতেই শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিন হলো বৃষ্টি হচ্ছে। আমার ২ বিঘা জমির মধ্যে ১ বিঘা ধান রোপনের জন্য হালচাষ করে প্রস্তুত করেছিলাম। ইতিমধ্যে সেখানে ধান রোপন করাও শেষ। বাকী ১ বিঘা এখন প্রস্তুতের অপেক্ষায় আছি।

 

বদলগাছী উপজেলার ভগবানপুর গ্রামের কৃষক টিপু হোসেন বলেন, যেই বৃষ্টি আষাঢ় মাসে হওয়ার কথা। সেটা তো হলোই না। এখন শ্রাবন মাসে এসে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সকলেই একসাথে ধান রোপন শুরু করেছে। তাই শ্রমিকের মজুরি কিছুটা বেশি দিয়েই ২ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এই ধান লাগানো সম্ভব হলে ধানের ভালো উৎপাদন হয়ে থাকে। এবার ধান রোপন বিলম্ব হওয়ায় ধানে পোকার আক্রমন এবং ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

 

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, এবছর তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা আমন ধান রোপনে পিছিয়ে পড়েছিল। কৃষি বিভাগের লক্ষমাত্রা অর্জনে ওই মুহুর্তে জেলার সকল গভীর ও অগভীর নলকূপ, এলএলপি এবং অন্যান্য সেচ পাম্প চালু করতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তবে এতে খরচ বেশি হওয়ায় অনেক কৃষকরাই আগ্রহী হয়নি। এখন জেলাজুড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ১ সপ্তাহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যেই লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশাবাদী তিনি।


আরোও অন্যান্য খবর
Paris